Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

এ ভাবেও ফিরে আসা যায়

সম্মুখসমরে মারণরোগকে দেখেও এক ইঞ্চি জমি ছাড়েননি। অদম্য সাহস নিয়ে লড়ে গিয়েছেন তাঁরাসম্মুখসমরে মারণরোগকে দেখেও এক ইঞ্চি জমি ছাড়েননি। অদম্য সাহস নিয়ে লড়ে গিয়েছেন তাঁরা

সোনালি, মনীষা, যমজ সন্তানের জন্মের পরে লিজ়া।

সোনালি, মনীষা, যমজ সন্তানের জন্মের পরে লিজ়া।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৩
Share: Save:

তাঁর একঢাল রেশম চুল, মিষ্টি হাসি, দৃষ্টির মাদকতা... নব্বইয়ের দশক জুড়ে সোনালি বেন্দ্রের সৌন্দর্যে কাত হননি, এমন মানুষ কমই আছেন। সেই সোনালিই এখন কেশবিহীন। চোখের তলায় কালি। তবে জ্যোতি অমলিন। গত জুলাইয়ে টুইট করে অভিনেত্রী জানান, তিনি হাই গ্রেড ক্যানসারে আক্রান্ত। সেটা ছিল লড়াইয়ের শুরু। জীবন তাঁকে যত বেশি করে কোণঠাসা করেছে, ততটাই বীরবিক্রমে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সোনালি। বড় চুলে শেষ বারের মতো ব্লো ড্রাই, চুল কেটে ছোট করা, শেষে পুরোপুরি কেটে ফেলা... প্রত্যেকটা ধাপে কষ্ট পেয়েছেন। আবার সামলেও নিয়েছেন। অসুস্থতার প্রতিটি পর্যায়ের ছবি-ভিডিয়ো তুলেছেন, ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন নিজের লড়াই। সোনালি বরাবরই বইপ্রেমী। রোগ নির্ণয়ের পরে আরও বেশি করে বই পড়া শুরু করেন। বই, পরিবার ও বন্ধুদের শুভকামনা তাঁকে সাহায্য করেছে লড়তে। যে রোগের কথা ভাবলে আমরা ভিতরে ভিতরে কুঁকড়ে যাই, সেখানে সেই রোগের মুখোমুখি হয়ে তাকে নস্যাৎ করেছেন সোনালি। তিনি তাঁর মতো লড়তে থাকা অসংখ্য মানুষকে লড়াই চালানোর, না থামার ও শেষ অবধি বাজি জেতার বিশ্বাস রাখতে অনুপ্রাণিত করেছেন। সম্প্রতি নিজের জন্মদিনে কেক কেটেছেন সোনালি। শুভাকাঙ্ক্ষীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা কুড়িয়েছেন, বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় উপচে পড়েছে সে সব সুখকর ছবি। চুলহীন সোনালি সেখানে তারকার মতোই উজ্জ্বল, নিজের অদম্য সাহস আর হার না মানা মনোভাবে।

আসলে তারকাদের আমরা রুপোলি পর্দাতেই দেখতে অভ্যস্ত। তাঁদের রঙিন জীবনযাপন, চোখধাঁধানো রূপটাই মনে হয় ধ্রুবসত্য। কিন্তু মারণরোগ সে সবের তোয়াক্কা করে না। আর পাঁচ জন সাধারণ মানুষের মতো তাঁদের জীবনেও থাবা বসায়। তবে সেই রোগের বিপরীতে দাঁড়িয়ে লড়েছেন তাঁরা। তাই পর্দার বাইরে এসে তারকারা বাস্তবকে বানিয়েছেন রূপকথা। আর সেই রূপকথা কিন্তু তাঁদের একার নয়। প্রতি পদক্ষেপেই তাঁদের সঙ্গে লড়েছে পরিবার। যেমন লড়েছেন আয়ুষ্মান খুরানা। তাঁর পরিবারেও ক্যানসার হানা দিয়েছে। স্ত্রী তাহিরা কাশ্যপের ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার খবরে মুষড়ে পড়েছিলেন আয়ুষ্মান। কিন্তু থেমে থাকেননি। তাহিরা-আয়ুষ্মান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন। স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে দিনভর শুটিং করেছেন আয়ুষ্মান। রাতে ফিরে গিয়েছেন হাসপাতালে স্ত্রীর কাছে। আয়ুষ্মানের গল্পটা হয়তো অনেকেরই চেনা লাগতে পারে। তাহিরাও নিজের লড়াইয়ের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। আর স্ত্রীর আয়ুকামনায় করবা চৌথে উপোস করেছেন আয়ুষ্মান। এ ভাবেই যন্ত্রণাময় পর্যায়কে রোম্যান্টিক মোড়কে মুড়ে লড়েছেন তাঁরা।

২০১২-র শেষ দিকে মনীষা কৈরালা মুখোমুখি হন ওভারিয়ান ক্যানসারের। প্রাথমিক ভাবে ভয় কাজ করলেও মনীষা হাল ছাড়েননি। বলেছেন, ‘‘একটা সময়ে আমি মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। আমার গুরুজির সঙ্গে আলোচনাও হয়। তাঁকে বলেছিলাম, ‘আমি মরতে ভয় পাই।’ তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘মৃত্যু কী?’ আমি তার কোনও উত্তর দিতে পারিনি। তখন গুরুজি বলেন, ‘যেটা নিয়ে জানো না, তাকে ভয় পাচ্ছ?’ সেই মুহূর্তে আমি তাঁর কথার অন্তর্নিহিত সত্যিটা বুঝতে পারি।’’ আরও জানান, ‘‘কেমোথেরাপি নিয়েও শঙ্কা হতো। আমার এক বন্ধু বলেছিল, এটাকে কেমো না ভেবে ভিটামিন শট ভাবতে!’’ শারীরিক যন্ত্রণার পাশাপাশি চুল পড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বাড়ার সমস্যাও ছিল। তাঁর পোর্সেলিন ত্বক এখন বলিরেখা জর্জর। তবে কোনও কিছুরই তোয়াক্কা করেননি। লড়েছেন, জয়ী হয়ে ফিরে এসেছেন এবং আবারও ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন। লিখেছেন ‘হিলড: হাউ ক্যানসার গেভ মি আ নিউ লাইফ’। তাই মনীষা নিজেকে ‘ক্যানসার ক্রুসেডর’ বলতেই পছন্দ করেন। ক্যানসারকে হার মানিয়েছেন লিজ়া রে-ও। ২০০৯-এ ক্যানসারে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। প্লাজ়মা সেলের ক্যানসার ছিল রীতিমতো দুরারোগ্য। স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট করিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন লিজ়া। রোগমুক্তির পরে মা হয়েছেন তিনি। যমজ দুই কন্যাসন্তানকে পালন করার পাশাপাশি এখন ছড়াচ্ছেন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা।

সোনালি-মনীষা-লিজ়াই নন, আরও অনেকে মুখোমুখি হয়েছেন ক্যানসারের। মুমতাজ় তখন ৫৪, যখন তাঁর ব্রেস্ট ক্যানসার ধরা পড়ে। ৬টি কেমোথেরাপি আর ৩৫টি রেডিয়েশন নেওয়ার পরেও লড়েছেন। ক্যানসারকে হেলায় হারিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমি সহজে হাল ছাড়ি না। মৃত্যু এলেও তাকে আমার সঙ্গে লড়তে হবে।’’ হয়েছিল বইকী।

১১ বছর ক্যানসারের সঙ্গে মুমতাজ়ের লড়াইয়ে পিছু হঠেছে মারণরোগই! একটা সময়ে প্রোমাইলোসাইটিক লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত অনুরাগ বসুর বাঁচার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫০ শতাংশ। তবু হারেননি। ঠিক সিনেমার মতোই ফিরে এসেছেন। সাহস জুগিয়েছিলেন স্ত্রী তানি। অসুস্থতার সময়েই অনুরাগ লিখে ফেলেছিলেন ‘গ্যাংস্টার’ ও ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’র চিত্রনাট্য!

মৃত্যুকে সম্মুখসমরে দেখেও এক পা পিছিয়ে যাননি এঁরা। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্যানসারকে অভিশাপ হিসেবে দেখেননি। মেনে নিয়েছেন ‘ব্লেসিং’ হিসেবে। খুঁজেছেন নতুন করে বাঁচার মানে। আর তাঁদের দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরাই তো বাস্তবের তারকা!

অন্য বিষয়গুলি:

Sonali bendre Manisha Koirala Lisa Ray Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy