Advertisement
E-Paper

সরফিরা: নির্ভুল নয়, তবু অক্ষয়ের দেড়শোতম কাজটি তাঁর জীবনের অন্যতম সেরা হয়ে থাকবে

‘সরফিরা’ ছবিটির মধ্যে ভুল বার করা বেশ কষ্টের। অক্ষয়, পরেশ, রাধিকা, সীমা অভিনীত ছবিটি দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।

Image of Akshay Kumar

সরফিরা ছবির দৃশ্যে অক্ষয় কুমার। ছবি: সংগৃহীত।

অতীন্দ্র দানিয়াড়ী

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৭
Share
Save

বিমানের ‘টেক অফ’ দৃশ্য দিয়ে ছবি শুরু হয়। ছবির গল্পও যেন ‘টেক অফ’ করে ভেসে যায় দর্শকের মনের আকাশে। চিত্রনাট্যের নাটকীয় মোচড়ে বিমানের মতোই কাহিনি এগিয়ে চলে গন্তব্যে। প্রত্যেক যাত্রাপথই কোনও একটা জায়গা থেকে শুরু হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছয়। এই শুরু এবং শেষটা আগে থেকে নির্ধারিত হলেও আসল কাহিনি লুকিয়ে থাকে যাত্রাপথের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি চড়াই-উতরাইয়ের চরম মুহূর্তে। সুধা কোঙ্গারা পরিচালিত ‘সরফিরা’ ছবিটিও এমনই এক যাত্রাপথের গল্প, যেখানে এগিয়ে চলার রাস্তা নুড়ি-পাথরে ভরা, প্রতিটি বাঁক বড়ই দুর্গম। সেই পথ ধরে এগিয়ে চলা এক ব্যতিক্রমী মানুষের স্বপ্নকে সার্থক করার কাহিনি ‘সরফিরা’, যে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েও উঠে দাঁড়াতে জানে, যে আঁকড়ে ধরা স্বপ্নটিকে মাটিতে মিশে যেতে দেয় না, যে চিৎকার করে বলতে পারে, ‘‘আকাশটা কারও বাপের সম্পত্তি নয়, এক বার যখন উড়তে পেরেছি তখন আমি উড়বই।”

২০২০ সালে সুধা কোঙ্গারা তামিল ভাষায় ‘সুরারাই পোট্টু’ নামে একটি ছবি তৈরি করেন। এটি জি আর গোপীনাথের আত্মজীবনী, ‘সিম্পলি ফ্লাই, এ ডেকান ওডিসি’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল। প্রত্যন্ত গ্রামের অতি সাধারণ মানুষ গোপীনাথ স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি একটি স্বল্পমূল্যের ‘এয়ারলাইন্স’ সংস্থা তৈরি করবেন। দেশের গরিব, নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষ কম টাকায় সেই সংস্থার বিমানে চাপতে পারবেন। অনেক বাধাবিপত্তি, ষড়যন্ত্র পেরিয়ে তিনি ‘এয়ার ডেকান’ তৈরি করেন। এ এক ইচ্ছেপূরণের গল্প, এক সামান্য মানুষের অসামান্য হয়ে ওঠার আখ্যান। ‘সরফিরা’ সেই তামিল ছবিটিরই হিন্দি ‘রিমেক’, যেখানে বীর মাত্রে (অক্ষয় কুমার) নামে এক প্রাক্তন বায়ুসেনা আধিকারিক একটি বিমান সংস্থা তৈরির স্বপ্ন দেখে। আশপাশের মানুষের ঠাট্টা, অবজ্ঞাকে গায়ে না মেখে সে এগিয়ে যায় লক্ষ্যের দিকে। ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান ও বাধার মুখোমুখি হয়েও বীর হাল ছাড়ে না। স্বপ্ন সার্থক করার এই অনিশ্চিত পথে তার স্ত্রী রানি (রাধিকা মদন) এবং মা (সীমা বিশ্বাস) তার পাশে থাকে। স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলতে চলতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় দেশের সবচেয়ে বড় বিমান সংস্থার কর্ণধার পরেশ গোস্বামী (পরেশ রাওয়াল)। মাটি থেকে উঠে আসা এক সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের স্বপ্নকে দুমড়েমুচড়ে চুরমার করে দিতে চায় পরেশ। স্বপ্নকে সার্থক করার সেই যাত্রাপথে বীর কি তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে? তার লালন করা স্বপ্ন কি পূরণ হয়? এই সব প্রশ্নেরই উত্তর দেবে ‘সরফিরা’।

Image of Akshay Kumar and Radhika Madan

ছবির দৃশ্যে অক্ষয় কুমার ও রাধিকা মদন। ছবি: সংগৃহীত।

এই ছবিটি অনেক কারণেই দেখা যেতে পারে। প্রথমত, ঝরঝরে চিত্রনাট্য, মন ছুঁয়ে যাওয়া সংলাপ এবং যুক্তিগ্রাহ্য অথচ আকর্ষণীয় একটি গল্প কোনও ছবিকে যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ‘সরফিরা’। সহজ-সরল গল্পের উপর চিত্রনাট্যের ইঞ্জিন ঘড়ঘড় শব্দে সঠিক এবং পরিমিত সংলাপ বলতে বলতে যখন কাহিনিকে টেনে নিয়ে যায়, তখন অসাধারণ এক ভাল লাগা তৈরি হয়, যে ভাল লাগার আবেশ দর্শককে নড়াচড়া করতে দেয় না।

দ্বিতীয়ত, গল্পের চরম নাটকীয় মুহূর্তে পৌঁছে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারাটা বড় অভিনেতার ধর্ম। এই ছবিতে অভিনেতারা তাঁদের চরিত্রে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন, যেটা শিক্ষণীয়। এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্রাভিনেতা পরেশ রাওয়াল এই ছবিতে অসামান্য। বীরের মায়ের চরিত্রে সীমা বিশ্বাস এবং রানি চরিত্রে রাধিকা মদন-এর অভিনয় দর্শক বহু দিন মনে রাখবেন। এই ছবিতে রাধিকা নায়িকা চরিত্রে এক নতুন আঙ্গিক তৈরি করেছেন, যেটি আর পাঁচটা ছবির থেকে একেবারেই আলাদা। অক্ষয় কুমার তাঁর ১৫০তম ছবিতে হয়তো জীবনের অন্যতম সেরা কাজটা করে ফেললেন। ‘ক্লোজ় আপ’ দৃশ্যে বয়স একটু বেশি লাগলেও, বীর চরিত্রে তাঁর সাবলীল অভিনয় দর্শককে সমৃদ্ধ করতে পারে।

তৃতীয়ত, এই ছবিতে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যে ভাবে নাটক তৈরি হয়েছে এবং প্রতিটি দৃশ্যের বিষয়বস্তু যেমন, সিনেমাটোগ্রাফি, সাজসজ্জা, আর্ট ডিরেকশন, আলো, লোকেশন ইত্যাদি যে ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা প্রশংসার দাবি রাখে। লোকেশন অনুযায়ী প্রতিটি দৃশ্যে ব্যবহৃত আসবাব এবং অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে উপযুক্ত গবেষণা এবং যত্ন লক্ষ করা যায়।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

ছবির বেশির ভাগ দৃশ্যই মনে দাগ কাটে। বেশ কিছু দৃশ্য ভোলা যায় না। যেমন, হিংসা ও অহিংসা নিয়ে বীরের সঙ্গে তার বাবার তর্ক, বাবার সঙ্গে বীরের ফোনে কথা বলা, বিমানের ভিতর বীর ও পরেশের তর্ক এবং বীরকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া, বাবার অসুখের খবর পেয়ে বীরের ফিরে আসা বা বীরকে দেখতে আসার দৃশ্যে রানির সঙ্গে বীরের কথোপকথন ইত্যাদি। বাবার মৃত্যুর পর বীর ও তার মায়ের কান্নার দৃশ্যে দর্শক চোখের জল আটকাতে পারেন না।

তবুও ছবিটি সম্পর্কে দু’-একটি কথা বলার থাকে। ছবিতে গান ব্যবহারে আরও একটু সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন ছিল। দর্শক যখন টান টান নাটকের মধ্যে বুঁদ হয়ে আছেন, তখন অযাচিত ভাবে আবহ এবং সঙ্গীতের প্রবেশ সেই আবেশটাকেই কেটে দেয়। সঙ্গীতের পরিমাণ অবশ্যই কমানো যেত, সে ক্ষেত্রে নাটকের গতি বেড়ে ছবির দৈর্ঘ্য কমে যেত। বীরের জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষের টাকা দেওয়াটা একটু অতিনাটকীয় মনে হয়েছে। এখানে আরও একটু যুক্তির প্রয়োজন ছিল বলে মনে হয়। ছবির শেষটা নিয়ে আরও একটু ভাবা যেতে পারত বলে মনে হয়। একেবারে শেষে পরেশ রাওয়ালের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি ছবিটাকে সমৃদ্ধ করতে পারত। শেষে পৌঁছে পরেশ চরিত্রটাকে ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়াটা কেমন যেন অযৌক্তিক মনে হয়েছে।

প্রত্যেক ছবিতেই এমনই কিছু বিষয় থাকে যেগুলি সমালোচনার যোগ্য। সেই বিষয়গুলি দর্শকের উপর কতটা প্রভাব ফেলল, তার উপরই ছবিটির সাফল্য বা ব্যর্থতা নির্ভর করে। সেই অর্থে, সুধা কোঙ্গারা পরিচালিত ‘সরফিরা’ আজকের বাণিজ্যিক ছবির জগতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে।

Akshay Kumar Sarfira New Releases

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।