এ গল্প শুধু পুরুষের হাতে নারীর অবদমন নয়।
মুম্বই টেলিভিশনের বিখ্যাত অভিনেত্রী ছাব্বিশ বছরের বিভা দত্তা। কাজ চলার সময় ছোট একটি বিরতি নিয়ে একাই উঠে গিয়েছিল স্টুডিয়োর পাঁচ তলার ছাদে। আচমকাই সেখান থেকে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়!
হতভম্ব তাঁর সহকর্মীরা; হতবাক তার লক্ষ লক্ষ ভক্ত। সমস্ত সংবাদমাধ্যম তোলপাড়, এটা দুর্ঘটনা, হত্যা না আত্মহত্যা?
এমএক্স প্লেয়ারে সৌমিক সেন পরিচালিত ‘নকাব’, দেখা যাচ্ছে মোট আটটি ভাগে।
‘নকাব’ অর্থাৎ ঘোমটা, তার আড়ালে ঘটে যাচ্ছে বিভিন্ন ঘটনা। এক জীবনের গভীরে আর এক জীবন, এ যেন গ্রীক পুরাণের দৃশ্যকল্প। একের পর এক উন্মোচন ভেদ করতে করতে সেই ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর প্রাণ ভোমরায় পৌঁছে যাওয়া। তার দংশন সত্যান্বেষের স্বাদ দেবে না বিবেকের জ্বালা ধরাবে- এর সমাধান অবশ্য দর্শকের হাতেই থাকে।
অভিনয়ে এষা গুপ্ত, মল্লিকা শেরাওয়াত, গৌতম রোডে , অঙ্কিতা চক্রবর্তী প্রমুখ। বিভা দত্তর মৃত্যু তদন্তের দায়িত্ব পড়ে ইনস্পেক্টর পবন বিস্ত এবং সাব ইনস্পেক্টর অদিতি আম্রের উপর। অদিতি খুঁজে পায় বিভার ফোন, যেখানে তারকা জগতের হাজার ওয়াটের আলো ভেদ করে ফুটে ওঠে একটা অসহায় মেয়ের জীবন। যার অন্দরে ঢুকে পড়ে বিখ্যাত কিছু চরিত্র আর তাদের বিকৃত যৌনতার উল্লাস।
সিরিজটির গল্প বহুমুখী। এক দিকে অজান্তে করে ফেলা এক ভুলের মাশুল দিতে দিতে চলা সৎ ইনস্পেক্টর পবন, অন্য দিকে সাব ইনস্পেক্টর অদিতি, অন্তর্মুখী মেয়েটির ক্রমশ পাল্টে যাওয়া, সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা, তারকা জগত, নিষিদ্ধ যৌনতা আর নেশার জগৎ।
ফোনের সূত্র ধরে অদিতি ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে চায়, এই মৃত্যু কি আত্মহত্যা, না পরিকল্পনামাফিক হত্যা?
অন্য দিকে প্রবল ক্ষমতাশালী প্রযোজক জোহরা মেহেরা, বিভা যার খুব কাছের মানুষ ছিল, সে কি কিছু লুকোতে চাইছে? তা নিয়ে সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে পবন এবং অদিতি।
এ শুধু তারকা অভিনেত্রীর ঘোমটা সরে যাওয়া নয়, সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে চারপাশের বিখ্যাত থেকে সাধারণ চরিত্রগুলি। ক্রাইম ডিসিপি, প্রবল ক্ষমতা সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা দাভ্রে, বিভার নায়ক গোবিন্দ, সাব ইনস্পেক্টর হয়েও ভীরু গৃহবধূ অদিতি, ইনস্পেক্টর পবন বিস্ত এবং প্রবল প্রতাপশালী প্রযোজক জোহরা মেহেরা, বিভার মৃত্যুর ঝোড়ো হাওয়ায়, ঘোমটা সরে যায় সকলেরই। আর এ সব দুর্যোগের মধ্যে দাঁড়িয়ে, বিভার জীবন মৃত্যুর রহস্য দোলাচলে দুলতে থাকে।
এখানে গল্পের সূত্রধর মৃত বিভার ফোনে রেকর্ড করে রাখা তার জীবনের বিভিন্ন মুহূর্ত। কখন সে ক্ষমতাশালী পুরুষের যৌনতার সঙ্গী, কখনও তার প্রযোজক জোহরা মেহেরার সঙ্গে ভালবাসা এবং শারীরিক ঘনিষ্ঠতার ছবি। অর্থ, প্রতিপত্তি এ সব টিকিয়ে রাখতেই কি এই আপোস?
এ গল্পে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ এবং মেয়েদের অবমাননা দেখানো হয়েছে একাধিক ঘটনায়। প্রশ্ন উঠেছে এই কারণেই কি মেয়েদের ব্যক্তিত্ব বদলে যাচ্ছে? তারা হয়ে উঠছে উভগামী? মেয়েরা মেয়েদের শুধু মানসিক নয়, শারীরিক সম্পর্কেও তৃপ্ত হচ্ছে !
বিভার অর্থ, প্রতিপত্তির মোহে ক্রমশ আচ্ছন্ন হয়ে উঠছিল তার আপনজনেরা, আর ধীরে ধীরে সে হয়ে উঠছিল একা!
বিভার জীবনের সত্যি খুঁজতে গিয়ে, অদিতি নিজের অবচেতনে ঘাপটি মেরে থাকা সত্যের মুখোমুখি হয়। নিজের জন্য বাঁচা কি এতটাই খারাপ? বাইরের জীবনটাকে সে দেখতে শুরু করে। নিজের মর্জিতে বাঁচতে চায় সে। উপর মহল থেকে বিভার ঘটনা নিয়ে তদন্তের যতই চাপ আসুক, সে চায় আসল তথ্যটা খুঁজে বার করতে। সঙ্গে থাকে পবন বিস্ত।
মৃত বিভার হাত ধরেই ইন্সপেক্টার পবন বিস্ত আর অদিতি পৌঁছে যায় নিষিদ্ধ নেশা এবং মধুচক্রে। বেরিয়ে আসে নানা তথ্য।
টেলিভিশন ধারাবাহিকের নায়ক নায়িকার গল্প পল্লবিত হতে হতে বিরাট এক বৃত্ত তৈরি হয়।
তবে শেষ পর্যন্ত এ গল্প শুধু পুরুষের হাতে নারীর অবদমন নয়। আঘাত প্রত্যাঘাত হয়ে ফিরে আসে। অদিতি আম্রে হিসেবে এশা গুপ্ত, জোহরার ভুমিকায় মল্লিকা শেরাওয়াত এবং বিভা দত্ত রুপে অঙ্কিতা চক্রবর্তী চমৎকার।তবে অভিনয়ে আর একটু একাত্মতার প্রয়োজন ছিল। পবন বিস্ত হিসেবে গৌতম রোডের অভিনয় ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy