‘স্কাই ফোর্স’ ছবিতে অক্ষয় কুমারের লুক। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৬৫ সাল। পাকিস্তানের সরগোধা এয়ার বেস-এর ওয়াচ টাওয়ারে বসে থাকা সেনারা দূর থেকে আসা এক শব্দে চমকে উঠে ফিল্ড দূরভাষে প্রশ্ন করে – “কৌন হ্যাঁয় জনাব!! (মহাশয় কে?)”
উত্তর আসে এক ভারতীয় পাইলটের গলায় “তেরা বাপ, হিন্দুস্তান! (তোর বাবা, হিন্দুস্তান)”
পরমুহূর্তেই এক বিমান হামলায় গুঁড়িয়ে যায় আমেরিকা থেকে পাওয়া পাকিস্তানের বিখ্যাত স্টারস্ট্রাইকারগুলি। ভারতীয় বিমানবাহিনীর এই অভিযানের নাম ছিল ‘মিশন স্কাই ফোর্স’। উইং কমান্ডার ওপি তানেজার নেতৃত্বে এই অভিযান পুরোপুরি সফল হলেও পাকিস্তানে রয়ে যায় তাঁদের সেনাবাহিনীর এক সঙ্গী এবি দেভায়া। তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য তানেজার যে অদম্য চেষ্টা ও লড়াই, তা নিয়েই তৈরি সন্দীপ কিউলানি ও অভিষেক অনিল কাপূরের ছবি ‘স্কাই ফোর্স’।
প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে-পিছে এই ধরনের ছবি মুক্তি পায় এই দেশে। এ যেন একচেটিয়া বিষয়। বিভিন্ন সময়ে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বা বিমানহামলার গল্পকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় এই সব ছবি। আর তাই “ঘর পে ঘুসকে মারেঙ্গে’ মার্কা সংলাপ আর ক্যামেরার কারসাজিতে দু’দেশের সম্মুখ সমর ও রাগের আস্ফালন ছাড়া দেখার মতো আর কিছুই থাকে না।
এই ছবিতে অবশ্য শুধু একে অন্যের উপর বদলা নেওয়া আর উগ্র দেশপ্রেম ছাড়াও অন্য একটা গল্প বলার সুযোগ ছিল। গল্পকার কার্ল অস্টিন, সন্দীপ কিউলানি,ও নিরেন ভট্ট কিন্তু চাইলে এক শিক্ষক-ছাত্রের বন্ধুত্বের গল্প, এক গর্ভবতী স্ত্রীয়ের স্বামীর জন্য নিরন্তর অপেক্ষার গল্প বলতেই পারতেন। খানিকটা করলেনও, তবে ছবির দ্বিতীয়ার্ধে পৌঁছে।
ছবিতে, বাস্তবের ওপি তানেজা নাম বদলে হয়েছেন কেও আহুজা (অক্ষয় কুমার), এবং এবি দেভায়া হয়েছেন টি. বিজয়া ওরফে ট্যাবি (নবাগত বীর পহাড়িয়া)। সব দেশেই যারা সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, নিজেদের জীবনের আর সংসারের মায়া ত্যাগ করেই দেন। তাঁরা তাঁদের দেশ আগলে রাখেন, দেশের মানুষদের ভরসা দিয়ে রাখেন। চেষ্টা করেন যথাসম্ভব, যাতে যুদ্ধের আঁচ সাধারণ মানুষের গায়ে না লাগে। কিন্তু সেনাদের পরিবার পরিজন, বন্ধুবান্ধবের দিন কাটে নিত্য আশঙ্কায়। মাসের পর মাস চলে যায় প্রিয় মানুষকে চোখের দেখাটুকুও না দেখে। কিন্তু যাঁরা দেশের জন্য নিজের জীবন লড়িয়ে দেন, একদণ্ড না ভেবে, সেই দেশ তাঁদের কথা কতটুকু ভাবে? দেশ ও দশের রাজনীতির বেড়াজালে জড়িয়ে গিয়ে, তাঁদের জীবনের মূল্যই বা হয় কতটুকু?
‘স্কাই ফোর্স’ দেখতে দেখতে মনে হবে এই ছবি অনেকটাই ট্যাবি’র নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, বন্ধু আহুজার তাকে খুঁজে বের করার নিরন্তর চেষ্টা, স্ত্রী গীতার অনন্ত অপেক্ষা আর ভারতীয় সরকারের এই ‘সার্চ মিশনে’প্রায় ১৯ বছর দায়সারা থেকে যাওয়ার গল্প হতে পারত। কিন্তু হল না। হল না, বেশ কয়েকটি কারণে।
ছবির নির্মাতারা ট্যাবির বদলে বেশি গুরুত্ব দিলেন আহুজার চরিত্রটিকে। কেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। অথচ অক্ষয় কুমারের থেকে লাইমলাইট সরিয়ে চিত্রনাট্যে বীর পাহাড়িয়ার জন্য আরও বেশ কিছু দৃশ্য রাখলে ভালই হত। কারণ পর্দায় তাঁর উপস্থিতি বেশ সহজ। ট্যাবি আর তার স্ত্রী গীতার (সারা আলি খান) প্রেম আর তাদের পরিবার গড়ে তোলার গল্প আরও একটু সময় পেতে পারত। এমনকি, ট্যাবি নিরুদ্দেশ হওয়ার পর প্রায় ১৯ বছর অপেক্ষা করেছে গীতা (তাদের মেয়েকে বড় করেছে একা হাতে) – এই দিকের গল্পটাও আরও জোরালো হতে পারত। আর তা হলেই কিন্তু ‘স্কাই ফোর্স’ হয়ে উঠতে পারত একেবারে অন্যরকমের ছবি। বিশেষ করে এই ছবির প্রযোজক যখন ‘ম্যাডক ফিল্মস’, তখন এইটুকু আশা তাদের থেকে করাই যায়!
অভিনয়ে আহুজার চরিত্রে অক্ষয় কুমারের একই ধাঁচের অভিনয় আর সংলাপ উচ্চারণে কোনও নতুনত্ব নেই। তাঁর সারাজীবনের কেরিয়ারে এই এক চরিত্র যে কতবার করেছেন, নিজেও হয়তো হিসাব রাখেননি। ট্যাবির চরিত্রে বীর পাহাড়িয়ার অভিনয় মন্দ নয়, কিন্তু তাঁকে দিয়ে গানের সঙ্গে বেশি না নাচালেই ভাল হত। সারা আলি খান বা নিমরত কউরের খুব বেশি কিছু করার ছিল না। তবে ছোট দু’টি চরিত্রে সোহম মজুমদার ও শরদ কেলকারকে ভাল লাগে। সান্তনা কৃষ্ণন রবিচন্দ্রনের ক্যামেরায় বিমান হামলার দৃশ্যগুলি ঝকঝকে ও বাস্তব মনে হয়। তনিষ্ক বাগচীর সুরে গান মনে রাখার মত নয়।
সব মিলিয়ে ‘স্কাই ফোর্স’ অন্য দেশপ্রেমের ছবির চেয়ে আলাদা কিছুই দেয় না দর্শককে। বিরতির পর ছবির গল্প একটু অন্য রকম মোড় নিলেও আদতে হারিয়ে যাওয়া এক বিমানবাহিনীর আধিকারিকের গল্প হয়ে ওঠে না।
বাস্তবে ১৯ বছর উপেক্ষিত থাকার পর মরণোত্তর মহাবীর চক্রে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল। এই ছবিতেও তাঁর আত্মত্যাগ ও তাঁর প্রিয়জনের যন্ত্রণার গল্প সেই অধরাই থেকে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy