ফাইল চিত্র।
প্রিয় প্রেসিডেন্সি,তোমাকে ভালবাসা জানিয়ে ছবি শুরু! তাই মুখুজ্জে মশাইয়ের মতো আমিও তোমার শরণাপন্ন! ছবির এক একটা ফ্রেম যেন তোমার শরীরে বিলীন গুঁড়ো হাওয়া! সাদাকালো কোলাজ জুড়ে ফিরে দেখা হুহু বাতাস আর নিয়ত স্মৃতির কারসাজি! প্রেসিডেন্সি তোমার মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখা? প্রথম ক্লাসরুম? সিগারেট? চুমু? প্রথম সব কিছু?
তোমার মনে পড়ে শুরুর আলাপ? ছেড়া চিরকুটে আমার এক সহপাঠী লিখে দিয়েছিল 'রেখে আতলামি’র কনসিসট্যান্সি/ এগিয়ে চলে প্রেসিডেন্সি!' সেই বুঝলাম আমিও, তোমার খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছি! একের পর এক জানলা খুলে দিলে তুমি ! অলিগলি মিশে গেল রাজপথে! আমাকে ভাসিয়ে নিলে মাতাল স্রোতে!
স্রোতে ভাসতে ভাসতে এক সময়ে শরীরে কাঁপুনি ধরল! টানা সাত দিন জ্বরে কাহিল! গাঁটে গাঁটে তীব্র যন্ত্রণা! বুঝলাম প্রেমে পড়েছি! বুঝলাম প্রেম আসলে ক্ষয়। আরও পরে বুঝলাম প্রেম আসলে স্মৃতির তীব্র দহন!
তোমার ম্যাথসের ছাদ, মেন বিল্ডিংয়ের পিছনের ট্যাঙ্ক আর প্রমোদদার ক্যান্টিন- আমাকে এক ধাক্কায় অনেকটা বড় করে দিল! কলেজ ফেস্টের রাত! ঝকমকি আলো! দুলে ওঠা শরীর! ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে আদিগন্ত উল্লাস! এমন অজস্র অবিন্যস্ত স্মৃতির কোলাজ আমাকে আজও বাঁচার রসদ জুগিয়ে যায়! কখনও ভীষণ অশান্ত করে! খাদের কিনারে ঠেলে দেয়! তুমি আমার সঙ্গে রোজ স্মৃতির সাপলুডো খেলো! ঠিক যে ভাবে পর্দা জুড়ে খেলতে থাকো খিলাত আর জয়ীর সঙ্গে! জানো প্রেসিডেন্সি, খিলাত আর জয়ীর গল্পটাও অনেকটা এক। ছবির প্রথম দৃশ্যেই সুর বেঁধে দেন পরিচালক! হাতে হাত ধরে বেলি ডান্সের ছন্দে মেতে ওঠে ক্লাসরুম! সঙ্গে এগিয়ে চলার মন্ত্রগুপ্তি “We will create our own music!” ঠিক যে ভাবে আমাদের মনের গভীরে বারুদ গুঁজে দিয়েছিলে! সেই বারুদ পুষে রেখে শহর জুড়ে বিস্ফোরণ ঘটায় মুখুজ্জে মশাইয়ের দুই নবাগত! কী নেই ছবিতে! কলেজ ফেস্টের রাত, কবিতার নতুন খাতা, রাজনৈতিক ঝগড়াঝাঁটি, গিটারের টুং টাং, ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সূর্যোদয়! এ যেন আমারই কলেজ জীবনের প্রতিচ্ছবি!
কিন্তু হঠাৎ যদি হারিয়ে যায় মণিমুক্তো? মুহূর্তে শূন্য হয় স্মৃতির সুবর্ণ ভাণ্ডার! সেই শূন্যতায় কি বেঁচে থাকা সম্ভব? নাকি স্মৃতিহীনতাও একটা সফর! যা আমাদের ফিরে দেখার সুযোগ করে দেয়! তখন ভোরের আলোয় ঘাসের ডগায় চিকচিক করতে থাকে এক বিন্দু শিশির! যা নেহাত অবহেলায়, ফেলে আসা দিনে দেখা হয়নি! সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে সেই শিশির বিন্দুর নাম অর্ণব!
থাক, আর ভয় পেতে হবে না! গল্প আমি বলছি না! জানি প্রেসিডেন্সি, বর্তমান-প্রাক্তন মিলিয়ে তোমার আরও অনেক সন্তানদের হলে পাঠানোর প্ল্যান আছে! নির্দ্বিধায় পাঠাও। কিছু না হোক একরাশ স্মৃতি নিয়ে তো ফিরবে! যাই বলো প্রেসিডেন্সি, মুখুজ্জে মশাই এ ছবিতে ঝকঝকে সংলাপ লিখেছেন! দুই নবাগত অনিন্দ্য সেনগুপ্ত ও শ্রুতি দাস নিঃসন্দেহে লম্বা রেসের ঘোড়া! তবে পরিচালক অনিন্দ্য-কে যতটা স্পেস পছন্দের, অর্জুন চক্রবর্তীকে তার এক কণাও দেননি! তার খুব একটা করার কিছুই ছিল না! অর্জুন ও মধুরিমা বসাকের চরিত্রে খামতিও অজস্র! ছবি জুড়ে অনবরত বিপজ্জনক রকম ক্লোজআপ! যা মাঝেমধ্যে ভীষণ অস্বস্তিকর!
চুপি চুপি আর একটা কথা তোমায় জানিয়ে রাখি! যদি তোমার কোনও সন্তান স্মৃতির প্রতিস্থাপন নিয়ে আধুনিক গ্যাজেটের কারসাজি দেখার আশায় হলে ঢোকে, তবে বড্ড নিরাশ হবে! ‘ইটারন্যাল সানশাইন অফ দ্য স্পটলেস মাইন্ড’ গোছের কোন ভবিষ্যৎ-মুখী সাইফাই নয়! এ ছবি আদ্যোপান্ত রোমান্টিক ঘরানার! ছবির প্রাণ অনবদ্য কিছু গান এবং ততোধিক অনবদ্য ভিজ্যুয়ালাইজেশন! বলতে বাধ্য হচ্ছি যাবতীয় খামতি ভরিয়ে দিয়েছেন সঙ্গীত পরিচালক সপ্তক সানাই দাস!
তাই নির্দ্বিধায় তোমার সন্তানদের হলে পাঠাও! আমরা চিরকাল জেনে এসেছি প্রেসিডেন্সি = প্রেম, পলিটিক্স, পড়াশুনো! তাই যদি সর্বসমক্ষে সত্যি খোলসা করে দিই! এক্স আসলে তুমি! এক্স আসলে আমাদের সবার কলেজ জীবন! এক্স আসলে কলেজের ইট, কাঠ, বাতাস! বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে বলছো? এ বার যাদবপুর, আশুতোষ তেড়ে আসবে? আচ্ছা বেশ আমি না হয় থামলাম! বাকি জটিল কুটিল ফ্যাক্টরগুলো হলে বসেই সমাধান হোক!
ইতি,
তুমি যাকে খিলাত, জয়ীর মত ভালবাসতে শিখিয়েছ।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy