Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Khufiya Movie Review

কেমন হল তব্বুর ‘খুফিয়া’? বিশাল ভরদ্বাজের জাদুর ছোঁয়া রইল কি? পড়ুন আনন্দবাজার অনলাইনে

প্রাক্তন ইন্টেলিজেন্ট অফিসার অমর ভূষণের লেখা ‘এস্কেপ টু নোহোয়্যার’ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে বিশাল ভরদ্বাজ তৈরি করেছেন ‘খুফিয়া’। আগের মতো এই রান্না কি তিনি জমাতে পারলেন?

(বাঁ দিক থেকে) ওয়ামিকা গাব্বি, তব্বু এবং আলি ফজল।

(বাঁ দিক থেকে) ওয়ামিকা গাব্বি, তব্বু এবং আলি ফজল। ছবি: সংগৃহীত।

শ্রুতি মিশ্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৭
Share: Save:

চারদিকে পুজো পুজো ভাব। এমন সময়ে যদি কেউ প্লেটে সাজিয়ে একটি মুচমুচে স্পাই-থ্রিলার ঘরানার ছবি পরিবেশন করে ফেলেন, তা হলে সেই সুযোগ একেবারেই হাতছাড়া করা উচিত নয়। তার উপর আবার বিশাল ভরদ্বাজ পাকা রাঁধুনি। তব্বু, আলি ফজ়ল, ওয়ামিকা গাব্বি এবং অতুল কুলকার্নির মতো তাবড় সব তারকা নিয়ে যখন ছবি বানাচ্ছেন, তখন সেই ছবি জুড়ে দর্শকের প্রত্যাশা জন্মানো অস্বাভাবিক কিছু নয়। বৃহস্পতিবার নেটফ্লিক্স ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে স্পাই-থ্রিলার ঘরানার ছবি ‘খুফিয়া’। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন বিশাল।

‘মকবুল’, ‘হায়দর’, ‘কমিনে’, ‘সাত খুন মাফ’, ‘ওমকারা’-র মতো হিট ছবি উপহার দিয়েছেন বিশাল। তাই তাঁর দক্ষতার উপর দর্শকের আস্থা রয়েছে বৈকি। কিন্তু এই ছবি কি অন্য সুরে গান বাঁধল? বিশালের সেই ম্যাজিক কি ফিরল?

Tabbu in Khufiya movie

‘খুফিয়া’ ছবিতে কৃষ্ণা মেহরা ওরফে কেএম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তব্বু। ছবি: সংগৃহীত।

প্রাক্তন ইন্টেলিজেন্ট অফিসার অমর ভূষণের লেখা ‘এস্কেপ টু নোহোয়্যার’ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ‘খুফিয়া’-র চিত্রনাট্য বুনেছেন বিশাল। প্রয়োজনে নিজের মর্জি মতো অদলবদল করতেও দু’বার ভাবেননি তিনি। ছবিতে কৃষ্ণা মেহরা ওরফে কেএম চরিত্রে অভিনয় করেছেন তব্বু। ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কর্মী সে। অক্টোপাস নাম ধারণ করে তার জুনিয়র সহকর্মী একটি মিশনে গিয়ে প্রাণ হারায়। গল্পের শুরু এখান থেকেই।

ছবি এগোতে থাকে, পাশাপাশি একের পর এক চরিত্র এবং প্লট-সাবপ্লটের আবির্ভাবও হতে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অন্য দেশকে পাচার করা থেকে শুরু করে মা-ছেলের কখনও মিষ্টি কখনও তেতো সম্পর্ক, আবার শাশুড়ির গতেধরা নালিশের স্বাদ— সবই রয়েছে ‘খুফিয়া’য়।

Ali Fazal

‘খুফিয়া’ ছবির দৃশ্যে বলি অভিনেতা আলি ফজ়ল। ছবি: সংগৃহীত।

তব্বু এই ছবিতে যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা অমর রচিত মূল উপন্যাস অনুযায়ী আদতে এক পুরুষ চরিত্র। কিন্তু চিত্রনাট্য আরও মজবুত করতে বিশাল সে চরিত্রের কাঠামো বদলেছেন। এর আগে ‘মকবুল’ এবং ‘হায়দর’ ছবিতে তব্বুর সঙ্গে কাজ করেছেন বিশাল। তব্বুর ভিতর থেকে সেরা অভিনয় নিঙড়ে বার করে আনতে পারেন বিশাল। তা আগেও হয়েছে, ‘খুফিয়া’তেও এর অন্যথা হল না। ছবি জুড়ে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি।

তবে এই ছবিতে তব্বুর পাশাপাশি নজর কেড়েছেন ওয়ামিকা। ‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করে আগেই নিজের অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। বিশালের সঙ্গে যে এই তার প্রথম কাজ তা একেবারেই নয়। বিশালের পরিচালনায় ‘ফুরসত’ নামে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি এবং ‘চার্লি চোপড়া অ্যান্ড দ্য মিস্ট্রি অফ সোলাং ভ্যালি’ ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেছেন ওয়ামিকা। ‘খুফিয়া’ ছবির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনবদ্য অভিনয় করেছেন তিনি। আলি ফজ়লের কথা আলাদা ভাবে না বললেই নয়। সাবলীল অভিনয় তাঁর। যেন রবি মোহনের চরিত্র আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছিল তাঁকে।

Wamika Gabbi

‘খুফিয়া’ ছবির দৃশ্যে ওয়ামিকা গাব্বি। ছবি: সংগৃহীত।

ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা দিয়েছে অতুল কুলকার্নি, নবনিন্দ্রা বহল, শতাফ ফিগার প্রমুখ তারকাকে। সকলেই নিজেদের চরিত্রে যথাযথ অভিনয় করেছেন। ‘খুফিয়া’-য় পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন। পর্দায় তাঁর উপস্থিতিটুকুই যেন মনোমুগ্ধকর, নজরকাড়া।

চরিত্র ফুটিয়ে তোলার জন্য তা প্রয়োজনও ছিল বটে। সে কারণেই হয়তো বাঁধনকে বেছে নিয়েছেন বিশাল। বাংলাদেশি বলেই কি বাঁধনের হিন্দি উচ্চারণের মধ্যে বাংলা ভাষার টান রয়ে গেল? যদিও বাংলার ভাব থাকা হিন্দির ব্যবহারই তাঁর চরিত্রটিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।

Azmeri Haque Badhon

‘খুফিয়া’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে নজর কেড়েছেন বাংলাদেশি অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন। ছবি: সংগৃহীত।

বিশাল সত্যিই খাসা রান্না করেন। একটি পদকে কী ভাবে আরও সুস্বাদু করে তুলতে হয় তা বিশাল জানেন। ‘খুফিয়া’ পরিচালনায় তিনি মশলাপাতি ঠিকঠাক বেছে আনলেন ঠিকই, কিন্তু রান্না করার সময় যেন পরিমাণ মতো ঢালতে পারলেন না। তারকাদের অভিনয়ে কোনও খামতি নেই, কিন্তু ছবির দৈর্ঘ্য অতিরিক্ত লম্বা হওয়ায় অধিকাংশই মাটি হয়ে গেল। স্পাই থ্রিলার ঘরানার ছবিতে বার বার এত গানের ব্যবহার অহেতুক মনে হয়েছে। চিত্রনাট্যের বুনন কোথাও কোথাও শিথিল হয়ে পড়ায় উত্তেজনার টান টান ভাবেও তাল কেটেছে।

ভুলভ্রান্তি একটু মন দিয়ে লক্ষ করলেই নজরে পড়ার মতো। ছবিতে বার বার বলা হল, অক্টোপাস নাকি পর পর তিন বার হাঁচি দেয়। কিন্তু, একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে মাত্র এক বার হাঁচি দিল? খুব কম জায়গায় হলেও রবির মায়ের চরিত্রে কোথাও কোথাও অতিনাটকীয়তা ধরা দিয়েছে। ছবিতে গানের বাণী লেখার দায়িত্বে ছিলেন গুলজার এবং বিশাল নিজে। বিশালের স্ত্রী রেখা ভরদ্বাজের কণ্ঠে একটি গান ছাড়া বাকি কোনও গানই মনে দাগ কাটার মতো নয়। দৃশ্যের মাঝেমাঝে যদিও পুরনো হিন্দি গানগুলো শুনতে মন্দ লাগে না।

সব মিলিয়ে বিশালের ম্যাজিকের কোথাও যেন অভাব থেকে গেল ছবিতে। তা বলে কি ছবিটি পাতে দেওয়ার যোগ্য নয়? তা কেন হবে? ভাল অভিনয় এবং বিশেষ করে তব্বুর মুখে বাংলা সংলাপ শোনার জন্য এই ছবি এক বার অন্তত দেখা যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Tabbu Ali Fazal Wamika Gabbi Vishal Bhardwaj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy