আরণ্যকের একটি দৃশ্য।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে থ্রিলারের চেয়ে সহজলভ্য কনটেন্ট কিছু নেই। আবার গত তিন বছরে দেশজ থ্রিলারে এত ধরনের গল্প দেখানো হয়ে গিয়েছে যে, নতুনত্বে বাজি ধরাও নেহাত সহজ নয়। নির্মাতাদের কাছে তৃতীয় তাস, এক অভিনব জুটিকে প্রকাশ্যে আনা। বিনয় ওয়ায়েকুলের নেটফ্লিক্স সিরিজ় ‘আরণ্যক’ তৃতীয় তাসের সফল বাস্তবায়ন। রবিনা টন্ডন এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়—দশ বছর আগে যে জুটি কারও ভাবনায় ছিল না! মুখ্য জুটির পাশাপাশি গল্পের বুনন বিশ্বাসযোগ্য। আট পর্বের সিরিজ় শেষ পর্যন্ত থ্রিলারের মান ধরে রাখে।
সিরিয়াল কিলার, রাজনীতির মারপ্যাঁচ, পাহাড়ি এলাকার লোকবিশ্বাস, পশুমানব (নরতেন্ডুয়া) এবং দক্ষ পুলিশ অফিসার— থ্রিলারের পছন্দসই উপাদানগুলি নিয়ে প্লট সাজিয়েছেন চারুদত্ত আচার্য এবং রোহন সিপ্পি। হিমাচল প্রদেশের কাল্পনিক শহর সিরোনার ঘন জঙ্গলে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায় ফরাসি তনয়া এমির (আনা আডর)। ঠিক এমন ভাবেই বেশ কয়েক বছর আগে ওই শহরে উদ্ধার হয়েছিল ন’জন মহিলার মৃতদেহ। স্থানীয়দের মুখে শোনা যায়, এর নেপথ্যে রয়েছে নরতেন্ডুয়া (অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক পশু)। দীর্ঘ বিরতির পরে সে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে ফিরে এসেছে?
এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে অঙ্গদ মালিক (পরমব্রত)। আগের এসএইচও (স্টেশন হাউস অফিসার) কস্তুরী ডোগরার (রবিনা) জায়গায় দায়িত্বভার নিয়েছে অঙ্গদ। কারণ পরিবার-স্বামীকে সময় দেওয়ার জন্য এক বছরের ছুটি নিয়েছে কস্তুরী। কিন্তু কাজের টানে তাকে ফিরতেই হয়। এই মামলায় জড়িয়ে যায় তার স্বামী হরি (বিবেক মদন), মেয়ে নূতন (তনিশা জোশী), শ্বশুরমশাই মহাদেব ডোগরা (আশুতোষ রাণা)। এমির খুনের মামলায় নজরে আরও একগুচ্ছ চরিত্র—রবি পরাশর (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত), জগদম্বা ডুমাল (মেঘনা মালিক), মানহাস (জ়াকির হুসেন), জুলি (ব্রেশনা খান), অশোক শ্রীবাস্তব (ললিত পরিমু) প্রমুখ।
আরণ্যক
(ওয়েব সিরিজ়)
পরিচালনা: বিনয় ওয়ায়েকুল
অভিনয়: রবিনা, পরমব্রত, আনা, আশুতোষ, মেঘনা, জ়াকির
৬.৫/১০
সুস্মিতা সেনের পরে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রবিনার ডেবিউও সফল হিসেবেই গণ্য হবে। বয়সোচিত চরিত্রে নিজেকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ছুড়েছেন নব্বই দশকের গ্ল্যামারাস অভিনেত্রী। বদলাতে হয়েছে বাচনভঙ্গি। তবে পাহাড়ি পুলিশ অফিসার হিসেবে তাঁর মেকআপ আরও একপ্রস্ত হালকা করা যেত। তাঁর পাশে স্ক্রিন প্রেজ়েন্স ধরে রেখেছেন পরমব্রত। অনুষ্কা শর্মা-রবিনার মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে জুটি হিসেবে কেন তাঁকে নেওয়া হয়, তা আরও একবার প্রমাণিত। মেঘনা, জ়াকিরের মতো অভিজ্ঞ চরিত্রাভিনেতারা যেমন তাঁদের চরিত্রে সুন্দর। তেমনই অবাক করছে ওটিটির এই প্রজন্মের কিশোর বয়সের শিল্পীরা। রবিনার মেয়ের চরিত্রে তনিশা বা বান্টি রাওয়াতের চরিত্রে বিশ্বেস সারখোলি সহজ এবং সপ্রতিভ।
আদিম অরণ্য এবং মনুষ্যসমাজ—এই দুইয়ের পারস্পরিক টানাপড়েন বোঝাতেই হয়তো সিরিজ়ের নাম রাখা হয়েছে ‘আরণ্যক’। কিন্তু সেটি সিরিজ়ের দুর্বলতম স্তম্ভ বলে মনে হয়েছে। কারণ জঙ্গলের প্রেক্ষাপটে গল্প সাজানো হলেও, মূল গল্পে সেই বার্তা যেন ঠিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। লোকবিশ্বাসকে হাতিয়ার করে সাজানো ধর্ষণ-খুন-রাজনৈতিক ফায়দা তোলার প্লট বিশ্বাসযোগ্য। থ্রিলার দেখতে অভ্যস্ত দর্শক সম্ভাব্য এক অপরাধীকে ধরে ফেলতেও পারেন। সেই ইঙ্গিত রয়েছে বিভিন্ন পর্বজুড়ে। তবে শেষ চমক খানিক জোলো।
প্রায় প্রতি সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া নতুন থ্রিলারের ভিড়ে ‘আরণ্যক’ এগিয়ে থাকবে অভিনয়ের গুণেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy