আ রও একটি সামাজিক ট্যাবু। আরও একটি স্মলটাউন স্টোরি। আরও একবার আয়ুষ্মান খুরানা। যথারীতি চেনা ছকেই ছক্কা হাঁকালেন তিনি, এ বারও। আর জিতে গেল ভালবাসা।
শহরটা ইলাহাবাদ। বোনের বিয়েতে প্রেমিক কার্তিককে (আয়ুষ্মান খুরানা) নিয়ে হাজির হয় আমান (জিতেন্দ্র কুমার)। এবং হাজির হয় বলেই সে বিয়ে ভেঙেও যায়। এ বার বাবা-মাকে (গজরাজ রাও-নীনা গুপ্ত) কী ভাবে সহজ কথায় ‘কঠিন’ ব্যাপারটা বুঝিয়ে উঠবে তারা, তাই নিয়েই গোটা গল্পটা। বলিউডের সাম্প্রতিক ট্রেন্ড মেনে এ ছবিতেও ছত্রে ছত্রে হিউমর, স্মলটাউন টক, পারিবারিক তু-তু-ম্যায়-ম্যায়, মেলোড্রামা— সবই রয়েছে। এমন স্ক্রিপ্টের সঙ্গত করেছেন তুখড় সব চরিত্রাভিনেতারা। গল্পটা যখনকার, তখনও সুপ্রিম কোর্ট সমকামিতার উপর থেকে ‘অপরাধ’-এর তকমা মুছে ফেলেনি। তাই শুধু সমাজ নয়, আইনও চোখ রাঙিয়ে তাকায় আমান-কার্তিকের দিকে। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের তোয়াক্কাহীন প্রেম যে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে হোমোফোবিয়া, তা প্রথম থেকেই বোঝা যায়।
স্ক্রিনরাইটার হিতেশ কৈবল্য তাঁর ছবিটিকে আগাগোড়া টানটানই রেখেছেন। তবে কিছু জায়গায় মনে হল, যেন সেন্স অব হিউমরের সঙ্গেও কম্প্রোমাইজ় করেছেন তিনি। মেলোড্রামা রয়েছে পরতে পরতে, কোনও জায়গায় তা ক্লান্তিকরও। যেমন বলিউড থেকে ধার করা কিছু সংলাপের ব্যবহার। এ যুগের অমরীশ পুরী হয়ে যখন গজরাজ ছেলের প্রেমিকের উপর ‘লাঠ্যৌষধি’ প্রয়োগ করছেন, সে দৃশ্যে স্লো-মোশন এবং অতিনাটকীয়তা খানিক চোনা ফেলেছে। গজরাজ-নীনার জুটি ‘হিট’ হয়ে গিয়েছে বলেই এ জুটির অতি-ব্যবহার চোখে লাগে। ছেলের সমকামিতাকে মেনে নেওয়ার জন্য নিজেদের ব্যর্থ প্রেম ও মানিয়ে নেওয়া দাম্পত্যের উদাহরণ না আনলেও চলত। বরং কাকা-কাকিমা হিসেবে মনুঋষি চড্ডা এবং সুনীতা রাজওয়ারের জুটি বেশ স্বতঃস্ফূর্ত। ক্লাইম্যাক্সের ক্রাইসিসে উদ্ধারকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় সেই উকিল কাকাই। যে মেয়েটির সঙ্গে আমানের বিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছিল, সেই চরিত্রটিকে আরও একটু যত্ন নিয়ে তৈরি করতে পারতেন পরিচালক। ছেলের সমকামিতাকে মেনে নিতে না পারার সমান্তরালে বাড়ির মেয়ের (মানবী গাগরু) বিয়ে না হওয়ার সমস্যাও খানিক আরোপিত মনে হয়েছে। যেমন, আমানের পুনর্জন্মের জন্য পুজোপাঠের আয়োজনটিও। আর ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’-এ ছিলেন বলেই কি ভূমি পেডনেকরের একটা ক্যামিও জোর করে গুঁজে দেওয়া হয়েছে? সারা ছবিতে গজরাজ ভুরু কুঁচকে রইলেন, অথচ অনাহূত ব্যক্তিটিকে জোরালো ঘাড়ধাক্কা দিতে পারলেন না। এ ছবিকে ‘সিরিয়াস’ করা যাবে না বলেই কি কোথাও কোথাও বাস্তববিমুখ হলেন পরিচালক?
শুভ মঙ্গল জ়াদা সাবধান
পরিচালনা: হিতেশ কৈবল্য
অভিনয়: আয়ুষ্মান, জিতেন্দ্র গজরাজ, নীনা
৬/১০
প্রেডিক্টেব্ল কাহিনিতে কাটাছেঁড়া করার বিস্তর জায়গা থাকলেও এ ছবির ‘ফিল গুড’ ফ্যাক্টরটি অনস্বীকার্য। যে ট্রাম্পকার্ডের দৌলতে একের পর এক বাজি জিতেছে ‘বালা’, ‘ড্রিম গার্ল’ কিংবা তারও আগে ‘বধাই হো’। আয়ুষ্মানের নানা অবতার নিয়েই বোধহয় এর পর একটা ছবি হয়ে যাবে! এ ছবিতে তিনি নাকে নথ, ফাঙ্কি পোশাকে কখনও রোমিও রূপে, কখনও লাস্যে রাজত্ব করেছেন স্ক্রিনে। কাঁধ মিলিয়েছেন জিতেন্দ্র কুমারও। কমেডির পাশাপাশি তিনি কতটা ভালনারেব্ল হয়ে উঠতে পারেন, তার উদাহরণ হয়ে থাকবে জিতেন্দ্রর এই সহজাত অভিনয়। ভাগ্যিস তিনি খড়গপুর আইআইটি ছেড়ে অভিনয়ে এসেছেন! ভরা বিয়েবাড়িতে চুম্বনের দৃশ্যটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা দেখে হল ফাটানো হাসির রোল। ছবির গানগুলো বিয়েবাড়ির প্লে-লিস্টে থাকতে পারে, মনে দাগ কাটবে না তেমন। বাপ্পি লাহিড়ির ‘ইয়ার বিনা’র ক্ষেত্রেও তনিষ্কের রিমিক্সকে তেমন কৃতিত্ব দেওয়া যাচ্ছে না।
আসল গল্পটা হার-জিতের নয়, কী ভাবে জিতে যায় ওরা দু’জন, গল্পটা সেখানেই। শেষ দৃশ্যে দেখানো হয় সুপ্রিম কোর্টের সেই ঐতিহাসিক রায়ের দিনটি। তার অনেক আগেই যদিও জিতে গিয়েছে ভালবাসা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy