গোয়ার সৈকতে বিকিনি-যাপন।
অফিসের জানলার বাইরে কনে দেখা আলো।
ক্যান্ডেললাইটের নিরালা রোম্যান্স। মিল পাচ্ছেন কোথাও?
পাবেন, আপনার ফেসবুক নিউজফিডে।
তিন ইয়ারি কথা
মোবাইলে ক্যামেরা আছে। আছে ইনস্টাগ্র্যাম-স্ন্যাপসিড। আর আছে ফেসবুক। ব্যস, মিল বৈঠেঙ্গে তিন ইয়ার এবং আপনিও ফোটোগ্রাফার।
যানজটে আটকে হঠাত্ চোখ পড়ল মায়াবী সূর্যাস্তটার দিকে। কিংবা পাশের বাড়ির পুঁচকের অন্নপ্রাশনে গোলগাল মিষ্টি ছানাদের মুখোমুখি। পোষা কুকুরের আহ্লাদিপনা থেকে অ্যামেচার ল্যান্ডস্কেপ অথবা স্রেফ বন্ধুদের হইহুল্লোড়, রেস্তোরাঁর ভূরিভোজ। মন চাইলেই মোবাইলে ক্লিক, টুকটাক ফোটো এডিট এবং সটান ফেসবুক। নিমেষে লাইক-কমেন্টের বন্যা। দিল খুশ।
মাস, ক্লাস(রুম) এবং
কলেজপড়ুয়া ঈশানী চক্রবর্তী ব্যস্ত ‘শাটারবাগ’। কফিটেবিলের টুকিটাকি হোক কিংবা ফুটপাথ ঘেঁষা বেলুনগাড়ি, ঝুপ্পুস বৃষ্টিই হোক কিংবা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে আলসে বিকেল ইনস্টাগ্র্যামে রং মেখে সোজা ফেসবুকে, হাজারখানেক বন্ধুর চোখের সামনে। ব্যস! দেদার লাইক, প্রশংসা তো বটেই, কমেন্টে দিব্যি আসছে ফোটোগ্রাফি টিপ্সও। ‘‘আমার ফ্রেন্ডলিস্টেই এমন অনেকে আছেন, যাঁরা খুব ভাল ছবি তোলেন। পরের ছবিটা তোলার সময়ে তাঁদের টিপ্স মাথায় রাখছি। নিঃসন্দেহে খানিকটা ইমপ্রুভও করছি,” বলছেন ঈশানী।
ফেসবুকই তাই ভাবতে শেখাচ্ছে ‘আমিও পারি’। রকেটগতিতে বাড়ছে আনকোরা ফোটোগ্রাফারের সংখ্যা। প্রথাগত পড়াশোনা ছাড়া স্রেফ শখেই যাঁরা মোবাইল, ক্যামেরা ঘেঁটেঘুঁটে, ছবি এডিট করে নিজের মতো করে শিখে নিচ্ছেন খুঁটিনাটি। ‘অ্যামেচার’ ছবিতে বানভাসি কলকাতা থেকে ক্যালিফোর্নিয়া।
“ফেসবুকে লোকে ভাল বলছে মানে কিছু তো একটা আছে আমার ছবিতে। আগে বেসিক ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলতাম। এ বার মাইনের টাকা জমিয়ে একটা এসএলআর কিনেছি। নিজে নিজেই শাটার স্পিড, অ্যাপারচার নেড়েচেড়ে ছবি তুলছি। আগের চেয়ে বেটার হচ্ছে কিন্তু।” গড়গড়িয়ে বলে ফেলেন পেশায় ইঞ্জিনিয়ার প্রতীক বসু।
ফেসবুক নাকি ফোটোগ্রাফির ক্লাসরুম? নাকি ছবি তোলার প্রাথমিক পাঠটুকুও না থাকা ফোটোগ্রাফারের ঠিকানা?
প্রথাগত শিক্ষা থাকা-না থাকাটাকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ শখের ফোটোগ্রাফার দেবর্ষি দত্তগুপ্ত। আন্তর্জাতিক ক্যামেরা প্রস্তুতকারী সংস্থার প্রতিযোগিতায় জয়ী দেবর্ষি ফেসবুকে একটা কমিউনিটির সদস্য। তাঁদের সঙ্গেই আলোচনা করেন ছবি নিয়ে, দলবেঁধে ছবিও তুলতে বেরোন। “আসলে চোখ আর ইচ্ছেটাই বড় কথা। নাই বা থাকল প্রথাগত পড়াশোনা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছবি শেয়ারিং বা আলোচনায় ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়া যাচ্ছে। নেশাটা পেশা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অনেকেরই। ভাল ভাল কাজও তো হচ্ছে,” বলছেন তিনি।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ী কুশল গঙ্গোপাধ্যায়ও বলছেন, “আনকোরা ফোটোগ্রাফারের জন্য ফেসবুক কিন্তু একটা দারুণ প্ল্যাটফর্ম। ভাল ছবি তুলতে বা ছবি তোলাটাকে পেশা করতে পড়াশোনা আর পেশাদার ফোটোগ্রাফারের কাছে কাজ শেখা জরুরি ঠিকই। কিন্তু নিজেদের অ্যামেচার ছবি বন্ধুরা পছন্দ করছে দেখলে আত্মবিশ্বাসও বাড়ে, নিজের ছবির অ্যাক্সেপ্টিবিলিটিটাও পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে কার টিপ্সটা দরকারি, সেটা নিজেকেই ঠিক করতে হবে।”
এক ধাপ এগিয়ে আইটি কর্মী এবং ফোটোগ্রাফার অনির্বাণ সাহা ফেসবুকের হাত ধরেই আয়োজন করে ফেলেছেন আস্ত একটা ইভেন্ট। গত মাসে মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলা অ্যামেচার থেকে পেশাদার ফোটোগ্রাফার, সব্বাইকে মুখোমুখি বসিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। অনির্বাণের কথায়, “পেশাদারদের সঙ্গে আলোচনায় নিজেকে ঘষামাজা তো বটেই, ছবি তোলার খিদেটাও জাগে। সেটাই টার্গেট ছিল। ফেসবুকেই ইভেন্টটা পোস্ট করেছিলাম, সাড়াও পেয়েছি। ফেসবুকে যারা ছবি দেয়, তারা কিন্তু ফোটোগ্রাফি দুনিয়াকে খানিকটা হেল্পও করে। ধরা যাক, কেউ বেড়াতে যাওয়ার ছবি দিল। সেই ছবি ভাল নাও হতে পারে, কিন্তু সেগুলো দেখে অন্য কেউ ভাল ছবি তুলতেই পারেন।”
তারাদের কথা
রুপোলি দুনিয়ার নামী ফোটোগ্রাফার রাকেশ শ্রেষ্ঠা অবশ্য মোটেই নম্বর দিচ্ছেন না ফেসবুককে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ছবি শেয়ার করার এই অভ্যেসটা তাঁর কাছে স্রেফ ‘ওয়েস্ট অব টাইম’। “ছবি তোলা শিখতে চাও? তা হলে পেশাদার ফোটোগ্রাফারদের কাছে ছবি দেখাও। ফেসবুকে ছবি দেখে যারা টিপ্স দিচ্ছে, তারা তোমার মতোই, আনকোরা। শখে ছবি তুললে ঠিক আছে, কিন্তু পেশাদার হতে চাইলে পড়াশোনা কর। কাজটা শেখো,” বলছেন তিনি।
ফোটোগ্রাফি দুনিয়া যাকে এক ডাকে চেনে, সেই রঘু রাই অবশ্য ফেসবুকের এই ক্লাসরুমকে ততটা খারাপ বলছেন না। তাঁর কথায়, “এত লোক ছবি দেখলে, প্রশংসা করলে বা টিপ্স দিলে সেটা একটা বুস্ট তো বটেই। তবে ফোটোগ্রাফার হয়ে উঠতে অন্তত তিন-চার বছর লাগবে। ফেসবুক উত্সাহটা জুগিয়ে দিচ্ছে, তার পরে পড়াশোনাটাও করতে হবে। কিন্তু দেখার চোখ চাই। চাই বোঝার মতো হৃদয়। সেটা থাকলে চারপাশটাই তোমার সাবজেক্ট।”
তা হলে?
থোড়া হ্যায়, থোড়ে কী জরুরত হ্যায়। বাকিটা ম্যাজিক!
আনাচে কানাচে
অক্টোবরেও বসন্ত: ‘চতুষ্কোণ’য়ে সাফল্যের পর অনুপম খোশমেজাজে। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
মাধুরী ফ্যানেদের সঙ্গে লন্ডনে সেলফি তুলছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy