Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Web Series

আমরা সবাই রানি আমাদের রাজত্বে

সিরিজ়ের পঞ্চম চরিত্র বা চরিত্র না বলে তাকে আয়নাও বলা যায়, শাই (অধ্যা আনন্দ) রানির সৎমেয়ে।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২১ ০৬:০০
Share: Save:

বম্বে বেগমস
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তব
অভিনয়: পূজা, সাহানা, অম্রুতা, প্লাবিতা, অধ্যা
৬.৫/১০

পরিচালক অলঙ্কৃতা শ্রীবাস্তবের আগের দু’টি ছবি ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুরখা’, ‘ডলি কিটি অওর উয়ো চমকতে সিতারে’-তে ছিল নারীত্বের উদ্‌যাপন। সেখানে সমাজের জাঁতাকলে পিষতে থাকা নারী নিজের স্বপ্নপূরণের কথা ভাবে। ছোটখাটো চাওয়া-পাওয়া মেটাতে চায়। নিজের শরীরকে ভালবাসে। অলঙ্কৃতার নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘বম্বে বেগমস’-এ সব উপাদানই আছে। সিরিজ় হওয়ার সুবাদে সেই পরিসর আরও বড়। হয়তো সেটা করতে গিয়েই কিছু খামতি তৈরি হয়েছে। সিনেমার দু’ঘণ্টা আর সিরিজ়ের এপিসোড ব্রেকে দর্শক ধরে রাখার মধ্যে ফারাক আছে। একাধিক চরিত্র এবং তাদের কাহিনির পরতের মধ্যে একটা জমাট বুনন দরকার ছিল। তবে ত্রুটি সত্ত্বেও ‘বম্বে বেগমস’ কিছু জরুরি কথা বলে।

মুম্বইয়ের আলাদা আর্থ-সামাজিক অবস্থা থেকে উঠে আসা চার নারীর কাহিনি ‘বম্বে বেগমস’, যারা প্রত্যেকেই নিজের দুনিয়ার, নিজের মর্জির মালকিন। ছন্দ বজায় রাখার জন্য নামে বম্বে থাকলেও, সমকালের প্রেক্ষিতেই বলা হয়েছে কাহিনি। সিরিজ়ের প্রধান চরিত্র রানি (পূজা ভট্ট)। নাছোড় স্বভাবের রানি অন্যান্য পুরুষ কর্মীদের ডিঙিয়ে রয়্যাল ব্যাঙ্কের সিইও হয়েছে এবং প্রতি মুহূর্তে জায়গা ধরে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। মেনোপজ় দরজায় কড়া নাড়লেও, রানি তা মানতে চায় না। দ্বিতীয় চরিত্র ফতিমা (সাহানা গোস্বামী)। মাতৃত্ব না কেরিয়ার— কোনটাকে গুরুত্ব দেবে? তার স্বামী অরিজয়ের (বিবেক গোম্বার) সন্তানকামনা, ফতিমার চেয়ে অনেক বেশি তীব্র। যার কিছুটা হয়তো কর্মক্ষেত্রে তার চেয়ে এগিয়ে যাওয়া স্ত্রীকে ঘরে আটকে রাখা যাবে, এই ভাবনা থেকেও। ফতিমার মুখ দিয়ে পরিচালক একবারও বলাননি যে, সে আসলে সন্তান চায় না। কিন্তু সাহানার শরীরী ভাষা এবং অভিব্যক্তি তা বুঝিয়ে দিয়েছে। তৃতীয় চরিত্র, ছোট শহর থেকে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে আসা আয়েশা (প্লাবিতা বড়ঠাকুর) সাধ্য আর স্বপ্নের মধ্যে তাল মেলাতে ব্যস্ত। চতুর্থ চরিত্র লিলি ওরফে লক্ষ্মী (অম্রুতা সুভাষ) দেহোপজীবী। ছেলেকে সম্মানের সঙ্গে মানুষ করাই যার একমাত্র লক্ষ্য।

সিরিজ়ের পঞ্চম চরিত্র বা চরিত্র না বলে তাকে আয়নাও বলা যায়, শাই (অধ্যা আনন্দ) রানির সৎমেয়ে। এই টিনএজারের আত্মকথন যেন সিরিজ়ের আত্মা। একটা সংলাপ আছে, ‘সকলেই চায় রানি হতে। কিন্তু সমাজ তাদের আটকে দেয়। সেই বেড়াজাল ভাঙতে না পেরে, নিজের ইচ্ছেটাই অস্বীকার করতে হয় মেয়েদের।’ সহজ কথায় বলা নিঠুর সত্যি।

প্রতিটি চরিত্রই একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। পেশাগত ক্রাইসিস দেখানো হলেও, তা গৌণ এখানে। বরং গুরুত্ব পেয়েছে যৌনতা। চরিত্ররা তাদের যৌন চাহিদা, ইচ্ছে আর সামাজিক ধারণার দোলাচলে ভুগেছে বারবার। বিজ্ঞান বলে, মানুষের স্বভাবের মধ্যেই বহুগামিতা আছে। পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে বিরূপ মনোভাব পোষণ করা ফতিমা নিজে অন্য পুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তথাকথিত ‘ওপেন ম্যারেজ’এ থাকা রানি রেগে যায়, যখন সঙ্গমের সময়ে তার স্বামী মৃত স্ত্রীর নাম নেয়। সেই রানিই আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে যখন বোঝে, প্রেমিক মহেশ (রাহুল বসু) তাদের সম্পর্কটা একটা লেনদেন হিসেবেই দেখেছে। আয়েশা নিজের বাইসেক্সুয়াল সত্তা নিয়ে যতটা নিশ্চিত, প্রেম নিয়ে নয়। উঠে এসেছে কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার মতো জরুরি বিষয়ও।

অভিনয় এই সিরিজ়ের বড় অস্ত্র। অনেক দিন পরে পর্দায় দেখে ভাল লাগে পূজাকে। তবে অতিরিক্ত মেকআপে অনেক সময়েই হারিয়ে গিয়েছে তাঁর অভিব্যক্তি। সাহানা, অম্রুতা, প্লাবিতা এবং অধ্যা প্রত্যেকেই জোরালো ছাপ ফেলেছেন তাঁদের চরিত্রে। অলঙ্কৃতার আগের ছবিগুলো দেখা থাকলে, সিরিজ়ের অনেকে কিছুই ‘রিপিট’ মনে হবে। লিলির ফ্যাক্টরি খোলার বিষয়টিও ফাঁপা লাগে। খোলসা করা হয়নি রানির স্বামীর চরিত্র, ফতিমার আত্মোপলব্ধির অংশটাও। ছ’এপিসোডের সিরিজ়ে চার নম্বর এপিসোডে এসে কাহিনি গতি পাচ্ছে। এটিও সিরিজ়ের আর একটি দুর্বলতা।

তবে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে কিছু দুর্বলতাকে আমল না দিলেও চলে। স্রেফ কিছু ভাল সংলাপ শোনার জন্যই সিরিজ়টি দেখা যায়। পুরুষতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে নিজেদের ইচ্ছেডানা কী ভাবে মেলে ধরবে রানিরা, তার জন্য অপেক্ষা থাকবে আগামী সিজ়নের।

অন্য বিষয়গুলি:

Web Series OTT platform
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy