লকি ওয়েব সিরিজের দৃশ্য।
লোকি
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: কেট হেরন
অভিনয়: টম হিডলস্টোন, সোফিয়া ডি মার্টিনো, ওয়েন উইলসন, জোনাথন মেজরস
৭/১০
মার্ভেল ভক্তদের বহুদিনের আকাঙ্ক্ষা লোকিকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র ছবি বা সিরিজ়ের। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স (এমসিইউ) তাদের ফেজ় ফোর পরিকল্পনায় লোকির জন্য বরাদ্দ করে স্বতন্ত্র সিরিজ়। তখন থেকেই দিন গোনা শুরু ভক্তদের। ঘটন-অঘটনের নায়ক লোকি (টম হিডলস্টোন) মার্ভেলের অন্যান্য ছবিতে যত বার উপস্থিত হয়েছেন, তত বারই তিনি শো স্টেলার। কিন্তু নিজের সিরিজ়েই সে কোণঠাসা! আর এটাই সুপারহিরো ছবির জ়ঁর ভাঙার প্রথম পদক্ষেপ। খলচরিত্রকে নিয়ে তৈরি হওয়া সিরিজ়ের চলন তো অন্যান্য সুপারহিরো গল্পের মতো হবে না। দুটো জায়গায় এই সিরিজ় আলাদা কৃতিত্ব দাবি করে। ছবির মূল চরিত্রের হাতে নিয়ন্ত্রণ নেই। গড অব মিসচিফ বারেবারেই প্যাঁচে পড়েছে। দুই, ‘লোকি’ সিরিজ় মাল্টিভার্সের তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করল এমসিইউ-তে। অ্যান্ট ম্যান এবং ডক্টর স্ট্রেঞ্জের কাহিনিতে মাল্টিভার্স উঠে এলেও, তা এতটা জোরালো ভাবে ছিল না। হয়তো এই সিরিজ় থেকেই মার্ভেলের অন্যান্য কাহিনির গতিপথ নির্ধারিত হবে।
ওডিনের দত্তকপুত্র এবং থরের ভাই লোকিকে অ্যাসগার্ডের সিংহাসন দখলের অভিপ্রায় ছাড়তে হয়েছিল। মতলব ছিল মিডগার্ড বা পৃথিবীর রাজা হবে সে। ‘অ্যাভেঞ্জার্স: এন্ডগেম’-এ টেসের্যাক্ট নিয়ে লোকির অন্তর্ধানের পরের অংশ থেকে এই সিরিজ়ের শুরু। কিন্তু লোকির সব মতলবই ভেস্তে যায় টাইম ভেরিয়্যান্স অথরিটির (টিভিএ) রক্ষকদের জন্য। লোকির কাছে টিভিএ যেমন একটা ধাঁধা, দর্শকের কাছেও তাই। সত্যিই তারা মূল সময়স্রোত বা সেক্রেড টাইমলাইনকে রক্ষা করছে, না কি এটা ভেক? আড়ালে চলছে অন্য খেলা? ভিলেনেরও ভিলেন আছে, সে সব খোলসা হতে চারটে এপিসোড গড়িয়ে যায়। সিরিজ়ের ভিত তৈরি করতে বেশ খানিকটা সময় নিয়েছেন নির্মাতারা। টিভিএ-র কাছে লোকি অপরাধী, কারণ সে সময়ধারার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। তবে শাস্তি দেওয়ার বদলে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কাজে লাগানো হয় তাকে। টিভিএ-র রক্ষক মোবিয়াস (ওয়েন উইলসন) তাকে জানায়, অন্য ইউনিভার্সে তার চেয়েও ক্ষমতাশালী লোকি ভেরিয়্যান্ট (সোফিয়া ডি মার্টিনো) আছে, যাকে ধরার জন্য প্রথম লোকিকে তাদের প্রয়োজন। লোকির মহিলা ভার্শন (সিরিজ়ে যার নাম সিলভি) পর্দায় আসতেই দর্শক বুঝে যান, এ বার খেলা হবে!
এই কাহিনিতে দুই লোকি হাত মিলিয়ে নেয়। লোকির প্রেম কাহিনি কিন্তু চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন পরিচালক কেট হেরন। যে লোকিকে কেউ বিশ্বাস করে না, সে-ও সিলভির আস্থা অর্জন করে। এ বার তাদের প্রতিপক্ষ টিভিএ। খানিকটা কর্পোরেট ধাঁচে চলা এই সংস্থা একেবারে রহস্যের খাসমহল। একটা জট খুললে অন্য ধাঁধা জন্ম নেয়। সামনে আসে সেই ব্যক্তি ‘হি হু রিমেনস’ (জোনাথন মেজরস), যার অঙ্গুলিহেলনে টিভিএ চলে। এই কি তা হলে মার্ভেল ইউনিভার্সের নতুন সুপারভিলেন?
টম হিডলস্টোন লোকির চরিত্রে বরাবরের মতো ক্যারিশমাটিক। খল, ধুরন্ধর, বাকপটু লোকির চরিত্রে অভিনেতা তুলনাহীন। এই সিরিজ়েও তার অন্যথা হয়নি। পাশাপাশি সিলভির চরিত্রে চমকে দিয়েছেন সোফিয়া। সিরিজ়ের ক্রিয়েটর মাইকেল ওয়ালড্রনের হাত দিয়েই বেরিয়েছে সায়েন্স ফিকশন শো ‘রিক অ্যান্ড মর্টি’। ডক্টর স্ট্রেঞ্জের পরের ছবিটির নির্দেশক তিনিই, যেখানে মাল্টিভার্সের থিয়োরি আরও জমজমাট হতে চলেছে। এমসিইউ-র ভিলেন এবং হিরো— দুই ভার্শনেরই নিজস্ব সংজ্ঞা রয়েছে। ‘লোকি’ সিরিজ় কোথাও গিয়ে সেই চিরাচরিত প্রথাকে ভেঙে দেয়। যে লোকি লোকের বিশ্বাস নিয়ে খেলে, তার নিজের বিশ্বাস কোথায় যেন চুরমার হয়ে যায়। গড অব মিসচিফকে অসহায় লাগে। এই জাতীয় ফ্যান্টান্সি ড্রামায় মূল চরিত্রের যে নায়কোচিত জয় দেখানো হয়, ‘লোকি’ সিরিজ়ে তা অনুপস্থিত। এর ফলে লোকি-ভক্ত হিসেবে খানিক মনখারাপ হয় ঠিকই। তবে সিরিজ়ের শেষ অংশ নিশ্চিত করেছে পরের সিজ়নের। আপাতত সেটাই ভরসার জায়গা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy