Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Film Review

Meenakshi Sundareshwar: সংসার সমরাঙ্গনে যুদ্ধ কর দৃঢ় পণে

মীনাক্ষীর সঙ্গে সুন্দরেশ্বর নাম মিলিয়ে যেমন শুধু সম্বন্ধ ঠিক হয় না আজকের দিনে, তেমনই এ প্রজন্মের নব্যবিবাহিতদের সমস্যাও অনেক জটিল।

সায়নী ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৫৯
Share: Save:

মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর
পরিচালক: বিবেক সোনি
অভিনয়: সানিয়া, অভিমন্যু, পূর্ণেন্দু, বরুণ, সুরেশ
৫/১০

বিয়ে নামের প্রতিষ্ঠান ও তার নানা ঝুটঝামেলা পেরিয়ে দুই তরুণ-তরুণী একসঙ্গে থাকতে চায়। তার মাঝে এসে পড়ে যৌথ পরিবার, পায়ের তলার জমি শক্ত করার লড়াই, লং ডিসট্যান্স রিলেশনশিপের হোঁচট ও আরও অনেক কিছু। কিন্তু সব পেরিয়ে একসঙ্গে থাকতে চাওয়াটা কী করে জিতে যায়, সেই গল্পই বলেছে ‘মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর’। মাদুরাইয়ের এই নামের বিখ্যাত মন্দির-প্রাঙ্গণে গল্পের সূত্রপাত। দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্য ছবি জুড়ে আবিষ্ট করে রাখে দর্শককে। সনাতন তামিল পরিবার, তাদের অকৃত্রিম জীবনচর্যা, বিয়ের রীতিনীতি, ঘরের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি বিশদে দেখানো হয়েছে ছবিতে। নবাগত পরিচালক বিবেক সোনি পরিচালিত প্রায় আড়াই ঘণ্টার নেটফ্লিক্স ছবিটি আর কিছু না হোক, দৃশ্যসুখ দেবেই। কিন্তু কাহিনির ভিত্তি আরও জোরালো, আরও খানিক বিশ্বাসযোগ্য হতে পারত।

ম্যাট্রিমোনিয়াল এজেন্সির গলদে ভুল বাড়িতে পাত্রী পছন্দ করতে হাজির হয় সুন্দরেশ্বর (অভিমন্যু) ও তার পরিবার। ঘটনাচক্রে সেটি মীনাক্ষীর (সানিয়া মলহোত্র) বাড়ি। ম্যারেজ বুরো ভুল করলেও দর্শকের বুঝতে অসুবিধে হয় না, গল্প গড়াবে এই জুটিকে ঘিরেই। ইন্টারভিউয়ের ছলে শুরু হয় দু’জনের আলাপ। ‘ইঞ্জিনিয়াররা ভাল স্বামী হয়’— এমন সংলাপ বলেও পাশ করে যায় সুন্দর। রজনীকান্তের ফ্যান মীনাক্ষী আবিষ্কার করে এক মুখচোরা, কোডিং-প্রিয়, নার্ভাস তরুণকে। যে সিনেমা দেখে না, বই বলতে বোঝে বুক-ক্রিকেট। অতএব, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। বিয়েও হয়ে যায় ধুমধাম করে। মীনাক্ষী আর সুন্দরেশ্বর একে অন্যকে চিনতে শুরু করার পাশাপাশি দর্শকের কাছেও চরিত্র দু’টির পরত খুলতে শুরু করে। আর বিয়ের রাত থেকেই সে পথ অমসৃণ।

আসলে চিত্রনাট্য সুযোগই দেয়নি নায়ক-নায়িকাকে কাছাকাছি আসার। গল্পের উপজীব্যও সেটাই। বিয়ের পরেই আলাদা হয়ে যাওয়া এক দম্পতির হন্যে হয়ে পরস্পরকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা। কিন্তু যে কারণে তাদের আলাদা হতে হয়েছে, সেই যুক্তিতে তত ধার নেই। বিয়ের রাতেই চাকরি পাওয়ার মেল আসে সুন্দরেশ্বরের, পণ্ড হয়ে যায় ফুলশয্যাই! যে কোম্পানিতে চাকরি পায় সুন্দর, সেখানে নাকি শুধু অবিবাহিতদের নিয়োগ করা হয়! বিয়ের পরে ছ’মাস কেটে যায়, এক মুহূর্তের জন্যও কাছাকাছি আসার সুযোগ পায় না দু’জনে। ভরসা, ভিডিয়ো কলে রোল প্লে!

নায়ক-নায়িকার কেমিস্ট্রির অভাব যখন তীব্র, তখনই মীনাক্ষীর এক পুরনো বন্ধুকে হাজির করা হয় চিত্রনাট্যে, খানিকটা জোর করেই। মীনাক্ষীর শ্বশুরবাড়িও মনের মতো, তবু অতি সামান্য কারণে তাদের সঙ্গে মনোমালিন্য তৈরি হয় মীনাক্ষীর। এই ঝামেলাটিও যেন জোর করে আমদানি করা! অন্য দিকে, মাদুরাই থেকে বেঙ্গালুরুর নামী কোম্পানিতে চাকরি করতে আসে সুন্দর। তার বস, সহকর্মী, কারও ভাবগতিকই সুবিধের নয়। ইন্টার্নদের তেতো জুস খাইয়ে ট্রেনিং দেওয়া সেই বস সারা দিনে ক’টি কথা বলবে, তার জন্যও অ্যালার্ম সেট করে রাখে! চাকরি বাঁচাবে না বিয়ে, স্থির করতে না পারা সুন্দর শরণাপন্ন হয় থালাইভার! রজনী-ম্যাজিক মিলিয়ে দেয় সব ফর্মুলা!

‘মীনাক্ষী সুন্দরেশ্বর’ অনেকটাই বাস্তব আর কিছু অলীক সমস্যার মিশেলে তৈরি এক শহুরে প্রেমকাহিনি। নায়ক-নায়িকার মতোই দর্শককেও বেজায় ধৈর্য ধরতে হয়েছে সারা ছবিতে। তবে দেবজিৎ রায়ের ক্যামেরায় দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে তামিল পরিবারের বসতবাড়ি, নীলগিরির চা-বাগানের বাঁকাপথ, মীনাক্ষীর গায়ের গয়না থেকে শুরু করে রান্নাঘরের অন্দরসজ্জাও। আরোপিত ভাবে তামিল সংস্কৃতিকে বলিউডি কায়দায় তুলে ধরা নয়, এ ছবির প্রচেষ্টা ছিল আন্তরিক। অভিনয়ে নায়ক-নায়িকাকে কোথাও ছাপিয়ে গিয়েছেন পার্শ্বচরিত্ররা। যেমন সুন্দরের বাবার চরিত্রে পূর্ণেন্দু ভট্টাচার্য। ভাগ্যশ্রীর পুত্র অভিমন্যু এ ছবিতে আরও একবার সুযোগ পেয়েছেন ‘মর্দ কো দর্দ নেহি হোতা’র পরে। কিন্তু নিজের চরিত্রের মতোই তাঁকেও সারা ছবিতে যেন বাধো-বাধো ঠেকেছে। সানিয়ার সঙ্গে তাঁর রসায়নও জমেনি, যা ছবির মূল আকর্ষণ হওয়ার কথা ছিল। সানিয়া তাঁর দিক থেকে চরিত্রের প্রতি সুবিচার করার চেষ্টা করেছেন। আবেগের দৃশ্য বরাবরই ভাল সামলান তিনি, এখানেও অন্যথা হয়নি। অভিমন্যুর অভিনয় তাঁর পাশে খানিক ফিকেই লাগে।

মীনাক্ষীর সঙ্গে সুন্দরেশ্বর নাম মিলিয়ে যেমন শুধু সম্বন্ধ ঠিক হয় না আজকের দিনে, তেমনই এ প্রজন্মের নব্যবিবাহিতদের সমস্যাও অনেক জটিল। কাহিনির লেখকদ্বয় বিবেক সোনি-আর্ষ বোহরা এবং কর্ণ জোহরের ধর্মাটিক এন্টারটেনমেন্ট সে দিকে আর একটু খেয়াল রাখার দরকার ছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Film Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy