বাংলা ছবির ভাল দিনের আশায় পিয়া, শিবপ্রসাদ, নীলরতন, নবীন। গ্রাফিক্স: সনৎ সিংহ।
দীর্ঘ দিনের লড়াই শেষ। চওড়া হাসি প্রযোজক, হলমালিকদের মুখে। খবর, ইম্পার উদ্যোগে বাংলা ছবির ডিজিটাল প্রোজেকশন চার্জ এক লাফে প্রায় এক- তৃতীয়াংশ কমিয়ে দিল ইউফো। এত দিন নিজ রাজ্যেই যেন প্রান্তবাসী ছিল বাংলা ছবি। হিন্দি-সহ অন্যান্য ভাষার ছবি এত দিন পশ্চিমবঙ্গে সাত দিন প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর জন্য সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচ হত। বাংলা ছবিকে সেই জায়গায় দিতে হত ৭ হাজার টাকা। অর্থাৎ, প্রতি দিনের খরচ পড়ত হাজার টাকা। আনন্দবাজার অনলাইনকে ইম্পার সভাপতি পিয়া সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ইম্পার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর ইউফো বাংলা ছবির ডিজিটাল প্রোজেকশন চার্জ কমাতে রাজি হয়েছে। সেই অনুযায়ী, এ বার প্রতি বাংলা ছবির খরচ দাঁড়াবে সপ্তাহে দু’হাজার একশো টাকা। এর সঙ্গে থাকবে জিএসটি। তাতেও প্রতি দিনের খরচ দাঁড়াবে তিনশো টাকা থেকে বড় জোর পাঁচশো টাকা। খবর ছড়াতেই চওড়া হাসি প্রযোজক নীল রতন দত্ত, শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শুভঙ্কর মিত্র, রানা সরকারের। দীর্ঘ দিনের লড়াই সফল হতেই উচ্ছ্বসিত পিয়া। আশার আলো দেখছেন নবীনা প্রেক্ষাগৃহের মালিক নবীন চৌখানিও।
কী বলছেন তাঁরা? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফ থেকে যোগাযোগ করতেই ফোনের ও পারে জয়ের হাসি পিয়ার কণ্ঠে। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলা ছবির প্রযোজক-পরিচালক-পরিবেশকদের কথা দিয়েছিলাম, সভাপতি হিসেবে ফিরে এলে বাংলা ছবির ডিজিটাল প্রোজেকশন চার্জ কমানোই আমার প্রথম লক্ষ্য হবে। আমি লক্ষ্যপূরণ করেছি। আমি তৃপ্ত।’’ এটা সংগঠনের সভাপতির বক্তব্য। প্রযোজক পিয়া কী বলছেন? তাঁর মতে, অবশেষে বাংলা ছবির সুদিন আসতে চলেছে। খরচ কমানোর ফলে বাংলা ছবির সংখ্যা বাড়বে। যাঁরা নতুন প্রযোজক তাঁরা এ বার ছবি বানাতে এগিয়ে আসবেন। প্রায় একই কথা উইন্ডোজ় প্রযোজনা সংস্থার অন্যতম কর্ণধার শিবপ্রসাদের। তিনি বলেছেন, ‘‘সত্যিই খুশির খবর। ইউফোর এই পদক্ষেপ প্রশংসার। বাকি সংস্থাও একই পথে হাঁটলে সবচেয়ে বেশি খুশি হব। ’’
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন ক্যামেলিয়া প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার নীলরতন দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন প্রচারের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রোজেকশন চার্জের কারণে আলাদা খরচ হত ৪৫ থেকে ৫০ লক্ষ। বড় প্রযোজনা সংস্থা এই খরচ বহন করতে পারে। মুশকিলে পড়ে নতুন বা ছোট প্রযোজনা সংস্থা। খরচের বহরের কারণেই অনেক সময় ছবিমুক্তির সময় প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা কমিয়ে দিতে বাধ্য হতেন তাঁরা। এ বার এক লাফে সেই খরচ কমে গেল।’’ এই খরচ কমানোয় সত্যিই কতটা লাভ হচ্ছে বাংলা বিনোদন দুনিয়ার? প্রশ্ন রাখা হয়েছিল দাগ ক্রিয়েটিভ প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধার রানা সরকারের কাছে। তাঁর যুক্তি, ‘‘কলকাতার যে কোনও প্রেক্ষাগৃহে হিন্দি বা দক্ষিণী ছবির ডিজিটাল চার্জ যা দিতে হয় বাংলা ছবির মতো ধুঁকতে থাকা একটি ইন্ডাস্ট্রিকেও টাকা কেন বেশি দিতে হবে, এই প্রশ্ন অনেক দিন আগে তুলেছিলাম। সেই নিয়ে অনেক আন্দোলন হয়েছে। আমরাও অনেক চেষ্টা করেছি যাতে চার্জ কমানো হয়। এত দিন হয়নি। এ বার হল। ইউফোর মতো বাকি সংস্থা এগিয়ে এলে ভাল।’’
খুশি ধাগা প্রযোজনা সংস্থার শুভঙ্করও। তাঁর সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি ‘এটা আমাদের গল্প’ ভাল ব্যবসা করেছে। প্রযোজকের কথায়, ‘‘অর্থের অভাবে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক পরিবেশককে ছবি দিতে পারিনি। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান হল। সত্যিই এটার প্রয়োজন ছিল।’’ প্রযোজকদের পাশাপাশি খবর শুনে সন্তুষ্ট পরিবেশকেরাও। নবীনা প্রেক্ষাগৃহের মালিক নবীন চৌখানির যুক্ত, ‘‘অর্থের এই চাপ পরোক্ষ ভাবে বহন করতে হয় হলমালিকদেরও। ডিজিটাল প্রোজেকশন চার্জ কমে যাওয়া মানে এ বার আমরাও নিশ্চিন্ত। প্রযোজকেরাও তাঁদের ছবির সংখ্যা এবং প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা বাড়াতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy