‘পুষ্পা পুষ্পা’ গান লেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে কী বললেন শ্রীজাত? ছবি: সংগৃহীত।
‘পুষ্পা ২’ ছবির গান মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই বাঙালি দর্শকের উত্তেজনা তুঙ্গে। ‘পুষ্পা পুষ্পা’ গানকে বাংলা ভাষায় লিখেছেন শ্রীজাত। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে আনন্দবাজার অনলাইনকে শ্রীজাত জানান, সুরকার দেবী শ্রী প্রসাদের দফতর থেকে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। বেশ কয়েকটি ভাষায় গানটি প্রকাশ করার কথা চলছিল তখন। প্রথমে ঊষা উত্থুপ এবং শ্রেয়া ঘোষালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। এই গানকে বাংলায় নিয়ে আসার জন্য কার কলম মানানসই? এই প্রশ্নে শ্রীজাতের কথা বলেন দু’জনেই।
“আমি তো চট করে রাজি হয়ে যাই। এর আগেও মারাত্মক জায়গায় অবশ্য চট করেই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। ইলাইয়ারাজা সুরকার ছিলেন আর প্রযোজক কমল হাসন। বিশেষত ইলাইয়ারাজার সঙ্গে কাজ করার পরে আর ভয়ডর নেই আমার! সত্যিই রাজা তিনি। আমি সব সময় নতুন ধরনের কাজ এলে ঝাঁপ দিয়ে দিই। দেখিই না কী হয়! খুব বেশি কিছু হলে ব্যর্থ হব,” বললেন শ্রীজাত।
গত মাসে (এপ্রিল) ‘পুষ্পা পুষ্পা’ গানটি লিখেছেন তিনি। তিন দিন ছিলেন চেন্নাইয়ে। আপ্লুত শিল্পীর মতে, মুম্বই বা চেন্নাইয়ে শিল্পীদের রাজার মতো রাখা হয়। ভাল হোটেল, সুন্দর গাড়ির ব্যবস্থা থাকে সব সময়। এই বিষয়ে ওঁদের কোনও তুলনা নেই। কাজের ক্ষেত্রে এমনিই নিজের ২০০ শতাংশ দেওয়া যায় ।
সর্বভারতীয় স্তরে জনপ্রিয় ‘পুষ্পা পুষ্পা’। সাফল্য নিয়ে শ্রীজাতের বক্তব্য, “আমি মাথায় রাখি না এ সব। গাওস্কর যখন ১০ হাজার রান করেছিলেন, সেটা কিন্তু একটা মাইলস্টোন। তখন গাওস্করকে একটি সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘পকেটে ১০ হাজার রান। পরের ম্যাচে কী করবেন?’ তাঁর উত্তর ছিল, ‘এটা তো অদ্ভুত প্রশ্ন। পরের ম্যাচে যখন আমি স্কোরবোর্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়াব, তখন তো আবার শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে। প্রতি দিন শূন্য থেকেই শুরু করতে হয়।’ ফলে আমিও সর্বভারতীয় স্তর, পুষ্পা, ডিএসপি (দেবী শ্রী প্রসাদ), অল্লু অর্জুন এ সব নিয়ে ভাবিনি। একনিষ্ঠ ভাবে কাজটা করে গিয়েছি।”
দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে মধ্যস্থতা করার মতো কেউ ছিলেন না, জানালেন শ্রীজাত। তাঁর কথায়, “পুরোটাই ভরসার উপর নির্ভর করে করা হয়েছে। ওঁরা তো চাইলেই দোভাষী রাখতে পারতেন। আমি ঠিকঠাক গানের কথা লিখছি কি না, তার তদারকি করতেই পারতেন। কিন্তু সেটা করেননি তাঁরা। কোনও প্রশ্ন থাকলে আমাকেই জিজ্ঞেস করে নিচ্ছিলেন এই বাংলা শব্দের অর্থ কী ইত্যাদি। এত বড় ইন্ডাস্ট্রি, হাজার কোটি টাকার বাজেট থাকে। কিন্তু, ভরসার জায়গাটাও কতটা শক্তপোক্ত ভাবুন! ভাষা বোঝেন না, তা-ও পরখ করে দেখে নেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই।”
ইন্ডাস্ট্রির মানুষেরা নিজেদের ইমেজ নিয়ে সচেতন। সেখানে শ্রীজাতর মতো এক জন কবি এই গানের বাংলা ডাবের কথা লিখলেন। নিজের ইমেজ থেকে সরে গেলেন কি শ্রীজাত? শিল্পীর সটান জবাব, “আমি একই সঙ্গে ‘তারা ভরা আকাশের নীচে’ লিখেছি, আবার কেক-পেস্ট্রি বা চায়ের বিজ্ঞাপনও লিখেছি। শিল্পের প্রতি সৎ থাকলে সেই সংক্রান্ত যে কোনও চ্যালেঞ্জ নেওয়া যায়। আমি তো খারাপ কাজ করিনি! আমি যখন গান লিখতে শুরু করি, তখনই লোকে রে-রে করে উঠেছিলেন। ‘এ কী! ও এ বার সিনেমায় গান লিখবে। কী অদ্ভুত কথা!’ তা সেই সিনেমায় গান লেখার ১২ বছর হয়ে গেল। আমার তো কোনও ক্ষতি হল না। বরং আমার ঝুলিতে বেশ কিছু গান আছে, যেগুলোকে আমি ‘আমার গান’ বলতে পারি।”
“এই গানটা লিখে খুব মজা পেয়েছি। এ রকম কাজ আগে হয়নি, তাই সুযোগ পেলে ছাড়ব কেন? মানুষ মুম্বই বা দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে পড়ে থাকেন কাজের আশায়। সেখানে আমি নিজে ডাক পেয়েছি, ফলে সেই ডাক ফিরিয়ে দেওয়ার অর্থ নিজের পেশার সঙ্গে অন্যায় করা,” আত্মবিশ্বাসের সুর শ্রীজাতের কণ্ঠে।
রিমেক নয়, দক্ষিণী ছবির ডাব হচ্ছে বাংলা ভাষায়। এতেই মানুষের শোরগোল চোখে পড়ার মতো। শ্রীজাত বললেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছেন। সকলে যে এত খুশি হবেন, সেটা আগে বুঝিনি। সারা জীবনই তো গান লিখেছি, এই সময়ে দাঁড়িয়ে বাংলার বাইরে একটা গান এত সাড়া পাচ্ছে, সত্যিই তা আশাব্যঞ্জক। এত বড় ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির ছবি, তার একটা প্রভাব রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy