Advertisement
০৮ নভেম্বর ২০২৪

‘আমরা দু’জনেই কাজপ্রেমী, বাকি মিল এখনও খুঁজছি’

বললেন দেব। সহমত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও। একসঙ্গে বড় পর্দায় আসার আগে আনন্দ প্লাসের সঙ্গে আলাপচারিতায় তাঁরা।

সৌমিত্র-দেব। ছবি: দেবর্ষি সরকার   

সৌমিত্র-দেব। ছবি: দেবর্ষি সরকার   

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

দুই ভিন্ন পৃথিবীর অভিনেতা তাঁরা। এক জন লিভিং লেজেন্ড, অন্য জন অভিনেতা-প্রযোজক-সাংসদ। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় ও শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘সাঁঝবাতি’ ছবিতে প্রথম বার জুটি বেঁধেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও দেব।

কয়েক দিন আগে হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন সৌমিত্র। ধকল সামলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কথার ফাঁকে কখনও জল, কখনও বা বিস্কিট তাঁর জন্য এগিয়ে দিচ্ছিলেন দেব। পর্দায় ছানা দাদুর তো এ ভাবেই খেয়াল রাখে চাঁদু...

অনেক বেশি পেয়েছি...

প্রথম বার একসঙ্গে কাজ করবেন শুনে কী মনে হয়েছিল? ‘‘ষাট বছরে অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি। দেবের মতো সুপারস্টারের সঙ্গে কাজ করব শুনে আগ্রহী ও কৌতূহলী হয়েছিলাম। আগে ওকে তেমন চিনতাম না। জানি না ওর মনে আছে কি না... এক বার সায়েন্স সিটিতে অনুষ্ঠান শেষে গাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। দেব তখন ঢুকছিল। কিছুটা গিয়ে ফিরে এসে ও আমাকে প্রণাম করে। সেটা ভাল লেগেছিল,’’ বলছিলেন সৌমিত্র। দেব মাথা নেড়ে জানালেন, তাঁর অবশ্য ঘটনাটি মনে নেই।

‘‘এই ছবি করার কারণ, সৌমিত্রদা। চেষ্টা করেছি, আমার জন্য ওঁর অভিনয়ের যেন ক্ষতি না হয়। সৌমিত্রদার সঙ্গে সময় কাটানো আর ওঁর কাছ থেকে শেখা... সুযোগ হিসেবে চাওয়ার চেয়ে অনেক বেশি পেয়েছি,’’ অকপট দেব।

ব্যবসায় আগ্রহ থাকলে পয়সার কথা ভাবতে হত না...

বাংলা ছবির বক্স অফিস নিয়ে যে হালফিল এত কথা হয়, তা কিন্তু নতুন নয়। সৌমিত্র বলছিলেন, ‘‘আগেও হত। কিন্তু ব্যবসার বিষয়টি আমাকে কখনও টানেনি। যদি টানত, তা হলে এখন পয়সার কথা ভাবতে হত না...’’ জোরে হেসে উঠলেন দু’জনে। এই প্রজন্মের অনেক প্রথম সারির অভিনেতাই প্রযোজক হয়েছেন। ‘‘আমাদের সময়েও উত্তমদা (কুমার) হয়েছিলেন। যে গুটিকয়েক ব্যক্তি কখনও হননি, তার মধ্যে আমি একজন। সুচিত্রাও (সেন) বোধহয় কখনও প্রযোজনায় আসেনি।’’

গত কয়েক বছরে প্রযোজক দেবের নতুন ধারার ছবি নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে। ‘‘এক প্রকার বাধ্য হয়েই প্রযোজক হয়েছিলাম। কারণ ‘সাঁঝবাতি’র মতো ছবি তখন আমাকে অফার করা হত না,’’ স্পষ্ট করলেন দেব।

না পাল্টালে ক্যালেন্ডার হয়ে যাবে...

নাচ-গানের ছবি ছেড়ে এখন অভিনয়ধর্মী ছবিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন দেব। বলছিলেন, ‘‘না পাল্টালে ক্যালেন্ডার হয়ে যাবে। ছবির ভাষা, প্রোমোশন সবটাই তো এখন পাল্টে গিয়েছে।’’ সৌমিত্রের মতে, ‘‘এটাই তো কালের নিয়ম। সেটাকে চ্যালেঞ্জ করা উচিত নয়, অস্বীকার করাও নয়।’’

স্ত্রী চিঠিগুলো রেখে দিতেন...

দেব ও সৌমিত্রের মধ্যে কয়েক প্রজন্মের ব্যবধান। তবে মহিলা অনুরাগীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু দু’জনেই। সাদাকালো থেকে ডিজিটাল, সৌমিত্রের আবেদন অমলিন। ‘‘অনেক প্রেমপত্র পেয়েছি। গোড়ার দিকের চিঠিগুলো আমার স্ত্রী যত্ন করে রেখে দিতেন। বাড়ি অদলবদলে সেগুলো এখন নেই...’’ তাঁর কথার রেশ টেনেই দেব বলতে শুরু করেন, ‘‘এটাই হয়। যারা চিঠি পায়, তারা যতটা না পড়ে, তার চেয়ে বেশি পড়ে পাশের জন।’’ তার মানে দেবের ফ্যানদের চিঠি রুক্মিণী (মৈত্র) পড়েন? ‘‘আমি কি কারও নাম নিলাম?’’ সাবধানী নায়ক।

দেবকে ‘আই লাভ ইউ’ বলাতেও মহিলাদের আগ্রহ দেখার মতো। ‘‘বাংলাদেশ থেকে ১৫ বছরের একটি মেয়ে পালিয়ে এসেছিল আমাকে বিয়ে করবে বলে। সাক্ষী হিসেবে এসেছিল তার আট বছরের ভাইও। আমার অ্যাপার্টমেন্টের নীচে অপেক্ষা করছিল ওরা। পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওদের বাড়ি পাঠাই। তবে এদের ভালবাসার জন্যই আমাদের বেঁচে থাকা।’’

তুই গাড়ি চালাতে পারবি না...

বাংলা ছবির পছন্দের তিন নায়কের নাম জিজ্ঞেস করা হলে সৌমিত্র বলেন, ‘‘যে দিন কাজ করা ছেড়ে দেব, সে দিন এর উত্তর দেব।’’ তবে তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে উত্তমকুমারের বড় ফ্যান ছিলেন অভিনেতা। ‘‘আমি আর উত্তমদা ভিড় এড়ানোর জন্য এয়ারপোর্টের কাছে একটা বারে আড্ডা দিতে যেতাম। এক দিন খাওয়াদাওয়ার শেষে উনি বললেন, ‘‘তুই গাড়ি চালাতে পারবি না, বেশি খাওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ আমিও নাছোড়। নিজেই চালাতে শুরু করলাম। খানিক পরে দেখি, ফলো করছে ওর গাড়ি। তখন মির্জাপুর স্ট্রিটের বাড়িতে থাকি। বাড়ি পৌঁছে ওঁকে বললাম, ‘‘বিশ্বাস হল এ বার?’’ মুচকি হাসলেন। আমার উপরে অভিভাবকসুলভ অধিকার ছিল ওঁর।’’

দেবের কাছে জানতে চাওয়া হল সৌমিত্রের পছন্দের তিনটি ছবির নাম। উত্তর দেওয়ার আগে সৌমিত্র বললেন, ‘‘ওকেও বিপদে ফেলা হচ্ছে।’’ সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলি দেবের খুব পছন্দের। উত্তর শুনে খুশি হলেন প্রবীণ শিল্পী। এখনকার মধ্যে ‘বেলাশেষে’ও দেবের পছন্দের ছবি।

মিল এখনও খুঁজছি...

দেবের নাচ সৌমিত্রের পছন্দের। আবার এক বারও চোখ না বুলিয়ে পাতার পর পাতা কী ভাবে ‘সৌমিত্রদা’ সংলাপ মুখস্থ রাখেন, তা ভেবেই অবাক দেব। দু’জনের মধ্যে মিল কতটা? ‘‘দু’জনেই কাজ ভালবাসি। চরিত্রের জন্য সব করতে পারি। বাকি মিল এখনও খুঁজছি...’’ বললেন দেব।

লোকেশন সৌজন্য: আইটিসি রয়্ল বেঙ্গল

অন্য বিষয়গুলি:

Dev Soumitra Chatterjee Sanjhbati
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE