সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
প্র: আপনি নাকি ‘গুমনামী’র সাকসেস পার্টির পরিকল্পনা করে ফেলেছেন?
উ: হা হা... না করিনি। কেন?
প্র: ছবিটি ঘিরে বিতর্ক যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাতে দর্শক হলে যাবেন...
উ: বিতর্ক থেকে একটা পাবলিসিটি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তার জন্য আমার কাজ করতে অসুবিধে হচ্ছে। কারও আপত্তি নাম নিয়ে, কেউ বলছেন কেন নেতাজিকে গুমনামী হিসেবে দেখানো হচ্ছে? নেতাজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে তিনটি জনপ্রিয় থিয়োরি প্রচলিত। তিনি প্লেন ক্র্যাশে মারা গিয়েছেন। নয়তো রাশিয়ায় মারা গিয়েছেন। না হলে গুমনামী বাবা। ছবিতে আমি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছইনি। পরিচালক হিসেবে কোনও দায়ও নেই সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর। আমার কাজ, প্রশ্ন তোলা। গুমনামী কথার অর্থ অজানা, অজ্ঞাত। গুমনামী থিয়োরিতে আমার সমর্থন থাকলে, ছবির নাম ‘গুমনামী বাবা’ দিতাম।
প্র: আপনি কি বিতর্কটা উপভোগ করছেন?
উ: না। লোকে আগে থেকেই ভেবে নিচ্ছে, নেতাজিকে গুমনামী বাবা হিসেবে দেখিয়েছি। আর সেই ভাবনার ভিত্তিতেই হইচই করে যাচ্ছে! তিনটে থিয়োরি ছাড়া আর একটা জিনিস দেখিয়েছি। ছবিতে অনির্বাণের (ভট্টাচার্য) চরিত্রটি ভেঙে পড়ে, যখন মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট সরকার খারিজ করে দেয়। এটা আমারও প্রশ্ন। সরকার নিজেই একটা কমিশন গঠন করল। তার পর নিজেই সেটা খারিজ করে দিল!
প্র: ‘অটোগ্রাফ’, ‘জাতিস্মর’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘উমা’, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’— সব ক’টি ছবিতেই সিনেমার পর্দা থেকে রেফারেন্স ছিল। ‘গুমনামী’তেও কি তাই আছে?
উ: অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি তো আমাদের লোককথায় আছে। হ্যাঁ, ‘অটোগ্রাফ’ ‘নায়ক’-এর রেফারেন্সে তৈরি। ভাওয়াল সন্ন্যাসীর ঘটনা থেকে ‘এক যে ছিল রাজা’। ‘চৌরঙ্গী’ থেকে ‘শাহজাহান রিজেন্সি’। ‘উমা’ সত্যি ঘটনা...
প্র: সেই ঘটনা ধরে ‘নভেম্বর ক্রিসমাস’ ছবিটিও হয়েছে...
উ: হ্যাঁ। ওই ছবিটিও একই ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। আমি বরাবরই ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছি। সেটা কখনও অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, কখনও ভাওয়াল সন্ন্যাসী, কখনও বা নেতাজি। গাঁধী, ভগৎ সিংহকে নিয়ে একাধিক ছবি হয়েছে। সকলের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। এর আগে বাংলায় নেতাজি নিয়ে যে ছবি তৈরি হয়েছিল, তার সঙ্গে রাজকুমার রাওয়ের ‘বোস: ডেড/অ্যালাইভ’-এর দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তর তফাত। আমার ছবিও তাই আলাদা।
প্র: ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ ব্যর্থ হওয়ার পরে অনেকের বক্তব্য ছিল, একই বিষয় নিয়ে বারবার ছবি তৈরি হওয়ায় মানুষ আগ্রহ হারাচ্ছেন। আপনার কী মত?
উ: ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ শংকরের ‘চৌরঙ্গী’ থেকেই তৈরি। ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘অটোগ্রাফ’ কিন্তু চলেছে। আমার কাছে সাহিত্য, ইতিহাস অনেক বেশি জরুরি। যাঁদের কাছে কালচার মানেই সিনেমা, তাঁদের কাছে ‘চৌরঙ্গী’ কালজয়ী উপন্যাস নয়, শুধুই সাদা-কালো ছবি। সেই মতামতের প্রতি আমার অনুকম্পা ছাড়া আর বিশেষ কিছুই নেই।
প্র: ‘গুমনামী’র জন্য আপনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে চেয়েছিলেন। অথচ প্রযোজনা সংস্থা যিশু সেনগুপ্তকে নেওয়ার জন্য জোর দেয়...
উ: সে আমাকে অনেকেই অনেক কিছু করার জন্য জোর করে। আখেরে লাভ হয় না। আমি নিতান্তই একগুঁয়ে একটা মানুষ। এ ক্ষেত্রে আমি বুম্বাদা ছাড়া আর কাউকে নিতাম না। তার সবচেয়ে বড় কারণ, বুম্বাদার মুখের স্ট্রাকচার। নেতাজির মুখটা অনেকটা গোলের দিকে। অভিনয় নিয়ে ভাবিনি। অভিনেতাকে পরিচালক গড়ে নেবে। সে যিশু হোক বা বুম্বাদা। ফিজিক্যাল কাস্টিংটাই প্রথম বিবেচ্য ছিল।
প্র: এসভিএফ-এ যে সব পরিচালকেরা একটা সময়ে পরপর কাজ করতেন, তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই বেরিয়ে গিয়েছেন। আপনিই একমাত্র পরপর ছবি করে যাচ্ছেন। এর ব্যাখ্যাটা কী?
উ: ধ্রুব (বন্দ্যোপাধ্যায়) বলে একটি লোক যে বিরাট হিট দিল, তাকে ভুলে যাচ্ছেন? (একটু থেমে) এসভিএফ এখন একটু কম ঝুঁকির প্রজেক্ট করতে চাইছে। আমি যে ধরনের ছবি করছি, তার যা বিষয়বস্তু, যা বাজেট, আমার যা ট্র্যাক রেকর্ড— সব মিলিয়ে প্রজেক্টটা ঝুঁকিহীন হচ্ছে। তাই হয়তো আমার ছবির সংখ্যা বেশি।
প্র: আপনাকে ঘিরে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন নারীর নাম উঠে আসে। আপনার মিউজ় কে?
উ: মিউজ় কি এক জন নারীই হতে হবে? এই মুহূর্তে অনির্বাণ ভট্টাচার্য আমার মিউজ়। জয়া (আহসান) যেমন অভিযোগ করে, ‘তুমি সারা জীবন যিশুদা, বুম্বাদাকে নিয়ে ছবি করে যাবে।’ ঋতুরও (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) একই অভিযোগ। ঘটনাচক্রে আমার মাথায় পুরুষচরিত্র কেন্দ্রিক ছবিই বেশি আসে। আর ‘রাজকাহিনি’তে ১৩ জন মহিলাকে একসঙ্গে নিয়ে নিয়েছি (হাসি)!
প্র: আপনার বাংলাদেশের বান্ধবী রাফিয়াত রশিদ মিথিলাকে মিউজ় বলবেন না কি প্রেমিকা?
উ: আমরা খুব ভাল বন্ধু। মিথিলা খুব গুণী মেয়ে। ও বার্কের মতো একটি এনজিওতে কাজ করে। তার সঙ্গে অভিনয়-সঞ্চালনাতেও নিপুণ। যে ভাবে সবটা ব্যালান্স করে, তার জন্য ওকে শ্রদ্ধা করি।
প্র: কাস্ট করার কথা ভাবছেন?
উ: সে রকম চরিত্র মাথায় এলে ভাবব। এই মুহূর্তে আমার মাথায় শুধুই অনির্বাণ (হাসি)!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy