‘গোল্ড’ সিনেমার পোস্টার।
ছবি: গোল্ড
পরিচালনা: রিমা কাগদি
অভিনয়ে: অক্ষয় কুমার, মৌনি রায়, কুনাল কাপুর, অমিত সাদ, বিনিত কুমার সিং, সানি কৌশল
না, আপনি কোনও পিরিয়ড পিস দেখতে যাচ্ছেন না। ‘গোল্ড’ তপন দাস (অক্ষয় কুমার) নামক এক কাল্পনিক চরিত্রের ব্যক্তিগত ইচ্ছেপূরণের গল্প। যার সঙ্গে সমানুপাতে মেশানো হয়েছে দেশভক্তি, র্যাডক্লিফ লাইন, ব্রিটিশ বিরোধিতা এবং অতি অবশ্যই ১৯৪৮, অলিম্পিকে হকি টিমের সোনার জয়।
স্বাভাবিক কারণেই যাবতীয় স্পটলাইট দল নয়, ক্যাপ্টেন নয়, টিম ম্যানেজারের উপর। ১৯৩৬-এ জার্মানিকে হারিয়ে হকি জিতেছিল ভারত। কিন্তু তেরঙ্গা ওঠেনি। অধরা থেকে গিয়েছে বন্দেমাতরম্ উচ্চারণ। কোটের ফাঁকে তেরঙ্গা লুকিয়ে শপথ নিয়েছিলেন তপন দাস। স্বাধীন ভারতের হকি টিম গড়বেন। সে দিন তেরঙ্গা উড়বে স্বগর্বে।
কাহিনি এগোয় চেনা ছকে। স্বাধীনতা আসন্ন। মদ্যপ, উচ্ছৃঙ্খল তপন দাস নিজেকে শুধরে হকির নেশায় মশগুল হয়ে দল গড়লেন। ঠিক তখনই ভিলেনের মতো উপস্থিত দেশভাগ, দাঙ্গা। সম্ভাব্য ক্যাপ্টেন ইমতিয়াজ শাহ (বিনীত কুমার সিংহ)-র ঠাঁই হল র্যাডক্লিফের ওপারে। অতএব পুনরায় দুঃস্বপ্ন, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং তপন দাসের হতাশা। পাশাপাশি আছে প্রাদেশিক সংঘাত, ব্যক্তি ইগো এবং দুই সেন্টার ফরওয়ার্ডের লড়াই। রাজ পরিবারের সন্তান রঘুবীরপ্রতাপ সিংহ (অমিত সাদ) চলনে বলনে টিমের সবার থেকে আলাদা। তিনি কাউকে পাস দেন না। সব ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে একাই গোল করেন। আর সুযোগ বুঝে ঠিক সময় আর এক সেন্টার ফরওয়ার্ড হিম্মত সিংহের (সানি কৌশল) বিরুদ্ধে কাঠি করেন। এ যেন ‘চক দে ইন্ডিয়া’র হুবহু পুনরাবৃত্তি। ওখানে ভোকাল টনিক দেন শাহরুখ খান, এখানে অক্ষয় কুমার। ওখানে কোচ, এখানে টিম ম্যানেজার। এমনকি, সেই টনিকও গড়পড়তা এক— আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ না হলে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ব কী করে!
আরও পড়ুন: মুভি রিভিউ: ক্রাইসিসে ‘ক্রিসক্রস’
‘গোল্ড’ ছবির একটি দৃশ্য।
তবে পার্থক্য আছে। সময়টা ১৯৪৮। সদ্য দেশভাগ হয়েছে। অতএব, অন্যান্য ‘জাতীয়তাবাদী’ ছবির মতো এখানে ভিলেন পাকিস্তান নয়, ব্রিটেন। তাই পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস সেমিফাইনালের আগে ভারতীয় টিম ম্যানেজার পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। ফাইনালে পাকিস্তানিরা গ্যালারি থেকে ভারতের হয়ে গলা ফাটায়।
প্রধান চরিত্র যখন বাঙালি তখন হিন্দি ছবিতে টিপিক্যাল বাঙালি সিগনেচার উঠে আসবে না তা-ও আবার হয় নাকি! রিমা কাগদিও এক ফাঁদে পড়লেন। অক্ষয় কুমারকে দিয়ে খারাপ উচ্চারণে বাংলা বলালেন। সেই বাঁধাধরা কয়েকটি শব্দ। ‘উরি বাবা!’, ‘কি মিষ্টি!’ ‘মাছের ঝোল’, ‘গণ্ডগোল’ ইত্যাদি!
রিমার ‘তল্লাস’ দেখে মনে হয়েছিল প্রতিভাবান পরিচালক। কিন্তু রিমা এটা কী করলেন! ১৯৩৬-এর লন্ডল অলিম্পিক জয়ী ক্যাপ্টেন সম্রাটের নাম শুনেই তিব্বতি সন্ন্যাসী মুহূর্তে পাঁচ বছরের মৌনব্রত ভেঙে ফেললেন! এত নড়বড়ে স্ক্রিপ্ট! অভিনয়ও তেমন আহামরি কিছু নয়! সানি কৌশল যথেষ্ট ঝুলিয়েছেন। অমিত সাদ, কুনাল কপূর চলনসই। বিনীতের খুব একটা করার কিছু ছিল না। অক্ষয় কুমার সমসাময়িক অভিনয়ের গ্রাফ ধরে রাখছেন।
যদিও ‘গোল্ড’-এর ঐতিহাসিক সত্যের কোনও দায় নেই। তবু হিম্মত সিংহের আড়ালে বলবির সিংহ এসআর চরিত্রটি যখন আনলেনই আর একটু গবেষণার দরকার ছিল বইকি!
আরও পড়ুন: এমন স্পোর্টস ছবি আগে বলিউডে হয়নি, ‘গোল্ড’-এর প্রচারে বললেন অক্ষয়
‘গোল্ড’ ছবিতে অক্ষয় কুমার।
পুনশ্চ: মৌনি রায় সুচরিতাসু। কোচবিহার ছেড়েছি প্রায় সাত বছর হল। জন্মস্থান ঘিরে আমার কোনও বাড়তি আবেগ নেই। আমার আষ্টেপৃষ্ঠে ভালবাসার শহর কলকাতা। কিন্তু আপনি ফিরে তাকাতে বাধ্য করলেন। আপনার কাঁচা হলুদ ত্বক, ওষ্ঠ অধরের দ্রুত সঞ্চালন, আধো আধো গলার স্বর আর দিঘির মতো চোখ- দিঘির শহর কোচবিহারে ফিরে যেতে বাধ্য করল। আমি জানি, আপনার অভিনয় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও পরিণত হবে। কিন্তু ওই যেখানে অক্ষয় কুমার ছুটে এসে আপনার মুখের সামনে আয়না ধরে। ধীরে ধীরে ভেসে ওঠে আপনার প্রতিচ্ছবি- আমি এক টুকরো কোচবিহার দেখতে পাই। ভাবলেই কেমন রোমাঞ্চ হচ্ছে! এই যাবতীয় ঐশ্বর্য, লালিমার ভ্রূণ গচ্ছিত আছে আমার জন্মভূমিতে! বিশ্বাস করুন মৌনি, এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। এই প্রথম বার জন্মভূমির জন্য এতটা গর্ব হচ্ছে। বহু দিন বাড়ি ফেরা হয় না! মনে হচ্ছে, যাই এক বার ঘুরে আসি। আমার বাড়ি থেকে গাঁধী কলোনি আর কতটা দূর! হাঁটা পথে আমার আপনার বাড়ির ব্যবধান মাত্র মিনিট পনেরো। ফিরবেন নাকি স্মৃতির সরণি বেয়ে ভালবাসার শহরে?
(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy