‘আরিয়া’র তৃতীয় সিজ়নের একটি দৃশ্যে সুস্মিতা সেন। ছবি: সংগৃহীত।
সিরিজ়ের ট্যাগলাইন, অন্তিম আঘাত। অন্তিম বোধোদয়ও বলা যায়। যে ‘চয়েস’-এর অজুহাতে আরিয়া সারিন (সুস্মিতা সেন) গোটা সিরিজ়ে অজস্র বার বলে গেল, ‘‘ছেলেমেয়েদের বাঁচানোর জন্যই সে ড্রাগ ব্যবসায় নেমেছে।’’ একদম শেষ দৃশ্যে গিয়ে তার মনে হল, সে ভুল করেছিল। কেন এই বোধোদয়, তা ‘আরিয়া’র তৃতীয় সিজ়নের দ্বিতীয় ভাগের চার পর্ব জুড়ে ব্যাখ্যা করেছেন ক্রিয়েটার রাম মাধবানী ও সন্দীপ মোদী।
একটা সিরিজ় কী ভাবে ধাপে ধাপে খারাপ হতে পারে, তার মোক্ষম উদাহরণ সুস্মিতা সেনের ‘আরিয়া’। প্রথম সিজ়নে সুস্মিতার চরিত্রের মধ্যে যৌক্তিকতা ছিল। দ্বিতীয় সিজ়নের মাঝামাঝি থেকে তা উধাও। আরিয়া ড্রাগ ব্যবসার ব্যাটন হাতে নেয়। তখন থেকে সে লেডি ডন। একের পর এক প্রতিপক্ষ আসে এবং আরিয়ার ‘প্ল্যান’এ তারা ধরাশায়ী হয়। তৃতীয় সিজ়ন দু’ভাগে এনেছে ডিজ়নি প্লাস হটস্টার। তবে নির্মাতারা তাঁদের নির্দিষ্ট ছক থেকে বেরোননি। গল্প একই ভাবে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে। তৃতীয় সিজ়নের প্রথম অংশে সুরজ় রায়জ়াদার (ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত) সঙ্গে টক্কর। দ্বিতীয় অংশে নলিনী সাহিবা (ইলা অরুণ)। এ বারেও প্রতিপক্ষর শেষ অবস্থা কী হয়, তা অনুমেয়। কিন্তু আরিয়ার কী হয়? তার তিন সন্তান যে মানসিক টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তারা কি সেগুলো থেকে বেরোতে পারে? বাইরের শত্রুর সঙ্গে লড়াই করা সোজা। কিন্তু ঘরের মানুষই যদি বিপক্ষে গিয়ে দাঁড়ায়, তখন সবচেয়ে বেশি অসহায় লাগে। তৃতীয় সিজ়নের ভাল লাগার দিক বলতে এটাই। আরিয়ার তিন সন্তানই ক্রমশ মায়ের বিপক্ষে চলে যেতে থাকে। সেই অসহায়তার দৃশ্যে ক্ষোভ, কান্নায় ভেঙে পড়া আরিয়া বাস্তবের অনেক কাছাকাছি। বাদবাকি অংশে স্রেফ চর্বিতচর্বণ।
এই সিরিজ়ের টানটান গতিই এর জোরের জায়গা ছিল। অন্তিম পর্বেও সেটাই মানরক্ষা করেছে। তবে ফাঁকফোকর আর যুক্তির অভাবও রয়েছে। শেখাওয়াত মারা যেতেই তার বিশ্বস্ত অনুচর সম্পত (বিশ্বজিৎ প্রধান) মনিবের শত্রু আরিয়ার দিকে চলে যায়। সেই আবার অন্য ‘খবরি’র উপর আক্রোশ উগরে দেয় কেন? যে আরিয়ার বুদ্ধির প্যাঁচে প্রতিপক্ষ থেকে পুলিশ বেকুব বনে যায়, তার চৈতন্য হতে এত দেরি হল কেন? শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা আরিয়া সব সময়ে লং কোট পরেই ঘোরে কেন, তাও বোঝা যায় না! হাতে চুরুট নয়তো ওয়াইনের গ্লাস থাকাও বাধ্যতামূলক, নইলে স্টাইলটাই যে মাটি!
সুস্মিতাকে মাথায় রেখেই চিত্রনাট্য সাজানো হয়েছে। প্রথম সিজ়নে গুরুত্ব পাওয়া ইউনিস খান (বিকাশ কুমার) কিংবা আরিয়ার বন্ধু মায়া (মায়া সারাও) অন্তত জোরালো চরিত্র হওয়া সত্ত্বেও পরের পর্বগুলোয় তাদের উপস্থিতি ফিকে। বিকাশ ও মায়া দু’জনের অভিনয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু যাঁর উপর গোটা সিরিজ় চাপিয়েছেন নির্মাতারা, তিনি সেই চাপ নেওয়ার কতটা উপযুক্ত, সেটাও ভাবার বিষয়। হাতে গোনা দু’-তিনটের বেশি অভিব্যক্তি দেখা যায়নি সুস্মিতার অভিনয়ে। সিরিজ়ের এক একটা জায়গায় তাঁকে দেখতেও আলাদা লেগেছে। সুস্মিতার স্বাভাবিক লালিত্য চাপা পড়ে গিয়েছে।
প্রতিশ্রুতি দেওয়া এবং ভাঙা, অন্ধকার দুনিয়ার এটাই দস্তুর। যবনিকা পতনের দৃশ্যও সে ভাবেই একাধিক মোচড় দিয়ে সাজানো হয়েছে। তবে অন্তিম মোচড় এমনই যে, যুক্তি-বুদ্ধি গুলিয়ে যায়। তবে সমাপ্তিটাই স্বস্তিসূচক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy