‘কড়ক সিং’ ছবিতে পঙ্কজ ত্রিপাঠী এবং সঞ্জনা সাংহি। ছবি: সংগৃহীত।
একটি স্ক্যাম। আর সেই স্ক্যামকে কেন্দ্র করে সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের প্রেক্ষাপট সাজিয়েছেন পরিচালক অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী তাঁর ছবি ‘কড়ক সিং’-এ। তবে খুব সোজাসুজি সেই রহস্যগল্পে ঢুকে পড়েননি। বরং চার দিক থেকে রহস্যের ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছনোর রাস্তা তৈরি করেছেন। আর গল্পের সূত্রধরের ভূমিকায় রেখেছেন চরিত্রদের। প্রত্যেক চরিত্রের গল্প ধরে একটা একটা করে সুতো ছেড়েছেন রহস্য সমাধানের দিকে। কিন্তু শেষমেশ সেই রহস্য কি দর্শকের কৌতূহল জিইয়ে রাখতে পারে?
ছবি শুরু হয় মাঝপথে। কিছুটা এগোতেই বোঝা যায়, ডিপার্টমেন্ট অব ফিনানশিয়াল ক্রাইমের অফিসার এ কে শ্রীবাস্তব (পঙ্কজ ত্রিপাঠী) আত্মহননের চেষ্টায় ব্যর্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। প্রাণে বেঁচে গেলেও রেট্রোগ্রেড অ্যামনেশিয়ার শিকার হয় সে। ফলে অতীতের বেশির ভাগ ঘটনা ও চরিত্র তার স্মৃতি থেকে মুছে যায়। একে একে গল্পে প্রবেশ হয় তার মেয়ে সাক্ষী (সঞ্জনা সাংহি), প্রেমিকা নয়না (জয়া আহসান), সিনিয়র অফিসার ত্যাগী (দিলীপ শঙ্কর) ও জুনিয়র অফিসার অর্জুনের (পরেশ পাহুজা)। প্রত্যেক চরিত্র গল্প বলতে থাকে এ কে-র জীবনের। এবং প্রত্যেকটা গল্প এসে শেষ হয় এ কে-র আত্মহত্যার চেষ্টা করার রাতে। প্রশ্ন ওঠে আদৌ কি সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল? এ কে-র স্মৃতিশক্তি কাজ না করলেও মস্তিষ্ক সক্রিয়। সে হাসপাতালের বিছানায় বসে জীবনের জিগ-স’ পাজ়ল সমাধান করতে থাকে। প্রত্যেকটা গল্প থেকে রহস্য সমাধানের টুকরোগুলো খুঁজে নেয়।
কোনও ব্যাকস্টোরি ছাড়া ছবি শুরু হয়ে যায় বলে চরিত্রদের সঙ্গে একাত্ম হতে সময় লাগে। তবে অভিনেতাদের গুণে কিছু চরিত্র ও তাদের মাঝের সমীকরণ মন ছুঁয়ে যায়। ঠিক যেমন এ কে-র সঙ্গে নয়নার সম্পর্ক ‘প্রেম’-এর মতো একটা শব্দের ব্র্যাকেটে এনে ফেলা যায় না। আবার এ কে-র হাসপাতালের দিনরাত্রির সঙ্গী সিস্টার কান্নানের (পার্বতী থিরুভতু) সঙ্গে তার সম্পর্কও এক অদ্ভুত ভরসার, যাকে ‘আবার দেখা হবে’ বলা যায় না। কিন্তু মনের অনেকটা জায়গা জুড়ে সে থেকে যায়। তবুও পার্বতীর মতো অভিনেত্রীকে এ ছবিতে সে ভাবে সুযোগই দেওয়া হয়নি। সম্পর্কগুলো ব্যক্ত করতে প্রত্যেকটা চরিত্রকে আরও সময় দেওয়া যেত।
এ কে-র চরিত্রে পঙ্কজ, কান্নানের চরিত্রে পার্বতী, নয়নার চরিত্রে জয়া অপূর্ব। সেই জন্যই হয়তো দুর্বল লাগে সঞ্জনার অভিনয়। চিত্রনাট্য জুড়ে অধিকাংশ দৃশ্যই তাঁকে ফোকাসে রেখে। ফলে পঙ্কজ, পার্বতী, জয়ার মতো শক্তিশালী অভিনেতাদের মাঝে সঞ্জনার আড়ষ্টতা চোখে লাগে। পঙ্কজ-সঞ্জনার মধ্যে বাবা-মেয়ের সম্পর্কের রসায়নও তৈরি হয় না। বড়ই উপর-উপর তাদের বোঝাপড়া। এ কে-র নাম কড়ক সিং কেন রেখেছে তার ছেলে-মেয়েরা, সেটুকু বোঝাতে ব্যাকস্টোরিতে স্বল্পদৈর্ঘ্যের পারিবারিক দৃশ্য তৈরি করেছেন পরিচালক। কিন্তু সেখানেও ছেলেমেয়ের সঙ্গে বাবার সম্পর্কের ভিত তৈরি হওয়ার সময়টুকু দেননি। হয়তো সম্পর্কের দূরত্ব বোঝাতেই। কিন্তু সম্পর্কের দূরত্ব স্পষ্ট করতে সেই সম্পর্কের কাছে আসাও জরুরি। বরং জয়া-পঙ্কজের একসঙ্গে বেশি দৃশ্য না থাকলেও অভিনয়গুণে তাঁদের সম্পর্ক জায়গা করে নেয় দর্শকমনে। রোজ লাঞ্চের সময়ে পঙ্কজ-জয়ার মাঝের অনুচ্চারিত মুহূর্তরা মন ছুঁয়ে যায়। কলকাতার অনেক অভিনেতাও রয়েছেন ছবিতে। ভাল লাগে তাঁদের উপস্থিতি। কলকাতার পুরনো চিনা রেস্তরাঁ, কিছু গলিঘুঁজি, লং শটে বাইপাসের ধারে পাঁচতারা হোটেলের আলোয় সন্ধে নামার দৃশ্যগুলো সুন্দর।
তবে শেষে এসে রহস্য উদ্ঘাটনের দৃশ্য বড় তড়িঘড়ি সাজানো হয়েছে বলে মনে হয়। সব কিছু খুব সহজেই থিয়োরির মাধ্যমে সমাধান হয়ে যায়। বাস্তবেও কি এতই সহজে চিটফান্ড স্ক্যামের পর্দা ফাঁস করা সম্ভব? যদিও পঙ্কজ-জয়া-পার্বতীদের জন্য ছবিটি ধৈর্য ধরে পুরোটা দেখে ফেলা যায়, তবুও শেষে এসে হতাশ লাগে। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার, স্ক্যাম সম্পর্কিত ছবি তো এই প্রথম নয়। ওয়েবের দৌলতে দর্শকের স্মৃতিশক্তি যেমন প্রখর, মস্তিষ্কও যে তেমনই সক্রিয়— সেটা ভুললে চলবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy