দ্য সার্পেন্ট
পরিচালক: টম শ্যাঙ্কল্যান্ড, হান্স হার্বটস
অভিনয়: তাহার, জেনা, বিলি, অমিশ
৬.৫/১০
জঘন্যতম অপরাধ করেও তিনি একজন ‘সেলিব্রেটেড’ ক্রিমিনাল। চার্লস শোভরাজ নামটাই আসলে মিথ, যাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে তৈরি হয়েছে বিবিসি-র লিমিটেড সিরিজ় ‘দ্য সার্পেন্ট’। নেটফ্লিক্সে সম্প্রচারিত আট পর্বের এই ড্রামা সিরিজ়ে ধরা দিয়েছেন বর্ণময় চরিত্রের চার্লস, অন্ধকার জগতে তাঁর সর্পিল বিচরণ আর তাঁর ‘বিকিনি কিলার’/‘সার্পেন্ট’ হয়ে ওঠার কুখ্যাত সব কাহিনি।
নিজের ‘কুখ্যাতি’ একটা সময়ে মোটা টাকায় বিক্রি করেছেন সেই অ্যাডভেঞ্চারের নায়ক। তাঁকে নিয়ে তৈরি সিনেমা, তাঁকে নিয়ে লেখা বই, সাক্ষাৎকারের বিনিময়ে বিপুল অঙ্ক হেঁকেছেন। সত্তরের দশকে হিপি ট্রেলের ‘ত্রাস’ চার্লস কখনও ভেক বদলে, কখনও প্রমাণ লোপাট করে, কখনও বা ধরা পড়েও আইনের হাত থেকে পিছলে বেরিয়ে গিয়েছেন বারবার। ডাচ ডিপ্লোম্যাট হার্মান নিপেনবার্গের তদন্ত, বিভিন্ন দেশের পুলিশ, এমনকি ইন্টারপোল পর্যন্ত বছরের পর বছর লেগে থেকেছে তাঁকে বাগে আনার জন্য। আর এই চোর-পুলিশ খেলতে খেলতেই চার্লসের জীবন চলে গিয়েছে কুড়ি কুড়ি বছরের পার।
সিরিজ়ে এই খেলা দেখা গিয়েছে টাইমলাইনের মুহুর্মুহু জাম্পকাটে, কখনও ছ’মাস এগিয়ে তো কখনও সাত বছর পিছিয়ে। সিরিজ়ের কলেবর বৃদ্ধি এবং দর্শককে খানিক ঘেঁটে দেওয়া সত্ত্বেও ধরা পড়ে যাওয়ার সাসপেন্স ও থ্রিল এলিমেন্ট তৈরি করতে এই টাইম-ট্রাভেল বেশ উপভোগ্য। চার্লসের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য চরিত্রের বিশদ নির্মাণেও কসুর করেননি নির্মাতারা। চার্লসের পার্টনার-ইন-ক্রাইম মেরি-আন্দ্রে লেকলার্ক আর ছায়াসঙ্গী অজয় চৌধুরীর মতোই প্রাধান্য পেয়েছে তদন্তকারী নিপেনবার্গের জীবনও। প্রতি মুহূর্তে চার্লসের কাছে নানা ভাবে তাঁদের হেরে যাওয়ার বিপন্নতাও। তবে সিরিজ়ে সার্পেন্টের অপরাধজগতের গতিবিধি যতখানি আলোয় এসেছে, চার্লসের অতীত, ব্যক্তিগত জার্নি বা হৃদয়হীন মনস্তত্ত্বের কাটাছেঁড়ায় যেন ততটা মন দেওয়া হয়নি। ভারতীয় বাবা ও ভিয়েতনামিজ় মায়ের সন্তান চার্লস তাঁর ছিন্নমূল শৈশব, বর্ণবিদ্বেষের বঞ্চনা দিয়ে নিজের অপরাধ সমর্থন করতে চাইতেন। তাঁর জীবনে আসা নারীদের স্বপ্ন দেখাতেন প্যারিসে গিয়ে নতুন করে সংসার পাতার। কিন্তু সে সংসার, পরিবারের মর্ম তিনি নিজে উপলব্ধি করতেন কি? চার্লস কি সত্যিই কোনও দিন ভালবেসেছিলেন কাউকে? সিরিজ়ে প্রথম স্ত্রী, মেয়ের কথা এলেও উহ্য রয়ে গিয়েছে প্রবীণ বয়সের প্রেম নিহিতা বিশ্বাসের কথা। তিহাড় জেল থেকে চার্লসের কুখ্যাত পলায়নও গুরুত্ব পায়নি সিরিজ়ে। রিচার্ড ওয়ার্লো এবং টোবি ফিনলের লেখা চিত্রনাট্য চার্লসের জীবনের সব দিক সম্পূর্ণ রূপে ধরতে পারেনি। যে ভয়ঙ্কর ক্যারিশমার জোরে তিনি চার্লস শোভরাজ, সিরিজ়ের স্পটলাইট সেখানেই। সেই জোরের সঙ্গে তিনি বলে উঠতে পারেন, ‘আই অ্যাম স্মার্টার দ্যান ক্রাইস্ট।’ চার্লসের মা যখন তাঁকে মনে করিয়ে দেন, জিশুখিস্ট্রকে ৩৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল, সেই প্রসঙ্গেই চার্লসের ওই বক্তব্য।
মা-কে কথা দিয়েছিলেন চার্লস, বৃদ্ধাবস্থার মৃত্যু হবে তাঁর। ৭৭ বছর বয়সি ভগ্নস্বাস্থ্য চার্লস এখনও দিন কাটাচ্ছেন নেপালের কারাবাসে। ২০০৩-২০০৪ সালে চার্লসের নেপালে আসা ও ফের বন্দিদশার পর্ব দিয়ে শেষ হয়েছে ‘দ্য সার্পেন্ট’। নেপথ্যে তখন রোলিং স্টোনসের ‘মুনলাইট মাইল’। সেভেন্টিজ়ের গানে গানে সিরিজ়ের মেজাজ ধরা থেকেছে শেষ পর্যন্ত। মুখের একটিও রেখা না কাঁপা, ভাবলেশহীন চার্লসকে পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন তাহার রহিম। তাঁর যোগ্য সঙ্গতে জেনা কোলম্যান অভিনীত মেরি-আন্দ্রে। বিলি হাউলের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে স্বয়ং নিপেনবার্গের দ্বারাই। চার্লসের ডানহাত অজয়ের ভূমিকায় অমিশ এডিরবিরাও চমৎকার।
দুনিয়াকাঁপানো সিরিয়াল কিলারের বর্ণময় জীবন দর্শানোর জন্য আটটি এপিসোডের সিরিজ়ও যেন যথেষ্ট নয়। তবে ডকুমেন্টেশনের দিক থেকে ‘দ্য সার্পেন্ট’ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে থেকে যাবে। যেমন অপরাধজগতের কিংবদন্তি হয়ে থেকে যাবেন চার্লস শোভরাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy