Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

‘সাঁঝের বাতি’র সেটের অন্দরে বিয়েবাড়ি, মাস্ক আর লিপস্টিকের চর্চা

সমস্ত চ্যানেলে যে ভাবে বিয়ের লগ্ন চলছে তাতে ‘সাঁঝের বাতি’-ই বা পিছিয়ে থাকে কেন? সেট জুড়ে তাই মিশমি-আর্যের বিয়ের গন্ধ। কখনও এক টেকে, কখনও রিহার্সের পরে টেক নিয়ে ক্যামেরাবন্দি করছেন পরিচালক লক্ষ্মণ ঘোষ।

দুই মাথা এক হলেই আড্ডা, ফিসফাস।

দুই মাথা এক হলেই আড্ডা, ফিসফাস।

উপালি মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৫৪
Share: Save:

সেট জুড়ে বিয়ের গন্ধ

সমস্ত চ্যানেলে যে ভাবে বিয়ের লগ্ন চলছে তাতে ‘সাঁঝের বাতি’-ই বা পিছিয়ে থাকে কেন? সেট জুড়ে তাই মিশমি-আর্যের বিয়ের গন্ধ। কখনও এক টেকে, কখনও রিহার্সের পরে টেক নিয়ে ক্যামেরাবন্দি করছেন পরিচালক লক্ষ্মণ ঘোষ।

শুধু চোখের মেকআপেই পুজো সারা

এর পরে ব্রেক। দুই মাথা এক হলেই আড্ডা, ফিসফাস। সেটাই হল ছোট্ট ব্রেকে। খুশি মুখে মেকআপ রুমে ‘মিশমি’ প্রিয়া মণ্ডল। সঙ্গে ‘পিসিশাশুড়ি’ সোহিনী সান্যাল। আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে আড্ডার শুরুতে সোহিনীর স্বীকারোক্তি: ‘‘আমার আসল নাম যা, চরিত্রের নামও তাই। ফলে, অভিনয়েও টুক করে দুষ্টুমি মিশিয়ে দিই। কেউ ধরতেই পারে না!’’
কে বলবে এঁরা নাকি অতিমারির ভয়ে স্টুডিয়োয় আসতে টেনশন করেন!

প্রিয়ার সংযোজন, যারা দৃশ্যে দুষ্টু হয় আদতে তারা ভাল লোক। তাই আড্ডা দিয়ে আরাম আছে। ‘পুজোয় চাই ডিজাইনার মাস্ক’, এটাই কি এ বারের শারদীয়ার স্লোগান? স্বছন্দে...একযোগে সায় হবু বউমা, শাশুড়ির। ‘‘মনটা কেমন হু হু করছে’’, জানালেন প্রিয়া। এ বারের পুজোয় প্রাণ নেই। শপিং নেই, প্যান্ডেল হপিং নেই, আড্ডা, খাওয়াদাওয়াও নেই। যেই মাত্র মন খারাপ হব হব করছে তখনই হাসি এল সোহিনীর কথায়, ‘‘এ বার মেকআপের হ্যাপাও নেই। মুখে ডিজাইনার মাস্ক। লিপস্টিকের ঝঞ্ঝাট নেই। শুধু চোখের মেকআপেই পুজো সারা!’’

জানা গেল, এই নিয়ে রিলে প্রিয়া ছ’বার বিয়ে করতে চলেছেন! বাস্তবের প্রথম বিয়ে কবে? হেসে গড়িয়ে পড়ে, ‘‘অতিমারির পর। মাত্র ৫০ জনকে নিয়ে বিয়েবাড়ি? মানতে পারছি না।’’

‘পুজোয় চাই ডিজাইনার মাস্ক’, এটাই কি এ বারের শারদীয়ার স্লোগান?

ইচ্ছে হলেও ভাল-মন্দ রেঁধে আনতে পারছি না

অন্য দিকে সেটের মধ্যেই আক্ষেপ ‘বড়মা’ বা ‘ঠাম্মি’ অনুরাধা রায়ের। তসরে জমাটি কাঁথা কাজের শাড়ি। গা মোড়া গয়না। অনুরাধার গ্ল্যামার যদিও বাড়িয়েছে ডিজাইনার মাস্ক! বলতেই ছোট্ট হাসি, ‘‘যা দিনকাল, এ ছাড়া উপায় নেই।’’ টেনশন হচ্ছিল শুটে আসতে? ‘‘একটু একটু’’, নির্দ্বিধায় স্বীকার। যখন দেখলেন প্রযোজক সংস্থা অ্যাক্রোপলিস স্যানিটাইজিংয়ে প্রচণ্ড কড়াকড়ি করছে তখন ভরসা পেয়ে আবার স্টুডিয়োয়।
নিজেকে ভাল রাখতে কী করছেন? লেবু মধুর জল বরাবরই খেতেন। এখন গরম জল, আদা কুচি, রসুন কুচি, হলুদ মেশানো দুধ বা জল খাচ্ছেন নিয়মিত। স্যানিটাইজারের ব্যবহার হচ্ছেই। শুট না থাকলেই মাস্ক। সেটে ছোটদেরও নজরে রেখেছেন। বাড়ি ফিরে স্নান করে পরিচ্ছন্ন হওয়া। পোশাক কেচে, ধুয়ে জীবাণুমুক্ত রাখা। সবই করছেন নিয়ম মেনে। শুধু একটাই ‘কিন্তু’, ‘‘রেঁধে খাওয়াতে ভীষণ ভালবাসি। সবাই আমার হাতের রান্না খেতেও ভালবাসেন। এখন সে সব বন্ধ।’’

আদরের চোটে আর্য ক্লস্টোফোবিয়ায় ভুগছে

ছেলের আবার বিয়ে দিচ্ছেন? প্রশ্ন শুনেই বিড়ম্বনার মধ্যেও হাসি মল্লিকা ওরফে জুন মাল্যর, ‘‘বড় ছেলে আর্য নয়নের মণি। গল্প অনুযায়ী আমরা জানি, ওর স্ত্রী চারু বেঁচে নেই। ছেলের মুখ যাতে ম্লান না হয় তাই আবার বিয়ে দিতেও রাজি।’’ অতিমারি আবহে সেটের ছেলেমেয়ের দিকে কি বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে? ‘‘ওটা আমার স্বভাব। বাড়িতে এর জন্য শুনতে হয়, ছেলেমেয়ের নাকি আমার জন্য ক্লস্টোফোবিয়া হয়! সেটে আর্য বলে, মা, জাস্ট চিল!’’
চ্যানেল রেটিংয়ে ক্রমশ এগিয়ে আসছে ‘সাঁঝের বাতি’। আর্যর বিয়ে কি পারবে নম্বর ওয়ান আনতে? ‘‘বলতে নেই, বারেবারে সময় বদলেছে ধারাবাহিকের। কিন্তু রেটিং কমেনি। দেড় বছরের লম্বা সফরের পরেও চ্যানেল রেটিং-এ আমরা দ্বিতীয়। তাই আশা, মিরাকল ঘটতে কতক্ষণ?’’ জানালেন জুন।

চশমার পাওয়ারে মাথা ঘুরছিল

দৃষ্টিশক্তি থেকেও দেখতে না পাওয়ার অভিনয়। তার উপর পঞ্জাবি মেয়ের ছদ্মবেশ। চোখে চশমা। আবার সামনের দাঁতটাই ফাঁকা। এটা দেখা গিয়েছিল মিশমি-চারুর যুগল ছবি তোলার সময়। এদিকে বরের আবার বিয়ে। সব মিলিয়ে দারুণ চাপে চারু?
‘‘চশমায় এত পাওয়ার ছিল যে সত্যিই কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। মাথা ঘুরছিল। শেষে প্রোডাকশনকে জানাতে বাধ্য হলাম। নইলে শিওর অন্ধ হয়ে যেতাম’’, ফাঁস করলেন দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়। বাকিটা তিনি এনজয় করছেন। বেশ বান্টি-বাবলির ছদ্মবেশ। এতদিন তো মুখটাও দেখাতে পারতেন না। আর বরের বিয়ে আবার হবে কিনা সেটা তাঁর থেকে ভাল কে জানে?
কিন্তু আগের মতো আড্ডা, দুষ্টুমি? আছে না কমেছে? ‘‘আছে আছে’’, জোর গলায় দাবি ‘চারু’র। ‘‘দূরত্ব মেনে দুষ্টুমি, লেগপুলিং সব কিছুই আছে। শুটের সময়েই দেখছিলেন না আমরা একে অন্যের পিছনে কী লাগছিলাম!’’

সেটে হচ্ছে স্যানিটাইজেশন

টুইস্ট না থাকলে দর্শক দেখবে কেন

দৃষ্টিশক্তিহীন আর্য-র সঙ্গে গ্রামের মেয়ে চারুর প্রেম, ভালবাসা, বিয়ের নিটোল গল্প বলছিলেন। অন্য ধারাবাহিকের মতো এখানেও কূটকচালি, শত্রুতা, আবার বিয়ে? ‘‘টুইস্ট না থাকলে দর্শক দেখবে কেন?’’ পাল্টা প্রশ্ন পরিচালক লক্ষ্মণ ঘোষের। বোঝালেন, দর্শক দুই ধরনের গল্প দেখতে আগ্রহী। এক, কে প্রকৃত দোষী?এই সাসপেন্স যে ধারাবাহিকে থাকে। দুই, দোষী পরিচিত। কিন্তু তার দুষ্টুমি পরিচিত নয়! এই দ্বিতীয় ধারাতেই জনপ্রিয় ‘সাঁঝের বাতি’।

দোষী-নির্দোষ মহিলারা যখন দল বেঁধে সেটে, তখন আপনার অবস্থা কী? শুনেই হাসি, ‘‘খুনসুটি হয়। আড্ডা হয়। কখনও সখনও হয়তো ঠোকাঠুকিও হয়। কিন্তু ট্যানট্রাম কেউ দেখান না! ডাকার আগেই সবাই সেটে হাজির। এখন এত নির্দেশ মানতে হচ্ছে। তবু হাসি মুখে কাজ হচ্ছে।’’

অনুরাধা রায়, জুন মাল্যর সংস্পর্শে এসে আজকের চারু, মিশমি, আর্যরা কতটা পারদর্শী হল? ‘‘অনেকটাই। প্রথমে টানা তিন মাস চারুকে ওর চরিত্র বোঝাতে হয়েছে। এখন বলার আগেই অভিনয়ে নিজেকে ফুটিয়ে তোলে’’, বললেন লক্ষ্মণ।
লাঞ্চ ব্রেকে সেট স্যানিটাইজড হচ্ছে। সেই ধোঁয়ায় ভেসে উঠল ‘বড়মা’, ‘মল্লিকা’, ‘চারু’, ‘মিশমি’র মুখ। এঁদের খুনসুটি আর আন্তরিকতার কম্বো প্যাকই স্টার জলসার ‘সাঁঝের বাতি’-কে আরও উজ্জল করে তুলছে।

অন্য বিষয়গুলি:

bengali serial sanjher bati Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy