নুসরত, আজ তোর জন্মদিন। ভাবছি সেই ম্যাঙ্গো কেকটা পাঠাব তোকে? নিশ্চয় মনে আছে তোর, আগের বছর যখন তুই মা হওয়ার খবর দিলি আমাদের, তার বেশ কিছু দিন পর থেকেই আমি আর শ্রাবন্তী তোকে ঘিরে থাকতাম। কখনও তোর বাড়িতে আড্ডা, কখনও আমার বাড়িতে। এ ভাবেই তোর সেই লড়াইয়ে তোর পাশে থেকে আনন্দ করে সময়টা কাটাতে চাইতাম। এই মা হওয়ার সময়টাই তো সবচেয়ে উপভোগের মুহূর্ত।
সে রকমই একসঙ্গে থাকা এক রাতে আমরা তিন জন গল্প করছি আমার বাড়িতে। হঠাৎ দেখলাম, তোর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল! তুই রেগে সটান যশের সঙ্গে বাড়ি ফিরে গেলি। তখন চারপাশে তোকে নিয়ে এত রকম মন্তব্য...
আমি জানি মা হওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে তোকে কী ভয়ানক সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে! আমি অবাক হয়ে দেখতাম। কী অসম্ভব মনের জোর তোর।
তুই যখন মা হচ্ছিস, ঠিক সেই সময়েই কয়েক দিনের ব্যবধানে আমার বোন মা হয়েছে। বাড়িতে দেখতাম বোন এত নিরাপত্তার মধ্যে তো, তা-ও ওই সময়ে ওর কত রকমের অসুবিধে হচ্ছে। অথচ তুই তখন ঝড়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিস! যখন তোর সবচেয়ে শান্ত থাকার সময়, তখন বাইরের পরিবেশ তোকে অশান্ত করতে চাইছে।
সংবাদমাধ্যম তোর মা হওয়ার খবর নিয়ে উত্তাল। শুধুই কি উত্তাল? না! ট্রোলিং চলছে। যা নয় তাই লেখা হচ্ছে। অথচ তুই সব সামলাচ্ছিস। আমার বোনের সঙ্গে পুরো পরিবার আছে। তোর পাশে যশ ছাড়া আর কেউ নেই। যত ট্রোলিং বাড়ত, দেখতাম তোর জেদ তত বাড়ছে। নিজের মনের কথা শুনে চলার জেদ। নিজেকে ভাল রাখার জেদ।
এই ম্যাঙ্গো কেকের কথা প্রসঙ্গে কত কথা লিখে ফেললাম। উফ! সেই রাতে রাগ করে চলে তো গেলি। ওমা! মাঝ রাতে ফোন করে বলছিস, তুই আমার বাড়ির নীচে! তুই ম্যাঙ্গো কেক না খেয়ে কিছুতেই যাবি না। তুই ম্যাঙ্গো কেকটা এনেছিলি। রেগে চলে গিয়েছিলি বলে আমরা কেউ খাইনি। যশ সে দিন তোকে রীতিমতো কোলে করে মাঝ রাতে আমার বাড়ি নিয়ে হাজির! মা হওয়ার সময়ে কোনও খাবার নিয়ে তো পাগলামি চলেই আমি জানি। আমরা সব্বাই অবশেষে মাঝ রাতে সেই ম্যাঙ্গো কেক খেয়েছিলাম। এমনই তুই নুসরত। নিজের ভাবনাকে পূর্ণতা দিতে দিন-রাতকে একসঙ্গে জয় করে এগিয়ে যাস।
সংবাদমাধ্যমে এক বার আচমকা আমার, শ্রাবন্তী আর তোর একটা ঘরোয়া আড্ডার ছবি বেরিয়েছিল। আমরা তো দেখে অবাক! এই ছবি ভীষণ ব্যক্তিগত, কী করে প্রকাশ হল! বিরক্ত হয়েছিলাম। অথচ তোকে দেখেছি শান্ত, অবিচল।
কখনও সে ভাবে বলিনি তোকে। কিন্তু দুর্যোগের রাতে চোখের সামনে যখন দেখেছি তুই নিজের লক্ষ্যে স্থির, তখন মনে হয়েছে তুই সাক্ষাৎ মা দুর্গা! দশ হাত দিয়ে নিজের সব ঝঞ্ঝা সামলে জীবন থেকে বিপদ, বিষণ্ণতা মুক্ত করছিস!
তোকে আমার এক বোন বলেই জানি আমি। আমার পরিবার তুই। মা হওয়ার সময়ে বোনের প্রয়োজন মতো যা কিনতাম, তোকেও সেই এক জিনিসই পাঠাতাম। মনে হত তোর ওই সময়ে এই জিনিসটাই প্রয়োজন হবে।
আজ অন্য এক নুসরতের কথাও আনন্দবাজার অনলাইনের পাঠকদের বলতে চাই। যে বিষয়ে আমি জানি, নুসরত নিজে কিছুই বলবে না। আমি নিজের চোখে দেখেছি মানুষের প্রতি ওর কী অদম্য টান। জীবনের বিশেষ দিনগুলোয় ও এমন কিছু মানুষের কাছে চলে যায়, যাদের কেউ কোথ্থাও নেই। ওদের কাছে গিয়ে দেখেছি এক বার ও অঝোরে কাঁদছে। তার পরেই দেখলাম ওই অসহায় বাচ্চাগুলোর জন্য ও যা দেবে বলেছিল, তার চেয়ে দশ গুণ বেশি দিয়ে এল! ওর মতো ভরিয়ে দিতে খুব কম মানুষ পারে।আর এই দেওয়া ও কোনও দিন কারও কাছে প্রকাশ করবে না।
নুসরত তুই অসংখ্য মেয়ের কাছে অনুপ্রেরণা। সমাজকে তোয়াক্কা না করে লড়াই করে মন জিতে নিস তুই। এই জন্মদিনে জানি না দেখা হবে কি না। তোর বাচ্চা আছে। আমার বাড়িতেও বোনের বাচ্চা। করোনার জন্য দূরেই থাকব। ফোনে প্রচুর আড্ডা হবে। তবে তোর হাতের গুলাটি কবাবটা খেতে খুব ইচ্ছে করছে! কী ভাল রান্না করিস তুই! জানি তোর জন্মদিন তবুও... আবদার করলেই তুই খুশি হয়ে রান্না করে খাওয়াবি। ওই যে বললাম, তুই ভরিয়ে রাখতে জানিস।
তোর পৃথিবীকে এমন সুন্দর করেই ভরিয়ে রাখিস।