মিমি চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: যদি সাক্ষাৎকার শুরু করার আগে শপথ নিতে হত ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’, তা হলে মিমি চক্রবর্তী কতটা বিপদে পড়তেন?
মিমি: আমার কোনও অসুবিধাই হত না। আমি তো সত্যিটাই বলতে চাই সব সময়। সেই কারণে এত লোকের চক্ষুশূল হয়ে যাই যে, বেশির ভাগ সময়ে সেটাই বিপদ হয়ে যায়। আমায় তো লোকে বলে, ‘‘মিমি, তুই এ বার একটু সত্যি কথা বলা বন্ধ কর। সব দিক বাঁচিয়ে বুঝেশুনে কথা বলতে শেখ।’’ আর সেটাই আমি পারি না। ছোটবেলা থেকে আমাদের শেখানো হয় সত্যি বলতে। কিন্তু সব সময় বলা যায় না। কখনও কখনও খুব ইচ্ছে করে মুখের উপর কাউকে বলে দিই, ‘তোমার এই জিনিসটা আমার মোটেই ভাল লাগে না’। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়।
প্রশ্ন: সত্যি বলে কখনও বড় বিপদে পড়েছেন?
মিমি: আমি সত্যি বলে যে জীবনে কত বন্ধু হারিয়েছি, তার কোনও হিসাব নেই। আসলে তারা সকলেই তেল মারায় অভ্যস্ত। তাই সত্যি বলায় তাদের শত্রু হয়ে গিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: বন্ধুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় আপনার আফসোস হয়?
মিমি: একেবারেই না। এটাই অনেক ভাল। যারা সত্যি কথা বললে চলে যায়, তারা তো কখনওই আমার বন্ধু ছিল না। যারা থেকে গিয়েছে, তারা সারা জীবন থাকবে। অনেকেই মুখে বলবে, ‘আমায় কিন্তু সব সত্যি বলবি’। কিন্তু যেই বললাম, তখন তারা আর নিতে পারে না। তাদের আমার প্রয়োজন নেই। বন্ধুরা তো সাফল্যে খুশি হবে, বাহবা দেবে। যদি ঈর্ষা করে, তা হলে আর কিসের বন্ধু! আমার জীবনে খুব কম মানুষ রয়েছে, যারা আমায় নিয়ে গর্বিত। কিন্তু এই বন্ধুরা আছে বলে আমিও খুব গর্বিত।
প্রশ্ন: গত বছর পুজোয় মুক্তি পেয়ে প্রায় বড়দিন পর্যন্ত চলেছে ‘রক্তবীজ’। আপনার প্রথম বলিউড ছবি ‘শাস্ত্রী বিরুদ্ধ শাস্ত্রী’ও মুক্তি পায়। ২০২৩টা মোটের উপর কেমন কাটল আপনার?
মিমি: পুজোর ছবি বড়দিন পর্যন্ত হলে ছিল, এটা ভাবাই যায় না। ‘রক্তবীজ’-এর সাফল্যের জন্য নিশ্চয়ই দর্শককে ধন্যবাদ দিতে চাইব। তবে আমি সব সময় বিশ্বাস করি, আমার আগের কাজগুলো সব অতীত। আর আজ একটা নতুন দিন। ঈশ্বরের কাছে আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ। তবে আগামীর দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে চাইব। আমার পরিচালকদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, তাঁরা আমার কাছে এমন দারুণ চিত্রনাট্য নিয়ে এসেছিলেন।
প্রশ্ন: শক্তিশালী নারীচরিত্র আছে এমন চিত্রনাট্য কি সচেতন ভাবে বাছাই করেন?
মিমি: হ্যাঁ। আমি এমন ছবির অংশ হতে চাই না যেখানে আমায় ফুলদানির মতো ব্যবহার করা হবে। যদি ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’র মতো সাম্প্রতিক বাণিজ্যিক কাজগুলো ধরা হয়, তা হলেই বোঝা যাবে, কনটেন্টই শেষ কথা বলছে এখন। তাই গল্প ভাল না হলে আমি সেই ছবির অংশ হতে চাই না।
প্রশ্ন: ভাল গল্পের খোঁজেই কি অবেশেষে ওটিটি-তে এলেন?
মিমি: এর আগেও বহু গল্প শুনেছি। তবে আমি সঠিক সময়ে বিশ্বাস করি। সত্যি কথা বলতে, আমি ওটিটি নিয়ে একটু নার্ভাস ছিলাম। কারণ, এই মাধ্যমটা মানুষের একদম ব্যক্তিগত পরিসরে পৌঁছে যায়। দিনের শেষে মানুষ বাড়ি ফিরে নিজের বেডরুমে বসে হয়তো রাতের খাবার খেতে খেতে দেখছেন। সেই সময় আমার কাজ পছন্দ না হলে তো স্কিপ করে চলে যাওয়াটা বেশ সহজ। অভিনেতা হিসাবে আমি কতটা আত্মবিশ্বাসী, তার পরীক্ষা এই ওটিটি। নিজেকে ততটা দক্ষ করে তুলতে হবে যে, দর্শক আমায় স্কিপ করতে পারবেন না। অবশ্যই এ ক্ষেত্রে গল্পের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। গল্প আমায় কতটা সুযোগ দিচ্ছে নিজেকে মেলে ধরার, সেটাও দেখতে হয়। ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’-র ক্ষেত্রে সময়, গল্প, কলাকুশলী— সবই একদম ঠিক বলে আমার মনে হয়েছিল।
প্রশ্ন: আপনি যে হেতু বাণিজ্যিক ছবির সফল নায়িকা, বড় পর্দার আবেদন আপনার কাছে অনেক বেশি। সেখানে ওটিটি-তে কাজ করা নিয়ে কোনও খুঁতখুঁতানি ছিল?
মিমি: এটা সত্যিই যে, থিয়েট্রিক্যাল রিলিজ়ের মজাই আমার কাছে অন্য রকম। কিন্তু এটাও তো মানতে হবে যে, ওটিটি-ই আমাদের ভবিষ্যৎ। অনেক সময় কিছু গল্প ভাল ভাবে বলতে গেলে অনেকটা বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। একটা ছবিতে অতটা সময় আজকাল আর পাওয়া যায় না। তার বদলে ওটিটি সিরি়জ়ে ৩০ মিনিটের অনেকগুলো পর্ব পাওয়া যায়। তা ছাড়া ওটিটি এখন বৃহত্তর দর্শকের কাছে পৌঁছতে পারছে। দেশ-বিদেশের দর্শক আমার কাজ দেখতে পারবেন। তাই সব মিলিয়ে আমার মনে হয়েছিল, এই কাজটা আমার জন্য ভালই হবে।
প্রশ্ন: এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আইনজীবীর চরিত্রে অভিনয় করলেন...।
মিমি: ঠিকই। ‘ধনঞ্জয়’তে কাব্য সিংহের চরিত্রটাও আইনজীবীর ছিল। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি, ওই চরিত্রটার কথা একদম ভুলে গিয়ে নতুন করে এইটা করতে। দুটো যেন কোনও ভাবেই এক না হয়ে যায়, সেটা মাথায় ছিল। এমনিতেও আমি নিজের কাজ নিয়ে খুব খুঁতখুঁতে। জানেন, আমি আমার কোনও কাজ অন্য কারও সঙ্গে বসে দেখতে পারি না।
প্রশ্ন: তাই নাকি?
মিমি: আমি পরিবারের সঙ্গে বসেও কোনও দিন কোনও ছবি দেখি না। আমার মা যেমন আমার কমেডি ছবিগুলো দেখতে খুব ভালবাসে। অনেক সময় ঘরে ঢুকে দেখি মা আর পাপা মিলে আমার কোনও ছবি দেখছে। সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজের ঘরে চলে যাই। আমার তুতো ভাইবোনদের সঙ্গে তো কখনও দেখি না। মনে হয়, ওরা দেখে হয়তো ভাবছে, আমি কী খারাপ অভিনয় করছি!
প্রশ্ন: অভিনেতারা তো নিজেদের কাজ সকলকে দেখিয়ে প্রশংসা শুনতে ভালবাসেন। আপনি দেখছি উল্টো!
মিমি: আমায় অনেকে ‘রক্তবীজ’-এর জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। অবশ্যই শুনে আনন্দ হয়। তবে ধন্যবাদ জানানোটুকু পর্যন্ত আমার দৌড়। আমি কিন্তু কোনও দিন আপনাকে নিজে গিয়ে বলব না, ‘‘কী? দেখলেন ‘রক্তবীজ’-এ কেমন ফাটিয়ে দিলাম!’’ কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি এমন লোক প্রচুর দেখেছি। তাঁদের কথা শুনে হতবাক হয়ে যাই। আমি আমার সাফল্য পিছনে রেখে আমার ব্যর্থতা থেকে শিখতে চাই। ভাল মানুষ হতে চাই। ব্যস, আর কিছু চাই না।
প্রশ্ন: যাঁরা এত দিন বলছিলেন, ইনস্টাগ্রাম ছাড়া মিমিকে দেখা যায় না, ‘রক্তবীজ’-এর সাফল্য দিয়ে তাঁদের জবাব দিতে পারলেন?
মিমি: আমি বরাবরই নিজের কাজ দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি। আমি নিজের ইচ্ছেতেই সংখ্যায় কম ছবি করি। আর বাংলা ছবির পয়সায় তো আমার সংসার চলে না। তাই হয়তো আগামী দিনে এমন কিছু কাজও করতে হতে পারে, যা দিয়ে বাড়ির খরচ চালাতে হল। কী করব বলুন? আমার তো ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও গডফাদার নেই যে আমার খরচ চালাবে। আমায় মা-বাবাকে দেখতে হয়, আমার পোষ্যদের দেখতে হয়, পাঁচটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালাতে হয়, নিজের খেয়াল রাখতে হয়। তাই আমায় পরিকল্পনা করে কাজ করতেই হয়। দুটো জিনিস তাই আমার জন্য খুব জরুরি। এক, ভাল গল্প। গল্প ভাল হলে পারিশ্রমিক নিয়ে খানিক আপস করতে রাজি আছি। দুই, টাকা। যদি গল্প খারাপ হয়, আবার পারিশ্রমিকও কম হয়, তা হলে আমি কেন কাজ করব? আমি অনেক কাজে ‘না’ বলি বলে অনেকেই পছন্দ করে না। আসলে মেয়েদের নিজস্ব মতামত থাকলেই অনেকের অপছন্দের পাত্রী হতে হয়। সবাই ধরেই নেয়, একটা গল্পের প্রস্তাব এলেই সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যেতে হবে। আমি আবার সকলের সঙ্গে কাজ করতেও স্বচ্ছন্দ নই। আমি শুধু তাঁদের সঙ্গেই কাজ করি, যাঁরা আমার কাজ এবং শৃঙ্খলার মূল্য বোঝেন।
প্রশ্ন: ইনস্টাগ্রাম তা হলে আপনাকে এই ‘না’ বলার স্বাধীনতা দিয়েছে?
মিমি: অবশ্যই। দেখুন, আমি এগুলো কখনও বলি না। কিন্তু মনে হয়, আমিই প্রথম এই ইন্ডাস্ট্রিতে, যে ইনস্টাগ্রামটা সিরিয়াসলি নিয়েছিল। এখন বাংলায় সবচেয়ে বড় সংস্থাগুলোর সঙ্গে কিন্তু আমি কাজ করি। যে সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমি যুক্ত, প্রত্যেকটা নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি। ফলে বুঝতেই পারছেন, যে হেতু বাংলা ছবির বাজারের উপর আমি আর্থিক ভাবে নির্ভরশীল নই, তাই আমি ভাল কাজ বেছে নিতে পারি। আর রবীন্দ্রসঙ্গীত আমার খুব প্রিয়। তাই নিজের চ্যানেল খুলেছিলাম ইউটিউবে। অবসর সময় সঙ্গীতের মাধ্যমেই আমি আমার সৃজনশীল সত্তাটা বাঁচিয়ে রাখি।
প্রশ্ন: নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের কাছে আপনার ইনস্টাগ্রাম সাফল্য অনুপ্রেরণা। তাই কি তাঁরা এখন রিল বানাতেই বেশি ব্যস্ত?
মিমি: আমি দেখেছি, অনেকেই খুব নিষ্ঠাভরে সারা ক্ষণ রিল তৈরি করেন। তবে সত্যি কথা বলছি, যদি বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকত, আমি সমাজমাধ্যমের আগের জীবনটায় ফিরে যেতে চাইতাম। প্রথম ইনস্টাগ্রামে খুব মজা ছিল। এখন খুব চাপ বেড়ে গিয়েছে। ‘এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে’। এই ছবি, এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার না করলে এই ব্র্যান্ডের প্রস্তাব আসবে না। বড্ড বেশি নিয়মকানুন হয়ে গিয়েছে। কোনও কিছুই আর নিজের ইচ্ছায় করা যায় না। আগে এতগুলো ছবিতে কাজ করেছি, একটা শুটিংয়ের ছবি নেই আমার প্রোফাইলে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি একদম বদলে গিয়েছে। আগেই জীবনটা সহজ ছিল। সব বিষয়ে জল্পনাও কম হত।
প্রশ্ন: এত চাপের জন্যেই এখন তা হলে অবসর সময়ও কমে এসেছে?
মিমি: একসঙ্গে অনেক কিছু করছি। পাঁচটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও চালাই আমি। যেটুকু সময় পাই, তাই বাড়িতে পরিবারের সঙ্গেই কাটাই। আমায় কখনওই খুব বেশি বাড়ির বাইরে দেখবেন না। আগে সিনেমাই আমার জীবন ছিল। এখন সিনেমা জীবনের একটা অংশ বলতে পারেন। কারণ, এখন জীবনে আরও অনেক কিছু এসে গিয়েছে যাতে আমায় সমান গুরুত্ব দিতে হয়।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির প্রতি কি একটু বিরক্ত আপনি?
মিমি: একটা শব্দ আছে না, ‘জব স্যাটিসফ্যাকশন’। সেটা না পেলে আর কাজ করি না। আমি যদি কাউকে অপছন্দ করি, তাঁরা বোধহয় সেটা আমার সঙ্গে থাকলেই আন্দাজ করতে পারেন। আমিও বুঝে যাই যে, ঠিক হচ্ছে না বিষয়টা। এনার্জি ইজ় নট রাইট। আমি তখন সরে আসি। তবে আমি যদি কাউকে ভালবাসি, তার পাশে আমায় সব সময় পাবেন। সেটা ভাল সময় হোক বা খারাপ সময়। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। তাই নিজের মতো থাকতেই এখন বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি।
প্রশ্ন: কোনও সমাজসেবামূলক কাজ করলে সাধারণত অভিনেতাদের সহকারীরা সেই ছবি তুলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু আপনার তরফ থেকে এমন কোনও প্রচারের অনুরোধ এখনও পর্যন্ত পাইনি।
মিমি: আমি মনে করি, কিছু জিনিস আপনার কর্মফলে যোগ হয়, ইনস্টাগ্রামে নয়। প্রথম যখন রাজনীতিতে যোগ দিই, আমি জানতামই না যে কোনও কাজ করে সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে দিতে হয়। তার পর অনেকে আমায় বললেন, ছবি না দিলে সকলে ভাববেন, আমি কোনও কাজই করছি না। সেটা শুনে তখন একটা আলাদা পেজ তৈরি করি। নিয়মিত কী করছি, সেখানে আপডেট করি। সেটা আমার রাজনৈতিক কর্তব্য বলে করতে হয়। কিন্তু তা ছাড়া আমার মা বলেন, ‘‘নেকি কর দরিয়া মেঁ ডাল।’’ কাজ করে গেলে উপরওয়ালার খাতায় সব লেখা থাকে। আধ্যাত্মিক শোনাতে পারে আমার কথাগুলো। কিন্তু আমার মনে হয়, জীবনের সকলের একটা উদ্দেশ্য থাকে। এক বার যদি আপনি বুঝে যান, আপনার জীবনের কী উদ্দেশ্য, তখন সেই অনুযায়ী কাজ করে যাওয়া উচিত। লোকে চারটে কথা বলবেই। কিন্তু সে সব শুনে আপনি যেন থেমে না যান। যদি আপনার কাজ সবার উপরে কথা বলে, তা হলে কোনও কিছুই আপনাকে আটকাবে না।
প্রশ্ন: রাজনীতির জগতেও কি একই নীতিতে বিশ্বাসী? ২০২৪-এর জন্য প্রস্তুতি তা হলে শুরু করে দিয়েছেন?
মিমি: সবই ঠিক সময় সবাই জানতে পারবেন। এখন আর কী বলি, বলুন তো?
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার এ নিয়ে ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে?
মিমি: দিদির সঙ্গে তো নিশ্চয়ই আমার কথা হয়েছে। কিন্তু এখন সে বিষয়ে খুব বেশি বলতে পারব না। কারণ, আমি নিজেই কিছু জানি না। সবই দিদি জানেন (হাসি)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy