সে দিন এক বিয়ের কনে বিয়ের আসরে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। বিয়ের লোকাচারের দিকে কোনও নজরই নেই তাঁর। সেলফিতে পোজ দিতেই ব্যস্ত সেই কনে। আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে এক মহিলা এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন স্মার্টফোন নিয়ে যে, আর কারও সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজনই মনে করেননি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় ফোনটা নিয়ে বসে থাকলেন। বাইশ বছরের ইঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েট সানির হাতে দু’-দুটো ফোন আর অনেকগুলো সিম।
সুতপার কথা না বললেই নয়।
বর এত ব্যস্ত তার বহুজাতিক সংস্থার কাজ নিয়ে যে পরিবারে সময় দিতে পারে না। বিয়েটা প্রায় ভাঙে ভাঙে। পরিস্থিতি সামলাতে সুতপার বর গৌরব বিদেশে বেড়াতে নিয়ে যায় সুতপাকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে বাঁধল গোল। স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে গৌরবের ফোনে একটা ইমেল নোটিফিকেশন আসে। গৌরব প্রায় ঝাঁপ দিয়ে ফোনটা হাতে তুলে নেয়।
বোঝাই যাচ্ছে স্মার্টফোন-আসক্তি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। একটি সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, ফোন না বাজলেও কেউ কেউ এমনিই ফোনের আওয়াজ শুনতে পান। এটা এক ধরনের বিভ্রম। মনস্তাত্ত্বিকেরা একে বলছেন ‘ফ্যানটম ভাইব্রেশন’। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও একই ভাবে ডুবে যাচ্ছে স্মার্টফোনে।
স্মার্টফোন আসক্তি বুঝবেন কী করে
হাতের মুঠোর মধ্যে ফোন না থাকলে অস্বস্তি বোধ করা
বারবার ফোন চেক করা। নতুন মেসেজ এল কি না দেখা। তৎক্ষণাৎ উত্তর দেওয়ার তাগিদ
থেকে থেকেই মনে হয় ফোন ভাইব্রেট করল। কিন্তু করেনি। এই ফ্যানটম ভাইব্রেশনের অনুভূতিই হল ফোন আসক্তির বড় লক্ষণ।
কেউ আপনার সঙ্গে কথা বলছে, কিন্তু তখন আপনি তার কথায় মন না দিয়ে ফোনে ট্যুইট বা ফেসবুক দেখছেন
বাড়ি থেকে বেরোলেন। অর্ধেক রাস্তা গিয়ে মনে হল সঙ্গে ফোন নেই। বাড়ি ফিরে এলেন শুধু ফোনের জন্য
মনোবিদ ডা. সব্যসাচী মিত্র বলছেন তাঁর চেম্বারে মা-বাবারা এমন সব বাচ্চাকে নিয়ে আসেন, যারা সব সময় ফোনে আসক্ত। স্মার্টফোন আসক্তিতে খিদে কমে যায়, ঘুম আসে না, আর মেজাজও খিটখিটে হয়ে যায়। একদল মনোবিদ এই বিকারকে বলছেন ‘অবসেশনাল ডিসঅর্ডার।’
আর একটি সমীক্ষা বলছে স্ট্রেস মানে কাজের চাপ নয়, স্মার্টফোন ব্যবহারেই স্ট্রেস লেভেল বাড়ছে। বারবার ফোন চেক করাটা যদি আপনার নিঃশ্বাসপ্রশ্বাস ফেলার মতো অভ্যেস হয়ে গিয়ে থাকে, স্মার্টফোন কাছে না থাকলে যদি অস্থিরতা বাড়ে, তা হলে বুঝতে হবে আপনারও স্মার্টফোন অ্যাডিকশন হয়েছে। আর এই আসক্তি খুব শিগগিরই মানসিক রোগে পরিণত হবে। তার সঙ্গে নানা শারীরিক অসুবিধেও দেখা দেবে।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জি আর বিজয়কুমার তিরিশ বছর বয়সি রুগি অবিনাশের উদাহরণ দিলেন। গত দু’মাস ধরে তাঁর ঘাড়ে অসহ্য যন্ত্রণা। ‘‘রোগপরীক্ষা করে জানা গেল যে অবিনাশের টেক্সট নেক হয়েছে,’’ বলছেন ডা. বিজয়কুমার। যদি চিকিৎসা না করা হয় তা হলে অবিনাশের এই অসুখ পাকাপাকি ভাবে বাতে পরিণত হবে। চিকিৎসকেরা বলছেন আজকাল পনেরো-ষোলো বছরের ছেলেমেয়েরাও ঘাড়ের পেশির সমস্যা, শিরদাঁড়ার সমস্যা নিয়ে আসছে। পরীক্ষা করে বোঝা গেছে এই সব সমস্যার উৎস কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্মার্টফোন। নতুন প্রযুক্তি সব সময়ই ভাল, কিন্তু তার ব্যবহারে সতর্কতা নেওয়া উচিত। মানসিক চাপ থেকে যে সব সময় মাথা ধরে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় আপনি নিজেই অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহারে শারীরিক সমস্যা তৈরি করেন। দেরি করবেন না। আগে থেকেই সতর্ক হোন।
টেক্সট নেক কী
ঘাড়ে একই ধরনের চাপ বারবার পড়ছে বলেই ব্যথা বাড়তে থাকে।
ঘাড় বাঁকালে আমাদের মাথার ওজন বেড়ে যায়। প্রতি এক ইঞ্চি ঘূর্ণনে
মাথার ওজন একশো ভাগের কাছাকাছি বাড়তে থাকে। ঘাড় বাঁকানোর
জন্যই পেশিতে যে চাপ হয় সেটাই টেক্সট নেক।
চিকিৎসা কী?
• ফিজিওথেরাপি, ব্যথা আর ফোলা কমার ওষুধ ব্যবহার
• যোগব্যায়াম করে শরীরের ভঙ্গিগুলো ঠিক রাখা
• বসার সময় পেছন দিকে সাপোর্ট দিয়ে বসা
• কম্পিউটার ও চোখের লেভেল ঠিক রাখা
• পনেরো মিনিটের বেশি টানা স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না
• অ্যাঙ্গলটা এমন থাকবে যাতে ঘাড় বেঁকিয়ে দেখতে না হয়।
ডা. জি আর বিজয়কুমার
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy