রিয়া চক্রবর্তী।
মুম্বইয়ের মাটিতে এখন অত্যন্ত তৎপর বিহার পুলিশ। সুশান্ত-কাণ্ডের তদন্তে দিন দুয়েক আগেই মুম্বই এসে পৌঁছেছে বিহার পুলিশের সাত সদস্যের দলটি। রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। একই সঙ্গে রয়েছে যত দ্রুত সম্ভব তদন্তের জাল গোটানোর তাগিদ।
গত রবিবার অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতের বাবা কেকে সিংহ ভারতীয় দণ্ডবিধির মোট ছ’টি ধারায় ছেলের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর নামে পটনার রাজেন্দ্রনগর থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের জেরেই তদন্ত শুরু করেছে বিহার পুলিশ। এই কাজ এখন কোন পর্যায়ে এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক।
সুপ্রিম কোর্টে রিয়ার আবেদন
মঙ্গলবার বিহার পুলিশের দলটি মায়ানগরীতে ঢোকার সময়েই রিয়ার মুম্বইয়ের বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছিল নামজাদা আইনজীবী আনন্দিনী ফার্নান্ডেজ এবং সতীশ মানশিন্ডেকে। সতীশ আবার সলমন-সঞ্জয়দের হয়েও মামলা লড়েছিলেন। খবর আসছিল, রিয়া নাকি আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন। তবে তা করেননি রিয়া। সুপ্রিম কোর্টে তিনি আবেদন করেন, সুশান্ত মৃত্যুর তদন্ত যেন পটনা থেকে মুম্বইয়ে নিয়ে আসা হয়। সূত্রের খবর, এর পরেই নাকি রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে মুম্বইয়ের বাড়িতে রিয়ার দেখা পায়নি বিহার পুলিশের দলটি।
সিবিআই তদন্তের দাবি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
এ দিকে সুশান্ত-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে যে জনস্বার্থ মামলা হয়েছিল(পিআইএল),বুধবার সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়। মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখও জানান, আপাতত সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই। মহারাষ্ট্র পুলিশই এর তদন্ত করবে। এ দিন সুশান্তের বাবা সুপ্রিম কোর্টে ক্যাভিয়ট জমা করেন। আর্জি জানান, রিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্তে আসার আগে আদালত যেন তাঁর কথাও শোনেন।
তৎপর বিহার পুলিশ
বিস্ফোরক সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা
এরই মধ্যে সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা গুরুতর অভিযোগ আনেনরিয়ার বিরুদ্ধে। সুশান্তের সঙ্গে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট শেয়ার করে অঙ্কিতা জানান, সুশান্ত তাঁকে বলেছিলেন রিয়ার সঙ্গে তিনি খুশি নেই। নানাভাবে সুশান্তকে কষ্ট দিতেন রিয়া। সূত্রের খবর, আজ আবারও বিহার পুলিশ বয়ান নিতে পারে অঙ্কিতার।
ব্যাঙ্কে হানা বিহার পুলিশের
এফআইআরে সুশান্তের বাবা রিয়ার বিরুদ্ধে সুশান্তের এক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন। তিনি অভিযোগপত্রে লেখেন, একটি অ্যাকাউন্টে সুশান্তের ১৭ কোটি টাকা ছিল। সেই টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা অন্য একটি অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয়। যদিও দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সুশান্তের কোনও যোগাযোগ ছিল না বলেই দাবি অভিনেতার বাবার। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই আজ বান্দ্রার সেই বেসরকারি ব্যাঙ্কে হানা দেয় বিহার পুলিশ। যে ব্যাঙ্কে সুশান্তের অ্যাকাউন্ট ছিল এবং যে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে তাঁর টাকা সরানো হয়েছে— দু’টি ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের সঙ্গেই কথা বলেন তাঁরা।
সুশান্তের রাঁধুনিকে জেরা
মুম্বই পুলিশ আগেই জেরা করেছিল সুশান্তের পরিচারককে। কিন্তু বিহার পুলিশ বৃহস্পতিবার আরও এক বার সুশান্ত সিংহ রাজপুতের রান্নার লোককে জেরা করে। ঘটনার সময় যিনি সুশান্তের ফ্ল্যাটেই ছিলেন এবং সকালে সুশান্তকে বেদানার রস খেতে দিয়েছিলেন। জেরায় সেই ব্যক্তি জানিয়েছেন, বার বার ডাকা সত্ত্বেও সুশান্ত দরজা না খোলায় তিনি নিরাপত্তারক্ষীকে খবর দেন। খবর দেন তালা খোলার লোককেও। তালা খোলার লোক এসে দরজা খুলে সুশান্তকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান।
সত্যিটা তা হলে কোথায় লুকিয়ে? রহস্য ক্রমেই জট পাকাচ্ছে
রিয়ার সঙ্গে সুশান্তের ঝগড়া
বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে সুশান্তের দিদি মিতু সিংহরও। মিতু মুম্বইতেই থাকেন। সুশান্তের সঙ্গে ঝগড়া করে রিয়া তাঁর ফ্ল্যাট ছাড়লে মিতু চার দিনের জন্য এসে থেকেছিলেন ভাইয়ের কাছে। কিন্তু ১২ জুন মিতু তাঁর বাড়িতে ফিরে যান বলে জানিয়েছেন পুলিশকে। কারণ হিসেবে বলেন, তাঁর বাচ্চা ছোট। তার ঠিক দু’দিন পরেই আত্মহত্যা করেন সুশান্ত।
কাঠগড়ায় মুম্বই পুলিশ
সুশান্তের পরিবার এবং আইনজীবীর নিশানায় মুম্বই পুলিশও। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে রাজপুত পরিবারের আইনজীবী বিকাশ সিংহ জানিয়েছেন, ‘‘আমার বিশ্বাস রিয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এই চেষ্টা চলছে মুম্বই পুলিশের মধ্যে থেকেই। কোনও একজন অফিসার রিয়াকে সাহায্য করছেন৷তাঁর এমন মনে হওয়ার কারণ হিসেবে বিকাশ আরও বলেছেন, ‘‘যদি রিয়া সুপ্রিম কোর্টেই আবেদন করেন, তা হলে তিনি সিবিআই তদন্ত চাইতেন৷ পটনায় দায়ের হওয়া এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ ও মুম্বইয়ে এই মামলা নিয়ে আসার আবেদন জানালেন কেন? এর থেকেই পরিষ্কার, মুম্বই পুলিশের ভিতর থেকেই কেউ তাঁকে সাহায্য করছে।’’
সত্যিটা তা হলে কোথায় লুকিয়ে? রহস্য ক্রমেই জট পাকাচ্ছে। সুবিচার পাওয়ার আশায় সুশান্তের ভক্তেরা তাকিয়ে রয়েছেন আদালতের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy