পুরিয়া কল্যাণে সানাইয়ে শ্রোতাদের আবিষ্ট করে সুরের আবহ তৈরি হয়েছিল উত্তরপাড়া সঙ্গীতচক্রের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্মেলনের। দুই শিল্পী ভ্রাতৃদ্বয় অশ্বনী শঙ্কর ও সঞ্জীব শঙ্কর উদ্বোধনের যে সুর বেঁধে দিয়েছিলেন সম্মেলনের সমাপ্তিতে শাহিদ পারভেজের সেতারের ঝঙ্কার সেই সুরটাকেই আরও ছড়িয়ে দিল। উত্তরপাড়া জয়কৃষ্ণ সাধারণ গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে ২৩ থেকে ২৫শে জানুয়ারি তিনদিনের এই সঙ্গীত সম্মেলন এ বার ৬০ বছরে পা দিয়েছে।
হীরক জয়ন্তী বর্ষের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনের মেজাজটা বেঁধে দেন শঙ্কর ভ্রাতৃদ্বয়। পুরিয়া কল্যাণে অসাধারণ পরিবেশনার পর মিশ্র পিলুতে ঠুমরি শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। তবলায় যোগ্য সহায়তা করেন প্রশান্ত দে রায়। প্রথমে বেহাগ তারপর মিশ্র দেশ-এ ঠুমরী, পরে টপ্পা, কাজরী, হোরী ঠুমরী--একের পর এক মুক্তো ছড়িয়ে দেন গিরিজা দেবী। ছোট ছোট আঙ্গিকে পরিবেশনা হলেও শ্রোতাদের সুরের মাদকতায় আচ্ছন্ন করে দিয়েছিলেন শিল্পী। কণ্ঠের মাধুর্য শিল্পীর বয়সকে হার মানিয়ে দেয়। তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গতে তাঁর সুন্দর পরিবেশনা এবং মাত্রাবোধ, দুই শিল্পীর সুরের বোঝাপড়াকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়।
কথ্বক নৃত্য পরিবেশন করছেন বিশাল কৃষ্ণ।
পণ্ডিত যোগেশ সামসীর তবলা লহরা এ দিন শ্রোতাদের এক অনন্য পাওয়া। তিন তালের কায়দা, টুকরায় মঞ্চ মাত করে দেন শিল্পী। হারমোনিয়ামে শিল্পীকে সহযোগিতা করেন হিরণ্ময় মিত্র। পরবর্তী শিল্পী পণ্ডিত কৈবল্য কুমার গুরভ বেছে নেন মালকোষ। দীপ্ত কণ্ঠে তার পরিবেশনা শ্রোতাদের তৃপ্তি দেয়। ঝুলা ও ভজন দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন শিল্পী। এ দিনের শেষ শিল্পী পন্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার। সরোদিয়ার চয়নে ছিল রাগ ললিত। পরে যোগিয়া ও শেষে ভৈরব ভাটিয়া দিয়ে নিজের পরিবেশনাকে সুরের আবহে মুড়ে দেন শিল্পী। পণ্ডিত গোবিন্দ বসুর তবলা শ্রোতাদের বাড়তি পাওনা।
দ্বিতীয় সন্ধ্যার প্রথমে ছিলেন পণ্ডিত উমাকান্ত গুন্ডেচা ও পণ্ডিত রমাকান্ত গুন্ডেচা। শিল্পীদ্বয়ের পরিবেশনায় ছিল ধ্রুপদ। রাগ সরস্বতী। ভরাট গলা ও স্বরক্ষেপণে শিল্পীদ্বয়ের নিপুণতা অন্যমাত্রা এনে দেয়। পাখোয়াজে ছিলেন অপূর্ব মান্না। শেষ শিল্পী হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া শুরু করেন মারু বেহাগে। পরে হংসধ্বনি ও শেষে পাহাড়ি ধুন শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। তবলায় শিল্পীর মেজাজকে ধরে রেখেছিলেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃতীয় তথা শেষ দিনের সূচনায় ছিলেন শিল্পী উস্তাদ কামাল সাবরি। সারেঙ্গিতে শিল্পীর প্রথম নিবেদন ছিল চারুকেশি। এরপর তিনতাল, দ্রুত একতাল ও মিশ্র খাম্বাজে টপ্পা ও ঠুমরী এবং শেষে রাগমালা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। তবলায় ছিলেন প্রদ্যোৎ মুখোপাধ্যায়। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর কন্ঠের মাদকতায় পরের অনুষ্ঠান খুবই মনোজ্ঞ হয়ে ওঠে। কাফি রাগে খেয়াল দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করেন শিল্পী। পরে মাঝ খাম্বাজে ঠুমরী তাঁর সঙ্গীতে অনায়াস বিচরণকেই প্রতিষ্ঠিত করে।
পরবর্তী শিল্পী ছিলেন বিশাল কৃষ্ণ। সিতারা দেবীর দৌহিত্র কথ্বক নৃত্যে তরুণ বয়সেই অত্যন্ত পরিণত শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এ দিন তারই আর এক ঝলক দেখলেন শ্রোতারা। শিল্পী শুরু করেন তিন তালে। এরপর ময়ূর নৃত্য, রাধাকৃষ্ণের বিরহ-মিলন ছিল অসাধারণ। তবলায় পূরণ মহারাজ ও কণ্ঠে দেবাশিস সরকার ও সারেঙ্গিতে উমেশ মিশ্র শিল্পীকে যোগ্য সহায়তা দিয়েছেন।
শিল্পী সওকত হোসেন খানের উপহার ছিল রাগ মালকোষ। রামকেলি বন্দিশ দিয়ে নিজের নিবেদন শেষ করেন তিনি। রাগের রূপ প্রকাশে তাঁর মুন্সিয়ানা শ্রোতাদের মুগ্ধ করার পাশাপাশি আগামীতে আরও শোনার আগ্রহ রেখে গেল।
সেতারে শাহিদ পারভেজ ও তবলায় শুভজ্যোতি গুহ। (ডান দিকে) কণ্ঠ সঙ্গীত পরিবেশন করছেন সওকত হোসেন খান। ছবি: প্রকাশ পাল।
সম্মেলনের শেষ শিল্পী শাহিদ পারভেজ ভোর রাতের আবহে স্বাভাবিক ভাবেই বেছে নিয়েছিলেন রাগ আহির ভৈরো। অতি পরিচিত রাগ হলেও উপস্থাপনার গুণে শিল্পীর হাতে তা অন্য রূপে ফুটে উঠেছিল যা মন ভরায় সঙ্গীতরসিকদের। তবলায় ছিলেন শুভজ্যোতি গুহ।
সমগ্র অনুষ্ঠানে সোনালি চট্টোপাধ্যায় এবং অসিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় যৌথ উপস্থাপনায় প্রশংয়ার দাবি রাখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy