গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বছর জুড়ে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা ছবির সংখ্যা নেহাত কম নয়। তার মধ্যে খুব কম ছবির প্রযোজক ঘটা করে ‘সাকসেস পার্টি’ দিতে পারেন। তবে কিছু ছবি মনে পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিতে পারে।
১. শেষ পাতা
এক ভুলে যাওয়া কবির আখ্যান। অতনু ঘোষ পরিচালিত এই ছবিতে নিজেকে আদ্যোপান্ত ভেঙে নতুন করে তৈরি করেছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অনবদ্য অভিনয় এবং অচেনা শরীরী ভাষা মনে থেকে যাবে বহু দিন। সহজ ভাবে বাস্তবের কিছু কঠিন ছবি তুলে ধরেছিলেন পরিচালক। প্রসেনজিৎ ছাড়াও গার্গী রায়চৌধুরী, বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবং রায়তি ভট্টাচার্যের সাবলীল অভিনয় ভুলিয়ে দেয় যে এটা আসলে সিনেমা! তার কৃতিত্ব পরিচালকের নিজস্ব পরিমিতিবোধের। এখনও পর্যন্ত প্রসেনজিতের কেরিয়ারে অন্যতম সেরা অভিনয় এই ছবিতে।
২. মায়ার জঞ্জাল
সমাজের প্রান্তিক মানুষদের বড় পর্দায় জায়গা দেওয়ার চল বাংলা সিনেমায় প্রায় উঠে গিয়েছে। ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর এই ছবি তেমনই কিছু চরিত্রের গল্প বোনে। ঋত্বিক চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু সকলকে ছাপিয়ে নজর কেড়েছিল বাংলাদেশি অভিনেত্রী আপি করিমের অভিনয়। ‘ফড়িং’ খ্যাত পরিচালকের যে গল্প বলার নিজস্ব ধরন রয়েছে, তা আরও এক বার স্পষ্ট এই ছবিতে। দৃশ্যায়ন থেকে শব্দগ্রহণ— কিছুই অহেতুক নয়। চিত্রনাট্যে সংলাপ যা বলতে পারেনি, তা বুঝিয়ে দিয়েছে ছবির প্রতিটি ফ্রেম। স্বল্প সময়ের জন্য ব্রাত্য বসুর অভিনয়ও নজর কেড়েছিল আলাদা করে। বাংলা ছবিতে এক অন্য কলকাতা দেখার সুযোগ দিয়েছে এই ছবি।
৩. শনিবার বিকেল
রমজান মাসের এক শনিবারের বিকেলবেলায় ঢাকা শহরের এক অভিজাত ক্যাফেতে হঠাৎ ঢুকে পড়ে কিছু সন্ত্রাসবাদী। ক্যাফের সকলকে তারা পণবন্দি করে। ভিন্দেশি, নারী, শিশুদের ভিন্ধর্মীদের হত্যার হুমকি ক্রমে গড়ায় একের পর এক হত্যাকাণ্ডে। পুলিশ সেই ক্যাফে ঘিরে ফেললেও প্রবেশে বাধা পায়। সন্ত্রাসীরা ক্যাফে ঘিরে রেখেছিল গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে। নিষ্ঠুরতা আর সম্পূর্ণ ভিন্ন যুক্তিজগতের বাসিন্দা সন্ত্রাসীদের সামনে দুমড়ে পড়ে প্রশাসনিক এবং অন্যান্য প্রতিরোধ। ২০১৬ সালে ঢাকার ‘হোলি আর্টিজ়ান বেকারি’তে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনাকে উপজীব্য করে মোস্তাফা সারওয়ার ফারুকী পরিচালিত এই ছবি বাংলাদেশে মুক্তি পায়নি। কিন্তু ওটিটি মঞ্চে তা দেখা গিয়েছে। জ়াহিদ হাসান, নুসরাত ইসরোজ় তিশা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, মামুনুর রশিদ সকলেই দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। সঙ্গে সন্ত্রাস, রাষ্ট্র, ধর্মীয় আত্মপরিচয় নিয়ে অজস্র প্রশ্ন উস্কে দেওয়া বিতর্ক তো ছিলই।
৪. অর্ধাঙ্গিনী
চলতি বছরে যে গুটিকয়েক বাংলা ছবি গল্প বলার শৈলীর জন্য প্রশংসার দাবি করতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম ‘অর্ধাঙ্গিনী’। অসুস্থ স্বামী হাসপাতালের বিছানায় শয্যাশায়ী। কঠিন পরিস্থিতিতে স্বামীর স্বার্থেই তার প্রাক্তন স্ত্রীর কাছে সাহায্য চায় বর্তমান স্ত্রী। এই ভাবেই তাঁর ছবিতে আধুনিক জীবনের এক জটিল নকশা এঁকেছিলেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ছবিতে প্রাক্তন স্ত্রী শুভ্রা এবং বর্তমান স্ত্রী মেঘনার ভূমিকায় নজর কেড়েছিলেন যথাক্রমে চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় এবং জয়া আহসান। ছবিতে চূর্ণী এবং জয়ার বিশেষ কিছু দৃশ্য সেই সেতুটি দেখিয়ে দেয়, যার মাধ্যমে কৌশিক দর্শকের সঙ্গে ছবির গভীর যোগ তৈরি করেন।
৫. শহরের উষ্ণতম দিনে
অরিত্র সেন পরিচালিত ছবি কলেজপ্রেমের নস্ট্যালজিয়ার পাশাপাশি কলকাতার সঙ্গে এখনকার কমবয়সি বাঙালির অম্লমধুর সম্পর্কের কথা বলে। বিক্রম চট্টোপাধ্যায় এবং শোলাঙ্কি রায়ের রসায়ন চেনা গল্পেও নতুন স্বাদ এনে দিয়েছিল। তবে শুধু প্রেম নয়, বন্ধুত্বের নস্ট্যালজিয়া দিয়েও এই ছবির কিছু কিছু মুহূর্ত এক লহমায় ফেলে আসা সময়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। চেনা ছকে গল্প এগোলেও ছবির শেষে বাজি মেরেছিলেন পরিচালক। সম্ভবত সেই কারণেই লোকমুখে প্রচার পেয়েছিল ছবিটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy