সঙ্গীতশিল্পী শ্রাবণী সেন। পূরণ করলেন সঙ্তিগীতের সঙ্গে তিরিশ বছরের পথ হাঁটা।
সঙ্গীত জীবনের তিরিশ বছরে এসে শ্রাবণী সেন নিজের গানের জন্য যা ভাবলেন সেখানে প্রেমই এল কেন?
হ্যাঁ, প্রেমের গান আর পিয়ানো নিয়ে এই প্রথম কাজ। রবীন্দ্রনাথের সব গান গাইতেই ভাল লাগে। তবে প্রেমের গানে মনে হয় আমাদের নিজের কথা বেশি শুনতে পাই। আর প্রেম থেকে বিরহ এবং সেখান থেকে উত্তরণ...রবীন্দ্রনাথ প্রেমের মরীচিকাকে যে ভাবে আলো দেখান সে রকম মনে আর কিছু ধরে না। আজকের দিনে এই ‘আলো’, ‘উত্তরণ’, এই বিষয়গুলো মনে হয় আরও জরুরি।
কেন?
প্রেম ভাঙলেই মানুষ ডিপ্রেশনে পৌঁছে যাচ্ছে। জীবনের মানে হারাচ্ছে। কেন? জগতে আরও তো অনেক বিষয় আছে! রবীন্দ্রনাথের গানের সন্ধান পেলে, তার মানে বুঝলে আমার তো মনে হয় মানুষ উত্তরণের পথও নিজে চিনে নেবে। এতটাই শক্তি রবীন্দ্রনাথের গানে।
সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন সবাই রবীন্দ্রনাথের গান গায়। রোজ চল্লিশ জনের মুখ দেওয়া পোস্টার আপলোড হয় ফেসবুকের দেওয়ালে। কী মনে হয়?
এ ভাবে হয় না, জানেন। তিরিশ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলছি। চল্লিশ জনের যে অনুষ্ঠান তাতে দেখেছি মঞ্চে যিনি গান করেন তাঁর বাড়ির লোকেরা আসেন। তাঁর গান হয়ে যাওয়ার পর তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে উঠে যান। হল খালি হতে থাকে। এখন রোজ অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু হল তো পুরো ভরে না। পঁচিশে বৈশাখ থাকি না এই কারণে। এ বার হায়দরাবাদে গিয়েছিলাম। সাড়ে দশটা বেজে গেছে লোকে ছাড়তে চাইছে না। আমি শহরের বাইরে শো করতে বেশি পছন্দ করি।
আরও পড়ুন: ‘সাঁঝবাতি’র শুটিংয়ে দেবের ক্যামেরায় ধরা পড়লেন ‘মিষ্টি দিদা’
সব্বাই রবীন্দ্রনাথের গান করেন। রোজ অনুষ্ঠান করেন। মনে হয় এতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্ষতি হচ্ছে?
রোজ মুখ দেখানো। রোজের অনুষ্ঠান শ্রোতাদেরও বিরক্তির কারণ হচ্ছে। সপ্তাহে তিনটে দিন যদি শ্রোতাকে চল্লিশ জনের রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে হয়! ভাবুন ক্ষতিটা কোথায় হচ্ছে। তিনি তো রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর বিরক্ত হবেন। অতিরিক্ত কোনও কিছুই ভাল না। আর শুধু শ্রোতা নয়। শিল্পীদের আগের মতো আর সম্মান করা হয় না।
তা হলে কি বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের কড়া বন্ধন রবীন্দ্রসঙ্গীতের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছিল?
দেখুন। কড়া বন্ধন দিয়ে শিল্পকে বাঁধা যায় না। এটা ঠিক। তবু এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বলব রবীন্দ্রসঙ্গীতের মান নির্ধারক হিসেবে একটা কোনও সংগঠন থাকা উচিত ছিল। আর একটা কথা বলি?
বলুন...
ধারাবাহিকে আমার গান ব্যবহার করা হয়। অথচ রেকর্ডিং কোম্পানি বা আমার অনুমতি নেওয়া হয় না! যে গাইছে তাঁর নাম অবধি উল্লেখ হয় না। এটা অন্যায়। অথচ এ রকম হয়েই আসছে।
অনুষ্ঠানে শ্রাবণী সেন।
শ্রাবণী সেন এমন এক শিল্পী যাঁকে মাচা থেকে মঞ্চ, জনপ্রিয়তার জন্য কখনও রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া অন্য কিছু গাইতে হয়নি।
আমার সৌভাগ্য। তবে জনপ্রিয়তা পেতে গেলে সব রকম গান গাইতে হবে এটা আমি মনে করি না। তবে উপস্থাপনাটা খুব জরুরি।
আরও পড়ুন: ‘নীল দিগন্তে’ মানালি-নাইজেল জুটির আত্মপ্রকাশ
যেমন?
ধরুন আমি যেমন দাঁড়িয়ে গাই। আমি একটা স্মার্ট উপস্থাপনার কথা বলছি। হুল্লোড়, বিয়ে বাড়ির মতো সাজ বা নাচের দরকার নেই। একজন দর্শক হয়তো বলল এই গানটা গাইতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে ওই গানটাই গাইলাম। এটা করতেই হবে। পুরোটা না জানলেও গাইতে হবে। শ্রোতারাই আমায় শ্রাবণী সেন করেছেন। তাঁদের অনুরোধ রাখলে তাঁরা খুশি হবেন। আমি খুব বাস্তববাদী। আমি জানি শ্রোতারা পছন্দের মতো গান শুনবেন বলে আমাকে পয়সা দিয়ে এনেছেন। তাঁদের আনন্দ দেওয়াই আমার কাজ।
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করছেন। এই প্রজন্ম রবীন্দ্রনাথের গানের বিষয়ে কি উৎসাহী?
অবশ্যই। আমার গান শেখাতে খুব ভাল লাগে। আমার পাঁচশোর বেশি ছাত্রছাত্রী। তবে এখন প্রলোভনের জায়গাটা এত বেশি না, কেউ ঠিকমতো গান শিখলই না। চ্যানেলে গাইতে চলে গেল। সুরই বসছে না। ফেসবুক লাইভ করে দিল। এগুলো বেশ গন্ডগোলের।
আপনার ছাত্র নয় এমন কেউ ভাল গান গাইলে আপনি নির্দ্বিধায় তাকে সাহায্য করেন?
হ্যাঁ। আমি নিজের গান নিয়েই তো খুব ক্যাজুয়াল। চ্যানেলে ভাল কাউকে গাইতে শুনলে ফোন করে বলি, ওকে দিয়ে আরও গাওয়ান। আমাদের একটা পারিবারিক ঐতিহ্য তো আছে। সেখানে ভালকে ভাল বলা শেখানো হয়েছিল। এটা আমার মা শিখিয়েছিলেন। এটা কিন্তু শুকনো পিঠ চাপড়ানো নয় বা ফেসবুকের মতো জাস্ট লাইক নয়।
পিয়ানোর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গান। এ রকম ভাবলেন কেন?
আমার প্রিয় মানুষ ‘প্রজ্ঞা’-র গোপা রায় একটা অনুষ্ঠানের অনুরোধ করেছিলেন আমায়। ইতিমধ্যে সৌমিত্র সেনগুপ্ত-র পিয়ানো শুনে আমি মুগ্ধ। ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকাল মিউজিকের মানুষ। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গানের সঙ্গে আঠাশে জুলাই উত্তম মঞ্চে কিছু সুর উনি তুলে আনবেন। হয়তো কোথাও মিলে যাবে রবীন্দ্রনাথ আর মোৎজার্ট। সঙ্গে সুমন্ত্র সেনগুপ্ত রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়বেন। এ রকম ভাবনা। এই অনুষ্ঠান থেকে যা টাকা পাওয়া যাবে তার একটা অংশ আমরা বৃদ্ধাবাসে দিচ্ছি। এটা আমরা ফলাও করে কোথাও জানাতে চাইনি, কিন্তু এই সাক্ষাৎকারে বললাম। আমিও এই অনুষ্ঠানে কোনও পারিশ্রমিক নিচ্ছি না।
প্রেম নিয়ে আজ কথা হল। কিন্তু আপনি তো একা, বিয়ে করলেন না...
আসলে একা আমরা সবাই। বিয়ে করা বা না করার মধ্যে কিছু ফারাক হয় না। ফারাক শুধু মনে। যে মন স্বপ্ন দেখতে ভোলে না। যে মন জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে সুরের আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখে। আলোতে, আঁধারে, মরীচিকায়...
(এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy