ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
কলকাতায় তাঁর কাজের ক্ষেত্র ক্রমশই ছোট হয়ে আসছিল। মনে হয়েছিল এখানে থাকলে হয়তো ফুরিয়ে যাবেন সুমন মুখোপাধ্যায়।
এ কি অভিমান?
মুম্বইতে বসে বললেন, ‘‘কার ওপর অভিমান করব বলুন তো? নাটক বা চলচ্চিত্র জগতের বন্ধুরা তো আমার কাজ নিয়ে ভাল বা খারাপ কোনও মন্তব্যই করেন না। বেশির ভাগই আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ভয় পান। পরিস্থিতি এমনই যে, আমার সঙ্গে ছবি তুললে তাঁদের কাজের বাজার পড়ে যাবে। কলকাতায় একঘেয়ে লাগছিল। মুম্বইতে কাজের সুযোগ অনেক বেশি। তাই এলাম। ’’
আটচল্লিশ বছর বয়সে এসে এমন সিদ্ধান্ত কি একটু ঝুঁকির হয়ে গেল না? মুম্বইতে একটি বড় কাজের জন্যই ঘাঁটি গেড়েছেন সুমন মুখোপাধ্যায়। কাজের বিষয়ে এখনই খোলাখুলি কিছু বলতে নারাজ তিনি। জানালেন, নাটক এবং চলচ্চিত্র দুটো মাধ্যম নিয়ে এই বার কাজে নামছেন। আপাতত মুম্বইয়ে খার গেস্ট হাউসই তাঁর ঠিকানা। খুব শিগগিরই সেভেন বাংলো-তে বাড়ি নিয়ে থাকবেন।
আর স্বস্তিকা? দূরত্ব বাড়লে সম্পর্ক মুছে যাবে না তো? উত্তরে সুমন স্পষ্ট বললেন, ‘‘এই বিশ্বায়নের জমানায় মুম্বই-মেচেদা-মেলবোর্ন যেখানেই থাকি সম্পর্ক, মানুষ বা তার কাজ তো বদলাতে পারে না।’’
বাড়ি সাজানোর দায়িত্বটা কিন্তু তিনি স্বস্তিকার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন। জানালেন, ‘‘মুম্বইতে বাড়ি বদল করতে আমার খুব একটা অসুবিধে হবে না। সে অর্থে আমার কোনও দিনই সম্পত্তি বলে তো কিছু ছিল না। এখন আমার পোশাক থেকে বাড়ির পর্দার রং সবটাই স্বস্তিকার রুচির ওপর ছেড়ে রেখেছি। দুটো ক্ষেত্রেই আমাদের ‘মিনিম্যালিস্টিক’ অ্যাপ্রোচ জীবনটাকে সহজ সরল করে নিতে শিখিয়েছে।’’ স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ও খুশি সুমনের সিদ্ধান্তে। বললেন,
‘‘ ওর কাজের প্রসারের জন্য মুম্বইটাই ঠিক। কলকাতা তো অনেক দিন হল। আর আমারও মুম্বইয়ে কাজ করতে সুবিধা হবে। ’’
কলকাতায় শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততা, মেয়ে আর বাবার দায়িত্ব ছেড়ে স্বস্তিকার যে মুম্বইতে যাওয়া সম্ভব নয় সেটাও জানিয়ে দিলেন সুমন। ছেলের সঙ্গে যদিও গত এক বছরে সম্পর্কটা অনেক ম্যাচিওর করে গিয়েছে তাঁর। একসঙ্গে টানা থাকা তো হতই না। সেই অভ্যাসটাই থেকে গিয়েছে।
কিন্তু ‘রাজা লিয়র’-এর কী হবে? মুম্বই থেকে ‘রাজা লিয়র’ করা সম্ভব নয়। সেটা জেনেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর আপাতত ‘রাজা লিয়র’-এর শো বন্ধ রাখছেন সুমন। বললেন, ‘‘কলকাতায় থিয়েটারের অবস্থা খুব খারাপ। মুম্বইতেও থিয়েটার নিয়ে রাজনীতি কম নয়। কিন্তু সুবিধা হল এখানে অনেকগুলো ক্যাম্প। কলকাতার মতো মনোপলিস্টিক পরিবেশ নয়।’’ মুম্বইয়ের পৃথ্বী থিয়েটারের আধিপত্যের কথাও জানেন তিনি। জীবনে অনেক সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে, কিন্তু কখনও কাজ থামাননি। বলছিলেন, ‘‘অ্যাকাডেমির পরিচালন সমিতি হঠাৎই অসহযোগিতা করায় বেরিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তখনও ‘যারা আগুন লাগায়’ করেছি। এখন যদিও নির্বাচনের পর নতুন কমিটি এসেছে, পরিস্থিতি বদলেছে। যেখানেই যাই না কেন ওই মঞ্চে সব সময়ই নাটক করতে চাই। ওই মঞ্চই তো সুমন মুখোপাধ্যায়কে তৈরি করেছে।’’
আরব সাগরের তীরে বসে আজও অ্যাকাডেমির নাট্যমঞ্চ, কলকাতা হাতছানি দেয় তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy