করোনা-আতঙ্কের মধ্যেই রাজ্যবাসীর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে আমপান। সারা রাত প্রলয় চলার পরে সকালে যেন জীবন স্তব্ধ। নিঃশব্দ টলিপাড়াও। কারও সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। অতঃপর কেটে কেটে যাওয়া হোয়াটসঅ্যাপ কলে ধরা গেল জয়া আহসানকে। বাংলাদেশেও আমপান আছড়ে পড়েছে। জয়া বললেন, “প্রত্যেক বার বাংলাদেশের উপরে ঝড় বেশি আছড়ে পড়ে। তবে এ বার দাপট একটু কম। বেশির ভাগটা পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়েই গিয়েছে মনে হচ্ছে। খুব চিন্তা হচ্ছে সকলের জন্য। সকাল থেকে ফোন করছি কলকাতার বন্ধুদের। কারও ফোন পাচ্ছি না। আমার যোধপুর পার্কের বাড়িটাও কেমন আছে, কে জানে! তালাবন্ধ পড়ে আছে। তবে এই দুর্যোগে নিজের সামান্য বাড়ির জন্য অতটাও ভাবছি না। অসংখ্য মানুষের কত ক্ষতি হয়ে গেল, সেটা ভাবছি আর কষ্ট হচ্ছে,’’ বারবার কলকাতার কথা জিজ্ঞেস করে ফোন রাখলেন তিনি। তবে দুর্যোগ শুধু রাস্তায় নয়, ঘরের মধ্যেও। অঙ্কুশের বাথরুমের ফলস সিলিং ভেঙে পড়েছে বুধবারের ঝড়ে। সারা ঘর জলে ভেসে যাচ্ছে। অভিনেতার মন্তব্য, ‘‘এটা সাইক্লোন না কি ভূমিকম্প?’’ তবে জানালেন যে, এখন সব কিছু আন্ডার কন্ট্রোল।
তবে আমপানের কারণে ছিন্ন হয়েছে যোগাযোগ মাধ্যম, জল ও বিদ্যুতের কানেকশন। বুধবার সন্ধের পর থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই গায়ক অনুপম রায় ও অভিনেত্রী ইশা সাহার বাড়িতে। ইশা বৃহস্পতিবার সকালে বললেন, “বুধবার সন্ধেবেলা সেই যে কারেন্ট গেল, এখনও আসেনি। তাই জলের সাপ্লাইও বিঘ্নিত,’’ কেটে কেটে যাওয়া কথা বন্ধ হয়ে গেল নেটওয়র্কের অভাবে। ঋতাভরী চক্রবর্তীর সদর দরজাও বন্ধ কাল সকাল থেকে। “ঝড়ে ঠিক বাড়ির সামনের রাধাচূড়া গাছটা ভেঙে পড়েছে মেন গেটের মুখে,’’ বললেন অভিনেত্রী।
উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা মিলিয়ে কয়েক হাজার গাছ ভেঙে পড়েছে এই ঝড়ে। রণজয় বিষ্ণু ও সোহিনী সরকার সকালে দরকারে বেরিয়েছিলেন রাস্তায়। কিন্তু সারা রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ায় বেশি দূর যেতে পারেননি। বুধবার রাত থেকে বারবার চেষ্টা করেও মধ্যমগ্রামে নিজের বাড়িতে যোগাযোগ করতে পারেননি রণজয়। তবে সোহিনীর বাড়িতে যোগাযোগ করা গিয়েছে।
তবে এ তো গেল সাম্প্রতিক দুর্যোগের ঘটনা। এর আগেও বহু অভিনেতা এ রকম প্রলয় চাক্ষুষ করেছেন। আমপান তাঁদের মনে করিয়ে দিল ফেলে আসা সেই দুর্যোগের স্মৃতি।
কোনও আগাম বার্তা না পেয়ে ত্রিপুরায় পৌঁছেই অকস্মাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়েছিলেন দীপঙ্কর দে। বছর আটেক আগের সেই সাতটা দিনের কথা ভেবে তিনি শিউরে ওঠেন আজও, ‘‘১৫টি শোয়ের বায়না নিয়ে আমি, দোলন (রায়) এবং আরও কয়েকজন ত্রিপুরা পৌঁছনোর আগেই শুরু হয় ভয়ঙ্কর সাইক্লোন। শোয়ের উদ্যোক্তা বেপাত্তা। স্থানীয় বিধায়কের সহায়তায় সকলের মাথা গোঁজার ঠাঁই হল পাহাড়ের কোলে গেস্ট হাউসে। কিন্তু কেয়ারটেকার বিপদের আশঙ্কায় আমাদের ছেড়ে পালান। চারদিক জলে ভেসে যাচ্ছে। খাওয়ার জল পাওয়াও দুষ্কর ছিল,’’ দুর্যোগ কাটিয়ে অক্ষত অবস্থায় ফিরেছিলেন সকলেই। ফেরার সময়ে তিন-চারটে শো করেন আর চেখে দেখেছিলেন ত্রিপুরার বিখ্যাত সিদল শুঁটকি মাছ।
বেড়াতে গিয়ে এক ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী হয়েছিলেন পরিচালক বিরসা দাশগুপ্ত, ‘‘২০১২ সালে আমি, দুই মেয়ে মেঘলা ও ইদা এবং পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্যের পরিবার মিলে সুন্দর আবহাওয়ায় সিকিমের জ়ুলুক পৌঁছেছি। পরদিন বাবামন্দির যাওয়ার পথেই আবহাওয়ার পরিবর্তন শুরু হল। তুমুল বৃষ্টি আর তুষারঝড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল। এগোতে পারছি না, পাহাড়ি রাস্তায় পিছোনোর উপায়ও নেই। গাড়ি পিছলে যাচ্ছে, অনেক কষ্টে বেলচা দিয়ে বরফ কেটে সে যাত্রা কোনও মতে প্রাণ নিয়ে ফিরি।’’ তবে বিরসার স্ত্রী বিদীপ্তার মতে, পশ্চিমবঙ্গ ও নেপালের সীমান্তে টুংলিংয়ে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তিনি পড়েছিলেন, তা আরও ভয়ঙ্কর ছিল। ‘‘সাইক্লোন নয়, বজ্রবিদ্যুৎ-সহ তুমুল ঝড়বৃষ্টির মধ্যে ভয়ঙ্কর রাত কাটিয়েছিলাম। প্রাণে বেঁচে ফিরে আসার মায়া ত্যাগ করেছিলাম সে রাতে,’’ বললেন বিদীপ্তা।
বছর এগারো আগে আয়লার স্মৃতি আজও টাটকা ঋষি কৌশিকের মনে। বললেন, “তখন ‘এখানে আকাশ নীল’-এর শুটিং করে বাইকে বাড়ি ফিরছি। ভিজে ডালপালায় স্কিট করে যাচ্ছে চাকা। গড়িয়াহাট ফ্লাইওভারে উঠতেই মনে হচ্ছিল হাওয়ার ঝাপটায় বাইকসমেত উড়ে যাব,’’ স্মৃতি ভারাক্রান্ত অভিনেতা।
স্মৃতি যে সতত সুখের হয় না, বুধবারের দুর্যোগ যেন আরও একবার তা মনে করিয়ে দিয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy