Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

আঁধার থেকে আলোর গল্প নাটকে

মুখোশে ঢাকা শরীরগুলো হামলে পড়ছে শর্বরী, তমসার উপর। প্রতীকী রক্তের চাদর শরীরে জড়িয়ে আর্তনাদ করে তমসারা বলছেন, ‘আমরা ভুল করেছি, তোমরা ভুল করো না।’

চলছে নাটকের মহড়া। — নিজস্ব চিত্র।

চলছে নাটকের মহড়া। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

মুখোশে ঢাকা শরীরগুলো হামলে পড়ছে শর্বরী, তমসার উপর। প্রতীকী রক্তের চাদর শরীরে জড়িয়ে আর্তনাদ করে তমসারা বলছেন, ‘আমরা ভুল করেছি, তোমরা ভুল করো না।’

শর্বরী, তমসার মতো জঙ্গলমহলের একাংশ কিশোরী, তরুণী নিজেদের ভুলে কখনও বা অভাবী পরিবাররের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরা সেই সব বাস্তব চরিত্ররাই হয়ে উঠেছেন নাটকের চরিত্র। নারী পাচার রুখতে সচেতনতামূলক নাটকে নিজেদের জীবনের ঘটনাগুলিকেই অভিনয়ের মাধ্যমে তুলে ধরছেন শর্বরীরা। ঝাড়গ্রামের ‘সুচেতনা’ মহিলা সংস্থার উদ্যোগে ওই নাটকটি স্কুল, কলেজ ও প্রত্যন্ত গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় অভিনীত হবে। গত কয়েকদিন ধরে ঝাড়গ্রাম শহরের প্রজাপতি সভাঘরে নাটকটির জোর মহড়া চলছে। আজ, মঙ্গলবার মেদিনীপুর কলেজে নাটকটির প্রথম শো মঞ্চস্থ হবে।

‘আলোয় ফেরা’ নাটকটির মতো বাস্তব জীবনের তমসা স্কুলে পড়ার সময় প্রেমিকের ভালবাসার টানে ঘর ছেড়েছিলেন। ভুল ভেঙেছিল কয়েকদিন পরে। উত্তর প্রদেশের এক নিষিদ্ধ পল্লিতে তমসাকে বিক্রি করে দিয়ে পালিয়েছিল ভালবাসার মানুষটি। শরীর ও মনে ক্ষতবিক্ষত হতে হতে বাড়ি ফেরার আশা ছেড়েই ছিয়েছিলেন বছর আঠারোর তরুণীটি। অবশেষে পুলিশ ও ঝাড়গ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সুচেতনা’র উদ্যোগে উদ্ধার হওয়ার পরে তমসা ফিরে পেয়েছেন নতুন জীবন। এখন গৃহশিক্ষকতা করেন তিনি।

গৃহবধূ শর্বরী অভাবের সংসারে অসুস্থ স্বামী আর মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে নাজেহাল ছিলেন। সংসার টানতে অন্যের বাড়িতে রাঁধুনির কাজ করতেন। এক পড়শি মহিলার আত্মীয়ের মাধ্যমে মোটা টাকা বেতনে মেয়েদের হস্টেলে রান্নার প্রতিশ্রুতি পেয়ে গেলেন কলকাতা। কিন্তু দু’দিন পরেই রান্নার সময় কারা যেন পিছন থেকে রুমালে শর্বরীর নাক-মুখ চেপে ধরল। ঘুম ভেঙে শর্বরী দেখলেন তিনি দিল্লির একটি নিষিদ্ধপল্লিতে। সেখানে প্রতিদিন দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জোর করে তাঁকে দেহব্যবসায় বাধ্য করতেন মালকিন। প্রতিবাদ করলে হাত-পা বেঁধে শরীরে সিরিঞ্জ ফুটিয়ে রক্ত বের করে নেওয়া হত। হাত ফুলে গিয়ে যন্ত্রণায় কেঁদে উঠলে পিঠে পড়ত চাবুকের ঘা।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় শর্বরী, রুমা, আদুরী, মালতীর মতো অনেকেই ফিরেছেন নিজের ঘরে। বাড়ির লাগোয়া একটি মুদির দোকান খুলেছেন শর্বরী। কিন্তু এখনও পাড়া পড়শিরা চরিত্র নিয়ে টিপ্পনি কাটেন। সুচেতনার সম্পাদিকা স্বাতী দত্ত এবং কার্যক্রম সঞ্চালিকা মানসী ঘোষ-রা বলেন, “গ্রামাঞ্চলের সহজসরল আদিবাসী ও মূলবাসী পরিবারের কিশোরী ও মহিলাদের একাংশ এভাবেই প্রতারিত হন। অনেকেই হারিয়ে গিয়েছেন অন্ধকার জগতে। আলোয় ফেরার পরেও সমাজের একাংশ তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখে। এ বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি, সমাজে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার লড়াইটা সবাইকে জানাতে চায়।”

স্বাতীদেবী জানালেন, ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় ৭৫ জন কিশোরী ও মহিলাকে উদ্ধার করা গিয়েছে। এঁদেরই মধ্যে ১৩ জনকে নিয়ে তিন দিনের নাট্য কর্মশালায় নারী পাচার বিরোধী সচেতনতামূলক নাটকটির নির্মাণ করা হল। নাটকটির ভাবনা স্বাতীদেবীর। নাট্যরূপ, সংলাপ ও নির্দেশনার দায়িত্বে রয়েছেন ঝাড়গ্রামের ‘কুরকুট’ নাট্যগোষ্ঠীর উপল পাহাড়ি ও সুশান্ত দে।

অন্য বিষয়গুলি:

Theatre Dark to light
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy