জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিই পরিবর্তন এবং পরিমার্জনের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়। এক দিকে প্রযুক্তিগত উন্নতি শিল্পীদের যেমন সুবিধা দিয়েছে, তেমনই প্রযুক্তি শিল্পীর নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কাও বাড়িয়েছে। সম্প্রতি সঙ্গীতের ‘পাইরেসি’ এবং ‘কপিরাইট’ সংক্রান্ত একটি আলোচনাচক্রে যোগ দিতে শহরে এসেছিলেন সুরকার জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
জিতের মতে, প্রযুক্তি এবং রিয়্যালিটি শো এখন সহজেই নতুন শিল্পীদের পরিচিতি দিচ্ছে। কিন্তু তাঁরা ‘ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস’ নিয়ে সচেতন নন। জিতের কথায়, ‘‘একটা জন্মদিনের পার্টিতে যাঁরা পরিষেবা দিচ্ছেন, তাঁরা প্রত্যেকেই পারিশ্রমিক পান। কিন্তু ওই পার্টিতেই স্পিকারে একটা জনপ্রিয় গান বাজালে ক্রিয়েটর কোনও পারিশ্রমিক পান না। শিল্পীর জন্য এটা খুবই অসম্মানের।’’ ‘আইপিআরএস’-এর মতো সংস্থা দীর্ঘ দিন গায়ক এবং গীতিকারদের যথাযথ স্বত্ব ও পারিশ্রমিকের ব্যাপারে কথা বলছে। বাংলায় শিল্পীদের মধ্যে এই ধরনের সচেতনতা কতটা? জিতের মতে, পাশ্চাত্যের একাধিক শিল্পীর সৃষ্টির অনুপাত কোনও ভারতীয় শিল্পীর তুলনায় অনেকটাই কম। কিন্তু, শুধু রয়্যালটির জন্যই পাশ্চাত্যের এক জন শিল্পী সহজেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করতে পারেন। তিনি বললেন, ‘‘আমার বাবার সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন, তার বাইরেও এমন বহু শিল্পীকে দেখেছি, যাঁরা কোনও দিন রয়্যালটি পাননি। তার থেকেও বড় কথা, শিল্পীর সৃষ্টিক্ষমতা সারা জীবন থাকেও না। তাই এখন থেকেই সচেতন হওয়া উচিত।’’
অরিজিৎ সিংহ এবং জিতের সম্পর্ক দীর্ঘ কালের। এক দিকে শিল্পীর সুরক্ষার কথা হচ্ছে, কিন্তু ভারতীয় সঙ্গীত জগতে অরিজিতের পর আর কোনও উল্লেখযোগ্য শিল্পী উঠে আসছেন না কেন? জিতের মতে, লকডডাউনের সময় ডিজিটাল মাধ্যমের দৌলতে অনেক নতুন শিল্পী উঠে এসেছেন। কিন্তু ভারতীয় সঙ্গীতের ঘরানা মানেই যে শুধু সিনেমার গান, সে কথা মানতে নারাজ জিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তো সিনেমার গানের তুলনায় মৌলিক গানই বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে। নতুনদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু খ্যাতি পেয়েছেন। এটা খুবই ভাল ইঙ্গিত।”
জিৎ জানালেন, নতুনদের অনেকের প্রতিভাই তাঁকে আপ্লুত করে। তিনি নিজেও লাগাতার নতুন শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তাঁর মতে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতীয় সঙ্গীত জগতে আরও পরিবর্তন আসবে। একই সঙ্গে বাড়বে প্রতিযোগিতাও। জিতের কথায়, ‘‘‘ভাইরাল’ সংস্কৃতি খুব বেশি দিন থাকবে না। যাঁরা খাঁটি শিল্পী, তখন শুধু তাঁরাই টিকে থাকবেন।’’ কথাপ্রসঙ্গেই জিৎ উল্লেখ করলেন ‘কাঁচা বাদাম’ খ্যাত ভুবন বাদ্যকর বা রানু মণ্ডলের কথা। জিৎ বললেন, ‘‘একটা গান করেই অনেকে ভাইরাল শিল্পীর তকমা পাচ্ছেন। কিন্তু তার পর হারিয়ে যাচ্ছেন। আমি এই প্রবণতাকে সমর্থন করি না। কোনও শিল্পীর জনপ্রিয়তাকে বিচার করতে হলে আমি ওই শিল্পীর একাধিক গানের নিরিখে তাঁকে বিচার করব।’’
সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে অনেকেই এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মধ্যে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। এ আর রহমানের মতো শিল্পী সম্প্রতি মৃত শিল্পীর কণ্ঠস্বর ব্যবহার করে গান সৃষ্টি করে দেশের সঙ্গীত জগতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন। জিৎ কিন্তু যে কোনও পরিস্থিতিতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করেন। স্পষ্ট বললেন, ‘‘আমি সৃষ্টিতে বিশ্বাস করি। ছাঁচে বানানো আর হাতে গড়া মূর্তির মধ্যে একটা ন্যূনতম পার্থক্য তো থাকবে! আমার মতে, এআই একটা ফাস্ট ফুডের মতো বিষয় হয়েই রয়ে যাবে।’’ প্রযুক্তি যদি সৃষ্টির সমর্থনে কথা বলে, তা হলে জিতের কোনও সমস্যা নেই। কথাপ্রসঙ্গেই জিৎ মনে করিয়ে দিলেন, সুর সংশোধন করার জন্য তৈরি ‘মেলোডাইন’ সফ্টঅয়্যারের কথা। তাঁর কথায়, ‘‘লতাজি, কিশোরকুমার বা মহম্মদ রফি তো রেওয়াজ করে স্টুডিয়োয় এসে গান রেকর্ড করতেন। যে দিন থেকে সফ্টঅয়্যারের ব্যবহার শুরু হল, সবাই বলেছিল, এখন থেকে সবাই গায়ক হয়ে উঠবে! কিন্তু সেটা তো হয়নি।’’ পরিশ্রম ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিলেন জিৎ।
বাংলায় এই মুহূ্র্তে সুরিন্দর ফিল্মস প্রযোজিত ‘মিতিন মাসি’র নতুন ছবির সঙ্গীত পরিচালনায় ব্যস্ত জিৎ। জিৎ বললেন, ‘‘আমার কেরিয়ারের প্রথম ছবি ‘প্রেমী’ ওদের প্রযোজনায়। ইন্ডাস্ট্রিতে ২০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এই ছবির হাত ধরে। মনে হচ্ছে, একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’’ কিন্তু দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় কী উপলব্ধি তাঁর? জিৎ হেসে বললেন, ‘‘এখনও নতুন অ্যালবাম তৈরির আগে সেটাকেই নিজের প্রথম কাজ মনে করি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy