Advertisement
২৭ জানুয়ারি ২০২৫
Winkle Twinkle set coverage

মঞ্চ থেকে বড় পর্দা, মাঝে ২২ বছর, ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’-এর শুটিং দেখে এল আনন্দবাজার অনলাইন

২২ বছর পর বড় পর্দার জন্য তৈরি হচ্ছে ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবিটির শেষ দিনের শুটিংয়ে মঞ্চ ও ছবির মধ্যে যোগসূত্র তৈরি হল।

Set coverage of Bengali film Winkle Twinkle starring Ritwick Chakraborty Parambrata Chatterjee directed by Srijit Mukherji

‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনেতাদের সঙ্গে নিজস্বী তুলছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। — নিজস্ব চিত্র।

অভিনন্দন দত্ত
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৪৫
Share: Save:

ছবির শুটিংয়ে উপস্থিত কলাকুশলীরা। কিন্তু যে নাটক অবলম্বনে ছবিটি তৈরি হচ্ছে, তার কুশীলবেরাও লোকেশনে একে একে হাজির হচ্ছেন। সচরাচর এ রকম ঘটনা দেখা যায় না। ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ নাটক অবলম্বনে ছবি তৈরি পরিচালনা করছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়। সম্প্রতি, ছবির শেষ দিনের শুটিংয়ে মঞ্চ এবং বড় পর্দার অভিনেতাদের এক ছাদের তলায় হাজির করে চমকে দিলেন পরিচালক।

দমদমের একটি সরু গলিতে সকাল থেকেই ভিড় জমেছে। পাশের এক তলা একটি বাড়িকে ঘিরে ইউনিট এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের ভিড়। দুপুরে বাড়তি তৎপরতা শুরু হল। কারণ সাদা গাড়ি থেকে নামলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও নাট্যব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসু। তাঁকে স্বাগত জানালেন পরিচালক। ব্রাত্যের লেখা নাটকই সৃজিতের ছবির মূল অবলম্বন। ২০০২ সালে রাজনৈতিক নাটক ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’-এর প্রথম অভিনয় হয়েছিল। নির্দেশক ছিলেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। মূল নাটকে বাবা-ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন দেবশঙ্কর হালদার এবং রজতাভ দত্ত। ছবিতে এই দুই চরিত্রে রয়েছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ১৯৭৬ সালে রাজনৈতিক বন্দি সব্যসাচী সেন। ২৬ বছর পর তিনি ফিরে এসে দেখেন, তাঁর ছেলে ইন্দ্র, বিরোধী রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছে। মূলত পিতা-পুত্রের দ্বৈরথকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে এই নাটকটি।

image of Ritwick Chakraborty and Debesh Chatterjee

শট দিচ্ছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ব্রাত্য তখন মনিটরের পিছনের চেয়ারে বসেছেন। তিনি এই ছবি নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। কারণ সময় এগিয়ে গেলেও ব্রাত্য বিশ্বাস করেন শিল্প সব সময়েই সমকালীন। বললেন, ‘‘শিল্প যখন অতীতে ফেরে, তখন তা বর্তমানকে তুলে ধরার উদ্দেশেই।’’ ১২ বছরে প্রায় ১২৭টি অভিনয়। ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার কথা অতীতেই ব্রাত্যকে জানিয়েছিলেন সৃজিত। পরিচালকের কাজ পছন্দ হয় বলেই, এই ছবি নিয়েও সৃজিতকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন ব্রাত্য। তাঁর কথায়, ‘‘আমি চিত্রনাট্য পড়িনি। কোনও পরামর্শও দিইনি। আমি সরাসরি ছবিটা প্রেক্ষাগৃহে দেখতে চাই।’’

ব্রাত্যের মতোই নাটক থেকে ছবি তৈরির প্রয়াসকে ইতিবাচক দিক থেকে দেখতে চাইছেন দেবশঙ্কর। ফ্লোরে জানালেন, এই ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাবও সৃজিত তাঁকে দিয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা সম্ভব হয়নি। তিনি ইতিবাচক দিক থেকেই দেখতে চান। বললেন, ‘‘এই দুই শিল্পমাধ্যমের মধ্যেই একটা অনায়াস গতায়াত রয়েছে। তাদের মধ্যে যে কোনও রকম ঝগড়া নেই, সেটা প্রমাণ করার জন্য মাঝেমাঝে দু’জনে এ রকম হাত ধরলে কোনও ক্ষতি নেই।’’

ও দিকে বাড়িতে প্রবেশ করবেন দেবেশ। ক্যামেরা পিছন থেকে তাঁর কিছু শট নেবে। শেষ হতেই মনিটরের পেছন থেকে সৃজিতের কণ্ঠস্বর ভেসে এল, ‘‘কাট!’ ওকে।’’ ইউনিট এ বার বাড়ির ভিতরের দৃশ্যের প্রস্তুতি নিতে শুরু করল। ফলে ফ্লোরে মধ্যহ্নভোজনের বিরতি ঘোষণা করলেন পরিচালক। সৃজিতের সেটে রসনাতৃপ্তির আয়োজনে কোনও খামতি থাকে না। শীতের দুপুরে সকলে মিলে একসঙ্গে বসে খাচ্ছেন। অভিনেত্রী অনসূয়া মজুমদার, অঙ্গনা রায় রয়েছেন। এই ছবির মাধ্যমে মূল নাটককে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে চাইছেন সৃজিত। তাই দেবেশের পাশাপাশি একটি বিশেষ চরিত্রে রয়েছেন রজতাভ। অভিনেতাদের দেখার জন্য বাগানের পাশ থেকে প্রতিবেশীদের উঁকি এবং ছবি তোলার প্রয়াসে তখনও ভাটা পড়েনি।

image of Parambrata Chatterjee and Debesh Chatterjee

শটের ফাঁকে কথোপকথনে (বাঁ দিকে) পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

মধ্যাহ্ণভোজনের পর পরমব্রতকে পাওয়া গেল মেকআপ ভ্যানের সামনে। তাঁর শট শুরু হবে আরও পরে। পরমব্রতের মতে, ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ বামপন্থী মতাদর্শকে প্রাসঙ্গিকতাকে তুলে ধরে। বললেন, ‘‘শুধু রাজ্যে নয়, সারা দেশেই বামপন্থী রাজনীতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকা প্রয়োজন। সরকার থেকে তারা কেন সরে গেল, সেই কারণগুলোর দিকেও কিন্তু এই নাটক নির্দেশ করে। ছবির মাধ্যমে আরও এক বার সেখানেই ফিরে যাওয়া সুযোগ রয়েছে।’’

বাড়ির বাইরে পাওয়া গেল ঋত্বিককে। শট দিয়ে এসে কিছু ক্ষণের বিরতি নিচ্ছেন অভিনেতা। ছবিতে তিনি পরমব্রতের বাবার চরিত্রে। জানালেন, মূল নাটকটি তিনি দেখেছেন। কিন্তু ছবির জন্য সেই অভিজ্ঞতাকে ঋত্বিক ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অভিনেতার যুক্তি, ‘‘আমি যে হেতু মূলত ছবিতে অভিনয় করি, তাই মূল নাটকের থেকে আমাকে আলাদা কিছু করতে হবে— সেই চাপটা নিতে চাই না।’’

গায়ে চাদর জড়িয়ে মাইক হাতে সৃজিত মনিটরের পাশে বসে। জানালেন, ২৫ বছর বয়সে প্রথম বার নাটকটি দেখেই তিনি ছবি তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। ‘উইঙ্কল টুইঙ্কল’ কোনও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অবক্ষয় এবং অবনতির দিকে নির্দেশ করে না বলেই বিশ্বাস করেন সৃজিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই নাটকটি আমার কাছে একটা রূপকের মতো। তাই দেশ-কাল ভেদে তা প্রাসঙ্গিক বলেই মনে করি।’’

শেষ দিনে সকলকে এক জায়গায় হাজির করতে পেরে খুশি পরিচালক। বললেন, ‘‘আমার তো মনে হয় এটা দুটো দলের স্মৃতির উদ্‌যাপন। দুপুরে খাবার টেবিলেও আমাদের প্রচুর কথা হল। অনেক তথ্য জানতে পারলাম।’’ বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। ব্রাত্য, দেবশঙ্কর এবং রজতাভ কিছু ক্ষণ আগেই ফ্লোর থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। সৃজিত এ বারে শটে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। রাত পর্যন্ত চলবে শুটিং। হেসে বললেন, ‘‘শেষ দিনে সবটা সময়মতো শেষ করতেই হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Winkle Twinkle New Bengali Film Shooting Coverage Bratya Basu Debshankar Halder Debesh Chattopadhyay Ritwick Chakraborty Parambrata Chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy