‘কবীর’, ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’, ‘গল্প ওদের’, ‘ধূমকেতু’, ‘রাজকাহিনি’এবং ‘বিদায় ব্যোমকেশ’
বলিউডে নায়ক-নায়িকাদের কথায় কথায় লুক পাল্টে যাওয়ার খবর নতুন নয়। হিন্দি ছবির কোটি কোটি বাজেট সার্থক করতে শাহরুখ খান, আমির খান থেকে বরুণ ধওয়ন বা টাইগার শ্রফরা তুড়ি মেরে চেহারা পাল্টে নেন। কিন্তু বাংলা ছবিতে চেহারার এত বৈচিত্র কি তেমন ভাবে দেখেছেন দর্শক? কয়েক জন বিরল অভিনেতা ছাড়া? না বোধহয়। তবে গত কয়েক বছরে গ্রাফটা পাল্টাচ্ছে। বাংলা ছবির নায়ক-নায়িকারাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন লুক নিয়ে। ভাবনাচিন্তা হচ্ছে চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার বিভিন্ন ছকভাঙা পদ্ধতি নিয়েও।
এ দিক থেকে সবচেয়ে সাহসী বোধহয় বলা চলে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়কে। লম্বা চুল কেটে ফেলে শর্ট হেয়ার লুক নিয়ে ক্যামেরার সামনে প্রথম দাঁড়িয়েছিলেন বিরসা দাশগুপ্তের ‘জিরো থ্রি থ্রি’র জন্য। মৈনাক ভৌমিকের এখনও মুক্তি না-পাওয়া ছবি ‘গল্প ওদের’ জন্য কামিয়ে ফেলেছিলেন মাথার এক দিকের চুলও! মৈনাকেরই ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’-এর জন্য চাইনিজ কাট করিয়েছিলেন তিনি। স্বস্তিকার কথায়, ‘‘চরিত্রের জন্য রোগা বা মোটা হওয়া তো রয়েছেই। ‘ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী’র জন্য অনেকটা ওজন কমাতে হয়েছিল। কিন্তু লুক পাল্টাতে সবচেয়ে কাজে দেয় চুলের স্টাইলটা বদলালে। ‘বীরপুরুষ’-এ যেমন চুলের সামনের দিকটা রং করিয়ে নিয়েছিলাম। শকিং কালার!’’ স্বস্তিকা বয়স্ক লুক-এও নির্দ্বিধায় কাজ করতে পারেন। ‘অনুব্রত ভালো আছো’তে দর্শককে চমকে দিয়েছিলেন পাক ধরা চুল এবং ভাঁজ পড়া ত্বক নিয়ে। ‘আমি আসবো ফিরে’তেও তাঁকে দেখা গিয়েছে বয়স্ক লুকে।
চেহারার জন্য পরিশ্রমে আপস করেন না দেবও। ‘চ্যাম্প’-এর জন্য ওজন বাড়িয়ে করেছিলেন ১১৫ কেজি! আবার ‘ককপিট’-এর জন্য ফিরে আসতে হয় ৭৯-৮০ কেজির ছিপছিপে চেহারায়। ‘কবীর’-এর জন্য ফের নিজের ওজন ১০০ কেজিতে নিয়ে যেতে হয়েছিল সুপারস্টারকে। বললেন, ‘‘এখন ‘হইচই আনলিমিটেড’-এর জন্য আবার রোগা হতে হচ্ছে আমাকে! আসলে চরিত্রের প্রয়োজনে নিয়মিত ওজন বাড়ানো বা কমানোটা আমাদের মেনে নিতেই হয়।’’ কিন্তু দেবের যে চেহারা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা ও কৌতূহল— সেটা তাঁর ‘ধূমকেতু’র লুক। লম্বা-সাদা চুলে দেবকে দেখতে অধীর অপেক্ষায় দর্শকও। ‘‘এই ছবিটা দেখলে দর্শক বুঝতে পারবেন আমি প্রতিটা চরিত্রের জন্য কতটা খাটাখাটনি করি।’’
আবির ও যিশু
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ ব্যাপারেও বাকিদের চেয়ে এগিয়ে। এ বছর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের দু’টি ছবিতেই তিনি ভিন্ন লুকে। ‘দৃষ্টিকোণ’-এ তাঁর একটি চোখ অকেজো। পাথর-বসানো চোখের সেই লুকে রয়েছে রহস্য আর কৌতূহলের ছায়া। আবার ‘কিশোরকুমার জুনিয়র’-এ রেট্রো লুকে প্রসেনজিৎ। সেখানে ঘাড় অবধি বড় চুল আর মোটা গোঁফে তিনি। ‘‘কৌশিক আমাকে বলেছে, একই মানুষের সঙ্গে কাজ করলেও ওর মনে হচ্ছে, দুটো ছবিতে দু’জন আলাদা অভিনেতার সঙ্গে ও কাজ করছে,’’ হাসতে হাসতে বললেন ইন্ডাস্ট্রির বুম্বাদা। ‘মনের মানুষ’-এর লালন ফকির হোক বা কাকাবাবু সিরিজে রাজা রায়চৌধুরীর লুক— যে কোনও ধরনের চেহারা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে প্রসেনজিৎ পিছপা হন না।
এ ক্ষেত্রে কিন্তু চমক দিয়েছেন আবির চট্টোপাধ্যায়ও। দেবালয় ভট্টাচার্যের ‘বিদায় ব্যোমকেশ’-এ তিনি বৃদ্ধ ব্যোমকেশ। চার-পাঁচ ঘণ্টা প্রস্থেটিক মেকআপ নিয়ে লুকটা তৈরি করতে হয়েছিল। মুম্বই থেকে ধনঞ্জয় প্রজাপতির টিম এসেছিল কাজটা করতে। আবিরের কথায়, ‘‘মেকআপ করতে যতটা না সমস্যা হতো, তার চেয়ে অনেক বেশি মুশকিলে পড়তাম মেকআপ তুলতে গিয়ে। ধনঞ্জয় আমাকে বলেছিল, খুব সতর্ক ভাবে কাজটা করতে। কারণ তাড়াহুড়ো করে তুলে ফেলতে গেলেই র্যাশ বেরিয়ে যাওয়ার প্রবল ভয়!’’ একটু অন্য ধাঁচের লুকে আবিরকে দেখা গিয়েছে ‘ছায়া ও ছবি’ বা ‘অ্যাবি সেন’-এও।
অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও রুক্মিণী মৈত্রও এক্সপেরিমেন্টে কম যান না। গ্ল্যামারাস নায়িকা হলেও ‘কবীর’-এ তিনি ১৫ কেজি ওজন বাড়িয়েছিলেন। ‘‘আমাকে যখন চরিত্রের জন্য চেহারাটা একটু ভারী করতে বলা হল, তার কয়েক দিনের মধ্যে আমার পা ভেঙে গিয়েছিল। বে়ডরেস্টে ছিলাম। ফলে ওজন বাড়াতে অসুবিধে হয়নি,’’ মুচকি হেসে বললেন নায়িকা। জানিয়ে দিলেন, ওজন বে়ড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে খুশি হয়েছেন তাঁর মা।
লুক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্রস্তুত যিশু সেনগুপ্তও। ‘শেষ বলে কিছু নেই’-এর মাদকাসক্ত যুবক, ‘রাজকাহিনি’র পাগলাটে খুনে থেকে ‘এক যে ছিল রাজা’র সন্ন্যাসী— চরিত্রের দাবিতে ভোল বদলাতে পারেন তিনিও। এ ভাবেই চলুক বদলে যাওয়া চেহারায় তারকাদের বাজিমাত!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy