সৎ, কর্তব্য পরায়ণ, সাহসী, বুদ্ধিমান। আক্ষরিক অর্থেই নায়কোচিত অঙ্কুশ।
জায়গাটা এমনিতেই দুর্নীতি আর অপরাধমূলক কাজের আঁতুড়ঘর। অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়া। তার মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো একের পর এক খুন। রহস্য বাসা বাঁধে। কারা জড়িত এর সাথে? কীসের শত্রুতা? পরপর খুনের নেপথ্যে উদ্দেশ্যই বা কি? নেহাতই ক্ষমতা দখলের লড়াই নাকি প্রতিশোধের জ্বলন্ত আগুন? শুরু মূলত সেই রহস্যভেদ ঘিরেই জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি ‘এফ আই আর নম্বর ৩৩৯/০৭/০৬’। শ্যাডো ফিল্মস, রোড শো ফিল্মস এবং আর টি নেটওয়ার্কের মিলিত প্রযোজনা।
মূল গল্পের ভাবনা অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়ের হলেও কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ পরিচালকের নিজেরই। সহযোগিতায় অনিরুদ্ধ দাশগুপ্ত।
গল্পের কেন্দ্রে রঘুনাথপুর নামে এক জায়গা। সেখানেই একের পর এক খুন। অথচ তার কিনারা করা দূরের কথা স্থানীয় প্রশাসন রীতিমতো উদাসীন! আসলে তারা উপরি উপার্জনের প্রলোভন আর প্রাণের ভয়ে কাঠের পুতুল মাত্র! নানা অসৎ কারবারের মাফিয়া ভগীরথ মিশ্রর আঙুলের সুতো বাঁধা।
ঠিক এমনই একটা অগোছালো ভাবলেশহীন পরিস্থিতিতে আগমন লালবাজার অপরাধ দমন শাখার তরুণ অফিসার অভ্রজিত দত্তের। সে ভূমিকায় অঙ্কুশ হাজরা বেশ মানানসই। গল্পের নিয়মে তিনি আক্ষরিক অর্থেই নায়কোচিত। সৎ, কর্তব্য পরায়ণ, সাহসী, বুদ্ধিমান। প্রথম দিন এসেই আঁচ করে ফেলেন এলাকার হালচাল। এর পরেই হরেক বাধা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরূদ্ধে বুক চিতিয়ে লড়াই শুরু।
‘এফ আই আর’ ছবিতে এষা চরিত্রে স্থানীয় হাসপাতালের এক চিকিৎসকের ভূমিকায় দেখা যায় ঋতাভরী চক্রবর্তীকে। ছবির নায়িকা তিনিই। খুনের ময়নাতদন্ত ও ফরেন্সিক রিপোর্ট ইত্যাদি বিষয়ে নিজস্ব মতামত জানানোর প্রয়োজনেই যার সঙ্গে নায়কের আলাপ। গল্পের আঙ্গিকে চরিত্রটি বহুমাত্রিক হলেও তিনি নিজেকে কতটা মেলে ধরতে পেরেছেন, তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। তবে এষার চরিত্রে মানিয়ে গিয়েছে তাঁকে।
থানার এস আই নরেনের ভূমিকায় অভিনেতা বনি সেনগুপ্তও ছবিতে প্রায় নায়কের সঙ্গে সহাবস্থানে। গল্পের দৃষ্টিকোণ থেকেই। চিত্রনাট্য ও সংলাপে তাঁর চরিত্রটির মধ্যেও কিছুটা ভাঙাগড়ার খেলা রয়েছে। বনির অভিনয়ে সেই চেষ্টার ছাপ স্পষ্ট। কিছু কিছু জায়গায় তাঁর কৌতুকের মুহূর্তগুলো দুর্দান্ত। তবে অঙ্কুশের চরিত্রের গাম্ভীর্য এবং ভাবভঙ্গির পাশে তাকে তুলনামূলক ভাবে কম সাবলীল লাগে। অঙ্কুশ এক কথায় অসাধারণ। তাঁর অভিনয় অভ্রজিতের চরিত্রটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।
শিউলি নামে এক যৌনকর্মীর গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফলক রশিদ রায়। ছবির গল্পে তাঁর চরিত্রের ঘাত প্রতিঘাত এমনই যে, তিনি হয়ত নায়িকার চরিত্রকেও ছাপিয়ে যেতে পারতেন। বাস্তবে অবশ্য তা হয়নি।
রঘুনাথপুর থানার ওসির ভূমিকায় অনির্বাণ চক্রবর্তী নিজের সুনামের প্রতি সুবিচার করেছেন নিঃসন্দেহে। তাঁর সাম্প্রতিক অন্যান্য কাজের নিরিখে যেমনটা প্রত্যাশিত ছিল।
এবং অবশ্যই মাফিয়া রঘুনাথ মিশ্রর ভূমিকায় শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের কথা বলতেই হয়। অনবদ্য। তাঁর সংলাপ বলার ধরন থেকে শুরু করে আদবকায়দা মনে রাখবেন দর্শক।
ছবিতে রূপাঞ্জন পালের ক্যামেরার কাজ ভাল লাগে। তার সঙ্গে চমৎকার কিছু জায়গাও দেখা যায় ছবিতে।
ছবির খানিক দুর্বলতা তার গান। দু ঘন্টা পঁয়ত্রিশ মিনিটের ছবিটি হয়ত আরও মিনিট কুড়ি কম হতেও পারত। ছোট পর্দার পরিচিত মুখ প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্যকে এই প্রথম বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা গেল। ছবিতে তিনি এষার বোন দিশার ভূমিকায়। এ ছাড়াও অভিনয় করেছেন কৌশিক চক্রবর্তী, কৃতি কাঞ্জিলাল, জয়ন্ত হোড় প্রমুখ।
রহস্য রোমাঞ্চ বা থ্রিলার ছবির গল্প বলার দুটো জনপ্রিয় কায়দার সঙ্গে দর্শক পরিচিত। এক- যেখানে খুনি কে, দর্শক বুঝতে পারলেও ছবিতে তাকে কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না। আর দুই- খুন হচ্ছে, কিন্তু কে করছে তা বোঝার উপায় নেই! একাধিক সন্দেহভাজন রয়েছে সেখানে। ‘এফ আই আর’ ছবির ক্ষেত্রে চেষ্টা করা হয়েছে একাধিক সন্দেহের যোগসূত্র রেখে যাওয়ার পদ্ধতিতেই চিত্রনাট্যের চলন। উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত ছবিতে ধরে রাখা গিয়েছে কি না, তা জানতে ছবিটি দেখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy