অনিন্দ্য বেশে সুদীপ
প্রশ্ন: রোহিত-শ্রীময়ীর বিয়ে আটকাতে অনিন্দ্য শেষে আত্মহত্যা করল!
সুদীপ: (হা হা হাসি) রোহিত-শ্রীময়ীর বিয়ে আটকাতে অনিন্দ্য শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার চেষ্টা করল। তবে অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই। বহু বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। আমি কিন্তু চিত্রনাট্য শুনে অবাক হইনি। অনিন্দ্য রক্ত-মাংসের মানুষ। তার উপর দুর্বল মানসিকতার। এই আচরণ তাকেই মানায়।
প্রশ্ন: সবাই বলছে, বিয়ের সাজে শ্রীময়ী নাকি অপরূপা। ‘অনিন্দ্য’ আর সুদীপ কী বলছেন?
সুদীপ: (হেসে ফেলে) সুদীপ বলছে, শ্রীময়ী সুন্দরী। তাই সাজলে ওকে সবার ভাল লাগতে বাধ্য। অনিন্দ্য যদিও দেখতে পায়নি। কারণ, ওর সেই সময় অভিনয় ছিল না। ফলে, সেটে আসেনি। তবে দূর থেকেই বলছে, ‘ভীষণ বাজে দেখতে লাগছিল’...!! (হাসি)
প্রশ্ন: কেন অনিন্দ্য আত্মহত্যার চেষ্টা করল?
সুদীপ: আমি বলব আত্মশ্লাঘায় আঘাত লেগেছে, তাই। এবং অবশ্যই অধিকারবোধও এর সঙ্গে জড়িত। শ্রীময়ী দূরে থাকলেও আদতে এত দিন সে অনিন্দ্যরই ছিল। রোহিত সেনের সঙ্গে বিয়ে মানে পাকাপাকি অনিন্দ্য মুছে গেল তার জীবন থেকে। এটা কোনও পুরুষ মেনে নিতে পারে? পাশাপাশি, নিজেকে নিয়ে সারাক্ষণ সে অপরাধবোধে ভুগছে। যা মন্দ ঘটছে তার জন্য নিজেকে দায়ী করছে। এই অবদমিত পুরুষ সাধারণত চিৎকার করে। অশান্তি করে। খারাপ কথা বলে। ক্ষতি করার চেষ্টা করে। অথবা নিজের ক্ষতি করে অন্যের সুখে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনিন্দ্য সেটাই করেছে। বাকি রইল পুরনো প্রেম। অনিন্দ্য এর আগে নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে কথা স্বীকারও করেছে। শ্রীময়ীকে ভালবাসে সে কথাও জানিয়েছে। তবে আত্মহননেন চেষ্টা সেই ভালবাসার কারণ নয়। নিজের নারী অন্য পুরুষের ঘরনি হচ্ছে সেটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না।
প্রশ্ন: শ্রীময়ী তা হলে দেবী? সে নিজে দাঁড়িয়ে অনিন্দ্য-জুনের বিয়ে দিয়েছে...
সুদীপ: শ্রীময়ী দেবী নয়। সে আসলে অনিন্দ্য-জুনের বিয়ে দিয়ে স্বামীকে শাস্তি দিয়েছে। সংলাপে সে কথা শ্রীময়ী বলেওছে। অনিন্দ্য শরীরী আকর্ষণে জুনের কাছাকাছি এসেছিল। ভালবেসে নয়। তাই চির জীবনের জন্য তাকে জুনের সঙ্গে বেঁধে দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নেওয়া শ্রীময়ীর এক ধরনের শাস্তি। সমাজে, অন্দরমহলে এই ধরনের নীরব প্রতিবাদীও আছেন। শ্রীময়ী তাঁদের প্রতিনিধি। আবার সংসারে এমনও নারী আছেন, যিনি সংসারের সব ঝক্কি সামলে তার পর নিজের কথা ভাবেন। আমার মা যেমন তিন তলা বাড়ি একা হাতে ঝাড়পোঁছ করে, আমাদের দেখ ভাল করার পর সেলাই নিয়ে বসতেন। শ্রীময়ী আমার মাকে মনে করায়।
প্রশ্ন: রক্ত-মাংসের এই অনিন্দ্যকে কিন্তু দর্শকও বুঝল না! তাঁরা তাকে ঘৃণা করে। বদলে রোহিত সেন-কে সবাই চান। খারাপ লাগা বা সূক্ষ্ম ঈর্ষা হয়?
সুদীপ: বহু বছর ধরে অভিনয় দুনিয়ায় আছি তো! বলতে পারেন, ঈর্ষার ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছি (গলা ছেড়ে হাসি)। আমিও অঢেল প্রশংসা পেয়েছি ‘এরাও শত্রু’, ‘ব্যোমকেশ’, ‘প্রতীক্ষায় একটি ভালবাসা’, ‘কানামাছি’-র মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করে। যে কোনও ধারাবাহিকে অভিনেতারা একটি টিম। আমরা দর্শকদের প্রতিক্রিয়া উপভোগ করি। বুঝতে পারি, আমরা কোথাও বাস্তব হয়ে উঠতে পারছি বলেই নিন্দিত বা বন্দিত হচ্ছি।
প্রশ্ন: ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকে লীনা গঙ্গোপাধ্যায় দেখিয়ে দিলেন, মধ্যবয়স্ক নারীর দ্বিতীয় বিবাহ নিয়ে এ বার সমাজেরও সাহসী হওয়া দরকার?
সুদীপ: আমার মনে হয় সবার আগে নারীর প্রকৃত শিক্ষা আর স্বাবলম্বী হওয়া বেশি জরুরি। আমি সে কথা সবাইকেই বলি। কাউকে ভাললাগা, ভালবাসা বা বিয়ের আগে এক জন মেয়েকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তবেই সে প্রয়োজনে সব অবস্থার সঙ্গে যুঝে নিতে পারবে। শ্রীময়ী রোহিত সেনের সাহায্যে সাবলম্বী হওয়ার পরে কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে।
প্রশ্ন: আপনি বাস্তবে ‘অনিন্দ্য’ হলে স্ত্রীর দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতেন?
সুদীপ: সুদীপ মুখোপাধ্যায় ভীষণ উদার মানসিকতার। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই। অনিন্দ্য-র মতো দুর্বলচিত্ত নই। আমার ধারণা যখন কোনও মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তখনই সে দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই জায়গা থেকেই অনিন্দ্য শ্রীময়ীকে আটকাতে চেষ্টা করেছে। সুদীপ মুখোপাধ্যায় ‘অনিন্দ্য’র মতো সম্পর্কের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে না। সুদীপ নিজে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। লোকে বলে, তাঁর স্ত্রী দারুণ সুন্দরী। পৃথা নিজেও অবাক, আমার এত বন্ধু বাড়িতে আসেন। ওর সঙ্গে আড্ডা মারেন। তার পরেও আমি কী করে এত নিশ্চিন্তে থাকি! আমার পাল্টা প্রশ্ন, কেন ভয় হবে? তুমি সবাইকে কী ভাবে সামলাবে সেটা তোমার দায়িত্ব। এই কারণেই হয়তো সম্পর্ক নিয়ে আমি কোনও দ্বিধায় ভুগি না।
প্রশ্ন: এ দিকে নেটমাধ্যমে কটাক্ষ, অনিন্দ্য সেনগুপ্তের পরিবারের সবার দুটো করে বিয়ে, এর নাম স্বাধীনতা...!
সুদীপ: সবার, কার কার? অনিন্দ্য, ডিঙ্কার পর এখন শ্রীময়ী। ডিঙ্কার প্রথম বিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তাই সে সরে গিয়ে আবার সুখী হওয়ার চেষ্টা করেছে। সেটা অন্যায়? শ্রীময়ীও তাই। বাকি অনিন্দ্য। সে তো জুনকে বিয়েই করতে চায়নি! ওটা শ্রীময়ীর দেওয়া শাস্তি। এ ছাড়া আর কেউ তো দু’বার বিয়ে করেনি। আর লীনাদি কিন্তু মিম স্রষ্টাদের কথা ভেবে চিত্রনাট্য লেখেন না। তিনি নিজে যেটা দেখেন, বোঝেন সেটাই ধারাবাহিকে তুলে ধরেন। ফলে, লোকের মুখ আছে তারা বলবেই।
প্রশ্ন: সুদীপের দ্বিতীয় বিয়েও কি ভাল থাকার জন্যই?
সুদীপ: একেবারেই তা নয়। আমি প্রথম বিয়েতে খুবই সুখী ছিলাম। খুব ভাল বন্ধুত্ব ছিল আমাদের। হঠাৎই কিছু দুঃখজনক মুহূর্ত তৈরি হয়। যার জন্য আমরা বিচ্ছিন্ন। এবং দ্বিতীয় বিয়ে। গত ৬ বছর ধরে আমি আর পৃথা সংসার করছি। খুব ভাল আছি আমরা। প্রার্থনা করুন, আর যেন এই বন্ধন না ছেঁড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy