Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Bollywood

মৈতনার মঞ্চ থেকে মুম্বই

মা উৎসাহ দিতেন আবৃত্তিতে। কিন্তু মঞ্চে অভিনয়ে আপত্তি ছিল দু’একজনের। সেই বাধা কাটিয়ে নাটকের মঞ্চে। পারিবারিক কারণে নাটক থেকে সরে আসা। পরে ফের শুরু এবং সফল। বলিউডের সিনেমায় সুযোগও মিলতে শুরু করে। পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রাম থেকে বলিউডের পর্দায় পৌঁছনো আরাধনা জানার কথা শুনলেন দীপক দাসহ্যাঁ, ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের ইচ্ছে ছিল। গ্রামে খুব মন দিয়ে যাত্রা ও নাটক দেখতাম।

বিরতিতে: এক সিনেমার শ্যুটিংয়ের ফাঁকে সারা আলি খানের সঙ্গে। ছবি: আরাধনা জানার সৌজন্যে

বিরতিতে: এক সিনেমার শ্যুটিংয়ের ফাঁকে সারা আলি খানের সঙ্গে। ছবি: আরাধনা জানার সৌজন্যে

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২০ ০০:৫৪
Share: Save:

প্রশ্ন: বলিউডের এক উঠতি তারকার সঙ্গে আপনার ছবি দেখা গেল সোশ্যাল মিডিয়ায়। মেদিনীপুর থেকে মুম্বই অনেক দূর তো?

উত্তর: হ্যাঁ, সে তো ঠিকই বলেছেন। মেদিনীপুর থেকে মুম্বই অনেক দূর। আমারও অনেক সময় লেগেছে ওইখানে পৌঁছতে। তবে আমি শুধু একটাই জিনিস জানি, কারও যদি কোনও কিছু করার ইচ্ছে থাকে, যতই বিপরীত পরিস্থিতি আসুক না কেন সেই কাজটা করার ইচ্ছে কোনও দিনই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন: মেদিনীপুরের কোথায় বাড়ি আপনার?

উত্তর: মেদিনীপুর বলতে পূর্ব মেদিনীপুর। আমার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর থানা এলাকার মৈতনা গ্রামে।

প্রশ্ন: পড়াশোনা কি এখানেই? স্কুল, কলেজ?

উত্তর: দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি মৈতনা গার্লস হাইস্কুলে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি পড়েছি এগরা ঝাটুলাল হাইস্কুলে। কাঁথি প্রভাতকুমার কলেজ থেকে স্নাতক হই। এমএ করেছি সোশিওলজি নিয়ে। স্নাতকোত্তর পড়াশোনা মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়িনীর বিক্রম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। টিচার্স ট্রেনিংও উজ্জ্বয়িনী থেকে। লোকমান্য তিলক বিদ্যালয়ে।

প্রশ্ন: ছোটবেলার কোনও মনে রাখার মতো ঘটনা?

উত্তর: ছোটবেলায় পড়ার বই ছাড়াও অন্য বই পড়ার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু বাড়ি থেকে গ্রামের লাইব্রেরি ছিল অনেকটা দূর। একা একা বই আনতে যাওয়া বাড়ি থেকে নিষেধ ছিল। আমার পাশের বাড়ির এক বান্ধবী ছিল। ওর নাম মিঙ্কু শতপথী। মিঙ্কু আর আমি রবিবারের দুপুরবেলা মেঠো পথ দিয়ে দৌড়ে দৌড়ে বই আনতে যেতাম। এক সপ্তাহ পরে আবার ফেরত দিয়ে আসতাম। কিন্তু তখন মাথায় ছিল না যে বাবাও সেখান থেকে বই আনতেন। হঠাৎ করে বাবা মেম্বারদের লিস্টে আমাদের দু’জনের নাম দেখেন। আমরা কী কী বই পড়ি সেগুলো খুঁটিয়ে দেখেন। তার পর বাবা বাড়ি ফিরে এসে খুব বকাবকি করেছিলেন। তবুও আমরা লাইব্রেরি থেকে বই আনা বন্ধ করতে পারিনি।

প্রশ্ন: বাড়িতে কে কে ছিলেন?

উত্তর: বাড়িতে আমরা ছয় ভাই বোন এবং মা-বাবা থাকতাম। তবে দুই বোন আর এক ভাই পড়াশোনার সূত্রে বাইরে থাকত। আমি ও আমার দুই ভাই বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতাম। এখন বাবা ও মা গত হয়েছেন। আমরা ছয় ভাই বোন যে যার কাজের সূত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকি।

প্রশ্ন: অভিনয়ের ইচ্ছে কি ছোটবেলা থেকেই?

উত্তর: হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকে অভিনয়ের ইচ্ছে ছিল। গ্রামে খুব মন দিয়ে যাত্রা ও নাটক দেখতাম। আমার মা বেলারানিও খুব উৎসাহ দিতেন কবিতা আবৃত্তি করার জন্য। কবিতা পড়ার জন্য। আমরা ছোটবেলায় পাড়ার সব বাচ্চারা মিলে মঞ্চ বানিয়ে প্লাস্টিকের শাঁখা দিয়ে পর্দা বানিয়ে নাটক করতাম। আমার ভাই তুলসী, তমালও খুব ভাল নাটক করত। বাড়িতে একটা সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল। এছাড়া স্কুলের নাটকেও অংশ নিতাম। তবে হিন্দিতে কোনও দিন নাটক বা সিনেমা করব, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।

প্রশ্ন: অভিনয় শেখার প্রথম পর্বের দিনগুলো একটু বলুন?

উত্তর: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় এগরাতে রূপারূপ গোষ্ঠী নামে একটি নাটকের দল ছিল। যার পরিচালক ছিলেন অম্বিকেশ দাশ। ওঁর কাছে অনেকদিন যাবৎ নাটক করেছি। তখন আমি, আমার বড় দিদি শিখারানির বাড়িতে থাকতাম। যদিও তখনকার দিনে মেয়েদের নাটক করাটা গুরুজনেরা ভাল চোখে দেখতেন না। তবুও আমার দিদি শিখারানি ও রেখা দিদি আমাকে নাটক করার ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিতেন।

প্রশ্ন: এর পর?

উত্তর: এর পর? মঞ্চ থেকেই বিয়ের পথে। কথাছন্দ নামে একটি আবৃত্তি সংস্থার অনুষ্ঠান মঞ্চে আমার স্বামী অসিতকুমার জানা আমাকে প্রথম দেখেন। আমাকে পছন্দ হয়। তার তিন বছর পর ১৯৮৮ সালে ওঁর সঙ্গে বিয়ে হয়। উনি ছিলেন এগরার বাসিন্দা। বিয়ের এক বছর পরে আমি ওঁর সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ চলে যাই। তার পর ঘর সংসার সামলাতে সামলাতে অভিনয়ের সঙ্গে ১০ বছর কোনও সম্পর্ক ছিল না। উজ্জ্বয়িনীতে থাকার সময়ে আমি আবার দুর্গাপুজোর সময়ে বাংলা নাটক করি। ওখানে বছর সাতেক ছিলাম। তার পর চলে আসি দিল্লিতে। সেই সময়ে আমি একটা বেসরকারি স্কুলে পড়াতাম।

২০১০ সালে ছেলেদের পড়াশোনার জন্য ওই চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। বাচ্চাদের পড়াতে পড়াতে হিন্দি ভাষাটা ভাল ভাবে রপ্ত করতে পেরেছিলাম। দুই ছেলে তার পর কলেজ গেল। আমার স্বামী আবার আমাকে নাটক করা শুরুর জন্য উৎসাহ দেন। ২০১৩ সালে প্রথম হিন্দি নাটক করি। নাটকটি দিল্লি ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় মঞ্চস্থ হয়। তার পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি আমাকে। অনেকগুলো নাটকের দলে আমি কাজ করি। দিল্লি সাহিত্য কলা পরিষদের তরফ থেকে নাটক নিয়ে দিল্লির বাইরেও গিয়েছি। আমি নাট্যকলা মঞ্চ নামে একটি গ্রুপের সঙ্গে দিল্লিতে তিহাড় জেলে নাটক করেছি। রাজেশ দুয়া স্যারের সঙ্গেও অনেক নাটক করেছি।

প্রশ্ন: মুম্বইয়ে যাত্রা কী ভাবে?

উত্তর: আমাকে বলিউডে কাজ পাওয়ার জন্য মুম্বই যেতে হয়নি। আমি দিল্লিতে অডিশন দিয়ে প্রথম চান্স পাই। সেটা হচ্ছে আমির খানের ‘দঙ্গল’। ওতে আমার একটা ছোট ভূমিকা ছিল। সেই থেকেই ক্যামেরার সামনে কাজ করা শুরু। তার পর স্টার প্লাসে দু’টো সিরিয়াল, ক্রাইম পেট্রল, সাবধান ইন্ডিয়া, দু’টো ওয়েব সিরিজ ও বারোখানা বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছি।

প্রশ্ন: এবার সেই ছবিটির কথা বলি। যেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা গিয়েছিল। সারা আলি খানের সঙ্গে ছবি। কোনও সিনেমার শ্যুটিংয়ের ছবি। বিষয়টা কী?

উত্তর: সারা আলি খানের সঙ্গে একটি সিনেমা করছি। ছবিটার নাম ‘আতরঙ্গি রে’। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার অনুমতি নেই।

প্রশ্ন: জাতীয় পুরস্কার জয়ী অভিনেতা সীমা বিশ্বাসের সঙ্গেও আপনার ছবি দেখা গিয়েছে।

উত্তর: সীমা বিশ্বাসের সঙ্গেও আমার ‘আতরঙ্গি রে’ সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে আলাপ হয়েছে।

প্রশ্ন: বলিউডে আর কোন ছবিতে অভিনয় করেছেন?

উত্তর: বলিউডে ইরফান খানের সিনেমা হিন্দি মিডিয়ামে আমি বস্তিতে থাকা একটি মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছি। আর একটি বলিউড ছবি ‘মা’। তাতে আমি নায়িকার মাসির চরিত্রে অভিনয় করেছি। এছাড়াও ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ সিনেমায় সাংসদ রামারাওয়ের মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। রবিনা টন্ডনের ‘মাতৃ’ ছবিতেও অভিনয় করেছি।

প্রশ্ন: এবার লক্ষ্য কী?

উত্তর: আমি হিন্দিতে অনেক কাজ করেছি। করছিও। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকে অ্যাঙ্কারিংয়ে ডাকেন। বাংলায় বিজ্ঞাপন করেছি। কিন্তু বাংলায় আরও কাজ করার ইচ্ছে আছে।

প্রশ্ন: বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ আছে? আসার সময় হয়?

উত্তর: বাড়িতে আমরা প্রতি বছর দু’তিনবার যাই। এগরায় শ্বশুরবাড়িতে ও মৈতনায় বাড়িতেও যাই। সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক আছে।

প্রশ্ন: মৈতনা থেকে মুম্বই যাত্রার প্রাপ্তি কী?

উত্তর: আমি হঠাৎ করে এই বয়সে এসে একটা নতুন পেশা শুরু করেছি। এবং মোটামুটি একটা ভাল জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি। এটাই আমার জীবনের অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। আমি মনে করি, কখনই স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। স্বপ্নকে সফল করার জন্য যতই বাধা বিপত্তি আসুক না কেন তা অতিক্রম করার চেষ্টা করা উচিত। পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bollywood Cinema
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy