Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
cinema

Don't Look Up: সত্যিই যদি এমন হত...

গবেষক-ছাত্রী কেট ডিবিয়াস্কি (জেনিফার লরেন্স) একটি বিশাল আকৃতির ধূমকেতু আবিষ্কার করে, যা আগামী ছ’মাসের মধ্যে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে।

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৬
Share: Save:

ছবির পোস্টারেই লিখে দেওয়া ছিল ‘বেসড অন ট্রুলি পসিবল ইভেন্টস।’ ভবিষ্যতে যদি সত্যিই এভারেস্টের সাইজ়ের একটা ধূমকেতু পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে অনাসৃষ্টি ঘটায়, তা হলে কী হবে? গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানী এক হয়ে মুশকিল আসান করবে, না কি যে যার আখের গোছাবে? বাস্তবে কী হতে পারে, দূরবিনে দৃষ্টি রেখে তা নেটফ্লিক্স রিলিজ় ‘ডোন্ট লুক আপ’ ছবিতে দেখিয়েছেন পরিচালক অ্যাডাম মকায়। অতিমারিতে বিপন্ন মানবজাতির সামনে কিছু কঠিন প্রশ্ন এবং ততোধিক কঠিন বাস্তব তুলে ধরেছেন পরিচালক। এই ফিউচারিস্টিক সাই-ফাইয়ের ন্যারেটিভের ছত্রে ছত্রে ব্যঙ্গ। সেই ব্যঙ্গের নিশানায় কখনও আমেরিকার প্রশাসন, কখনও আমজনতা।

গবেষক-ছাত্রী কেট ডিবিয়াস্কি (জেনিফার লরেন্স) একটি বিশাল আকৃতির ধূমকেতু আবিষ্কার করে, যা আগামী ছ’মাসের মধ্যে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়বে। কেট বিষয়টি জানায় তার অধ্যাপক র‌্যান্ডাল মিন্ডিকে (লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও)। তারা দু’জনেই বুঝতে পারে, পৃথিবী ধ্বংসের মুখোমুখি হতে চলেছে। এই ধূমকেতুকে পথভ্রষ্ট করতে কিংবা মাঝপথে ধ্বংস করে দিতে প্রয়োজন বড় মাপের অভিযান, যা প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। কিছুক্ষণের মধ্যে কাহিনি ঢুকে পড়ে আমেরিকার সাদা বাড়ির অন্দরে। এর পর থেকে পরিচালক একের পর এক পাঞ্চলাইন ছেড়েছেন। তুলে ধরেছেন রাজনীতির বিকৃতরূপ।

আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চরিত্রে মেরিল স্ট্রিপ। শক্তিধর দেশের প্রশাসক ধূমকেতু-টেতুকে আমল দেয় না। তার সামনে বড় বড় পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশাসন-সংবাদমাধ্যমকে নিজেদের কথা বিশ্বাস করাতে কালঘাম ছুটে যায় দুই বিজ্ঞানীর। পরিস্থিতি যখন সকলের বোধগম্য হয়, তখন আবার শুরু হয় অন্য খেলা। মানুষের ক্ষমতা, লোভ, লালসা চতুরভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক। ছবির শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট যখন পিঠটান দিতে ব্যস্ত, সে ভুলে যায় তার সন্তানকেও, যে তার প্রশাসনের অংশও বটে। বরং ভবিষ্যতের সুবিধের কথা ভেবে সঙ্গে নিতে চায় র‌্যান্ডালকে। এই স্যাটারিক্যাল সাই-ফাইয়ের এক একটা লাইন আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। ‘‘মানুষকে কি মুখের উপরে বলে দেওয়া যায় তারা আর বাঁচবে না?’’ অতিমারি ধ্বস্ত সময়ে প্রশ্নটা যেন ছ্যাঁকা দিয়ে যায়।

ডোন্ট লুক আপ
পরিচালক: অ্যাডাম মকায়
অভিনয়: লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, জেনিফার লরেন্স, মেরিল স্ট্রিপ, কেট ব্ল্যাঞ্চেট, মার্ক রায়ল্যান্স
৬/১০

ছবির বড় সমস্যা হল, একমুখী চলন। যে সাবপ্লটগুলো ঢোকানো হয়েছে, তা একেবারেই জোলো। টেলিভিশন অ্যাঙ্কর কেট ব্ল্যাঞ্চেটের সঙ্গে লিওনার্দোর পরকীয়া সম্পর্কের কোনও ল্যাজামুড়ো নেই। কেটের মতো অভিনেত্রীর জন্য চিত্রনাট্যে কোনও জায়গা ছিল না। একই ভাবে টিমোথি শ্যালামের সঙ্গে জেনিফার লরেন্সের সম্পর্কটাও ভীষণ অগোছালো ভাবে তৈরি। নির্মাতারা বোধহয় নামী-দামি অভিনেতা দিয়ে ক্রেডিট লাইনের ওজন ভারী করতে চাইছিলেন। আমেরিকা বাদে গোটা বিষয়টা নিয়ে বাকি দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার প্রয়োজন ছিল।

শেষ দৃশ্যের অতিনাটকীয়তা জল ঢেলেছে পরিচালকের বাকি পরিশ্রমে। এতটা ক্যারিকেচারের প্রয়োজন ছিল না। অ্যাপোক্যালিপ্স ডে-তে র‌্যান্ডালের বাড়ির ডাইনিং টেবলের মুহূর্তেই ছবি শেষ হলে সমাপতনটা মজবুত হত।

ছবির অনেক খামতি ঢেকে দিয়েছেন লিওনার্দো, জেনিফার, মেরিল। তিনজনেই দাপটে খেলেছেন। নিজের চেয়ে বেশি বয়সের লুক-মেকআপ নিয়ে লিওনার্দো স্বতঃস্ফূর্ত। রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল মেরিল জানতেন, কতটা রং চড়ানো দরকার ছিল তাঁর চরিত্রে। টেক বিলিয়নেয়ারের চরিত্রে মার্ক রায়ল্যান্সও দুর্দান্ত।

ছবিতে ‘ডোন্ট লুক আপ’ একটা স্লোগানের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এই নামের মধ্য দিয়েই অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালক। ছবিতে একটি সংলাপ রয়েছে ‘ডাজ় হিউম্যানিটি ডিজ়ার্ভ টু বি প্রোটেক্টেড অ্যাট অল?’ বড় রূঢ় প্রশ্ন। অতিমারিতে গা ছাড়া দেওয়া মনোভাব, পরিবেশ নিয়ে হেলদোল না থাকা মনুষ্যজাতিকে হয়তো সত্যিই একদিন এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy