গল্প ছাড়া সিনেমা হয় না। অথচ গল্পকার বা চিত্রনাট্যকারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান, পারিশ্রমিক দিতে সবচেয়ে বেশি অনীহা। টলিউড ইন্ডাস্ট্রির ঘোলা জলে ঢিল মারলে নানা তরঙ্গে উঠে আসবে কত যে উদাহরণ! এ রকমই এক অভিযোগ তুললেন প্রয়াত লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের স্বামী প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। অভিযোগের তির পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের দিকে। লেখিকার উপন্যাস ‘অলীক সুখ’ নিয়ে ছবি করেছিলেন পরিচালকদ্বয়। সেই ছবির হিন্দি স্বত্ব বিক্রি করা হয়েছে। প্রদীপ মুখোপাধ্যায় সেই স্বত্বের টাকা দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি আইনি নোটিসও পাঠিয়েছেন শিবপ্রসাদ-নন্দিতার প্রযোজনা সংস্থা উইন্ডোজ়কে।
লেখিকার স্বামীর বক্তব্য, ‘‘আমার স্ত্রীর কাহিনি থেকে ছবি তৈরি হয়েছে। সেই ছবির রাইটস যদি বিক্রি করা হয়, তা হলে তার টাকা আমার স্ত্রীরও প্রাপ্য।’’ সুচিত্রা ভট্টাচার্য মারা যাওয়ার পরে তাঁর সব কিছুরই দাবিদার তাঁর স্বামী। ‘অলীক সুখ’-এর হিন্দি রাইটস ৮১ লক্ষ টাকায় বিক্রি করা হয় ২০১৭ সালে। সেই টাকার সুদ সমেত ১ কোটি টাকা দাবি করেছেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। সেই মর্মেই তিনি উইন্ডোজ়কে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। কিন্তু তিনি এত দিন চুপ ছিলেন কেন? প্রদীপের জবাব, তিনি সম্প্রতি বিষয়টি জানতে পেরেছেন।
এ নিয়ে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে, তিনি জানান ছবির ডাবিংয়ে রয়েছেন। পরে কথা বলবেন। যদিও পরে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
কাহিনি, চিত্রনাট্য নিয়ে টানাটানির এটাই একমাত্র উদাহরণ নয়। কিছু দিন আগে শিবপ্রসাদ আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন অতনু রায়চৌধুরী, লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এবং শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অভিযোগ, শিবপ্রসাদ-নন্দিতার ছবি ‘গোত্র’র কাহিনির সঙ্গে অতনু প্রযোজিত ‘সাঁঝবাতি’র মিল রয়েছে। যার পরিচালক লীনা-শৈবাল। এখানেই রয়েছে একটি টুইস্ট। অতনু রায়চৌধুরী একটা সময়ে শিবপ্রসাদ-নন্দিতার সংস্থা উইন্ডোজ়ের ছবির প্রেজ়েন্টার ছিলেন। পরে বেরিয়ে এসে নিজের প্রযোজনা সংস্থা খোলেন। শিবপ্রসাদের অভিযোগ, অনেক দিন ধরেই তাঁরা এই ছবিটির পরিকল্পনা করছেন। অতনু ‘গোত্র’র কাহিনি জানতেন।
অতনুর ছবির প্রধান অভিনেতা দেব। শিবপ্রসাদ-নন্দিতা প্রথম যখন ‘গোত্র’ করবেন ভেবেছিলেন, তখন তাঁরা দেবের কাছেই যান। সেই মিটিংয়ে অতনু ছিলেন বলেই তাঁরা তাঁদের অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন। উইন্ডোজ় তাদের নোটিসে ‘সাঁঝবাতি’র কনসেপ্ট জমা দেওয়ার এবং শুটিং বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। যদিও ‘সাঁঝবাতি’র শুটিং চলছে। শিবপ্রসাদ-নন্দিতার পাঠানো আইনি নোটিসের জবাবও দিয়েছেন অতনু। সেখান তাঁর বক্তব্য, এক নিঃসঙ্গ মহিলার গল্প ‘সাঁঝবাতি’। এই কনসেপ্টে আগেও অনেক ছবি হয়েছে। এর উপরে কোনও কপিরাইট হয় না। ‘গোত্র’ মুক্তি পাচ্ছে অগস্ট মাসে, বছরের শেষে ‘সাঁঝবাতি’। তখনই বোঝা যাবে, কাহিনির গতি কোন দিক থেকে কোন দিকে গিয়েছে। নাকি সবটাই ভিত্তিহীন?
‘অলীক সুখ’ ছবির দৃশ্য
অভিযোগ, পাল্টা-অভিযোগের পালা নতুন নয়। এর আগে শোনা গিয়েছিল ‘প্রাক্তন’ ছবিটি সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘উজান’ কাহিনি থেকে নেওয়া। কিন্তু লেখিকা হিসেবে ছবিতে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি শিবপ্রসাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম ‘প্রাক্তন’-এর লেখিকা হিসেবে আমার স্ত্রীকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি কেন? শুধু ‘ঋণ স্বীকার’ করা হয়েছিল। ও অস্বীকার করে। ‘রামধনু’র রাইটসও বিক্রি করা হয়েছে বলে শুনেছি...’’
কিছু দিন আগে প্রতিম ডি গুপ্ত অভিযোগ করেছিলেন, ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’র চিত্রনাট্য তাঁর এবং ঋতুপর্ণ ঘোষের। সুতরাং তিনিও স্বীকৃতির দাবিদার। দীর্ঘ বিতর্কের পরে নির্মাতারা ছবির টাইটেল কার্ডে তাঁকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। পরিচালক পাভেল আঙুল তুলেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের দিকে। পাভেলের অভিযোগ ছিল, ‘সোনার পাহাড়’ ছবির গল্প তাঁর হওয়া সত্ত্বেও সেখানে তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
টলিউডের ক্ষুদ্র পরিসরে কাহিনি-চিত্রনাট্য নিয়ে এই দড়ি টানাটানির খেলা আদপে কিন্তু ক্ষতি করছে বাংলা ছবির ইন্ডাস্ট্রিরই। গল্পই যেখানে ছবির মেরুদণ্ড, সেখানে গল্পকারদের কি তাঁদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা উচিত?
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy