Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tollywood

Bony Review: দুষ্টু বিজ্ঞানী ও মাতৃস্নেহের লড়াইয়ে জিতে গেল শীর্ষেন্দুর বহুমুখী গল্প

শীর্ষেন্দুর উপন্যাস এবং পর্দায় জমাটি গল্প-বলার মুন্সিয়ানায় এ বার বাংলা ছবিতে টানটান কল্পবিজ্ঞান।

প্রযুক্তির ভাল দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকগুলি মানবজাতির জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তারই গল্প বলে 'বনি'।

প্রযুক্তির ভাল দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকগুলি মানবজাতির জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তারই গল্প বলে 'বনি'।

পৃথা বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৪২
Share: Save:

যাঁরা শীর্ষেন্দুর লেখার ভক্ত, তাঁদের অনেকের কাছে ‘বনি’র গল্প জানা। কিন্তু যাঁদের জানা নয়, তাঁদেরও কোনও অসুবিধা হবে না এ ছবি দেখতে গিয়ে। লেখকের বহু উপন্যাসই এমন বহুমুখী যে, তা সহজেই যে কোনও সময়কালে ফেলা দেওয়া যাবে। ‘বনি’ও তার মধ্যে অন্যতম। প্রযুক্তির ভাল দিকের পাশাপাশি খারাপ দিকগুলি মানবজাতির জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তারই গল্প বলে 'বনি'। সেই গল্পই পর্দায় নিপুণ ভাবে পর্দায় তুলে ধরেছেন ছবির পরিচালক-নায়ক।

ছবির কাহিনির তিনটি আলাদা ভাগ রয়েছে। এক দিকে রয়েছে মিলানবাসী এক বাঙালি দম্পতি সফ্টওয়্যার প্রযুক্তিবিদ সব্যসাচী এবং জৈব-রসায়নবিদ প্রতিভা এবং তাদের নবজাত সন্তান। জন্মের পর থেকেই কথা বলা বা নড়াচড়া করতে অপারগ শিশুটি হঠাৎই কিছু অলৌকিক ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। তার পর থেকেই সব্যসাচী-প্রতিভার জীবনে নানা রকম বিপদ নেমে আসে। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে কলকাতার ছাপোষা শখের বিজ্ঞানী রামমোহন। সে হঠাৎই এক দোকান থেকে একটি পড়ে থাকা খারাপ রোবট কিনে বাড়ি নিয়ে আসে। ঠিক তার পর থেকেই তার বাড়িতে নানা রকম অদ্ভুত কাণ্ডকারখানা শুরু হয়। এবং ছবির তৃতীয় ভাগে রয়েছেন এক বিশ্বখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী শওকত ওসমান, যিনি এআই নিয়ে এমন কিছু আবিষ্কার করেছেন যার ফলে তাঁকে আমেরিকা ছেড়ে পালাতে হয়। ছবির এই তিন দিগন্ত কী ভাবে একে অপরের সঙ্গে এক সুতোয় জুড়ে যায়, তাই নিয়েই গল্প ছবির।

বহু বছর ধরেই কল্পবিজ্ঞান নিয়ে প্রচুর মনে রাখার মতো ছবি হয়ে গিয়েছে হলিউডে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হবে বলিউডকেই। সেই দৌড়ে বাংলা ছবি যে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। ভিএফএক্স, স্পেশ্যাল এফেক্টস বা ছবির অন্যান্য প্রযুক্তিগত দিকগুলিতে বাংলা ছবির হোঁচট খাওয়ারই কথা। কিন্তু ‘বনি’র ক্ষেত্রে ছবির নির্মাতা সুরিন্দর ফিল্মস্‌ সেই ত্রুটিগুলি সুকৌশলে ঢাকতে পেরেছে চিত্রনাট্য এবং সম্পাদনার গুণে। শুরু থেকেই গল্প এগিয়েছে তরতরিয়ে। টানটান উত্তেজনাও ধরে রাখতে পেরেছেন পরিচালক। কী হচ্ছে, কারা করছে, শেষমেশ কী হবে, সেই কৌতূহল দর্শকের মনে তৈরি করা গিয়েছে আগাগোড়াই।

তবে নির্মাণের দক্ষতা ছাড়াও এই ছবির আরেকটি বড় জোরের জায়গা ছিল— শীর্ষেন্দুর গল্প। গ্রাম বাংলার সহজ সরল মানুষ, সমাজের কিছু প্রান্তিক ব্যক্তিত্ব, বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, অতিলৌকিক বারবার মিলেমিশে ফিরে এসেছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিভিন্ন লেখায়। সেখানে অনেক সময়েই সাদা-কালোর বিভেদটা তেমন অনড় নয়। এই গল্পটি অবশ্যই সেই দিক থেকে অনেকটা আলাদা। এখানে কারা ভাল, কারা খারাপ, তা বুঝতে কোনও রকম অসুবিধা হবে না দর্শকের। কিন্তু গল্পে রয়েছে অন্য আরেকটি শীর্ষেন্দু-সুলভ বৈশিষ্ট্য। মানুষের সঙ্গে প্রযুক্তির সম্পর্ক নানা দিক খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে এখানেও। তাই গল্পে যে এআই চালিত সুপার হিমানয়েড রয়েছে, বিশ্বযুদ্ধে মানবশক্তি ব্যবহার করে নতুন ধরনের অস্ত্র তৈরির উল্লেখ রয়েছে, ‘দুষ্টু’ বিজ্ঞানী রয়েছে, তেমনই রয়েছে দাম্পত্য জীবনের ঘনিষ্ঠতা, সৎ বিজ্ঞানী, পাড়া-পড়শির আড্ডা, বাবা-মায়ের সন্তানের প্রতি পক্ষপাতশূন্য স্নেহ এবং রয়েছে সন্তানকে বাঁচাতে শেষ অবধি লড়ে যাওয়ার গল্পও। যার জন্য টানটান কল্পবিজ্ঞানও হয়ে দাঁড়ায় মানবিকতার নয়া পুরাণ।

সব দৃশ্যেই কোয়েল সমান সাবলীল।

সব দৃশ্যেই কোয়েল সমান সাবলীল।

এই জায়গায় প্রতিভার চরিত্রে কোয়েল মল্লিকের উল্লেখ না করলেই নয়। সন্তানকে সব রকম বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে যে কোনও মায়ের মধ্যে যেমন দৃঢ়তা দেখা যায়, তা দিব্যি ফুটিয়ে তুলেছেন কোয়েল। আতঙ্ক, ভালবাসা, আবেগঘন বা অ্যাকশন— সব দৃশ্যেই কোয়েল সমান সাবলীল। অঞ্জন দত্ত ওসমানের চরিত্রে অভিনয় করছেন নিজস্ব ভঙ্গিতেই। রামমোহনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কাঞ্চন মল্লিক। চিত্রনাট্যের যখন এক দিকে সারাক্ষণ চাপা উত্তেজনা, তখনই রামমোহনের চরিত্রে কাঞ্চনে অভিনয় দেখে খানিক হাসির মুহূর্ত উপহার পাবেন দর্শক।

ছবির বুনোট মজবুত। তাই গল্পের বেশ কিছু ফাঁকফোকর দর্শক অনায়াশে এড়িয়ে যেতে পারেন। কেন ইটালির লোকেরা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলছে, বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মানবাস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করছে যে মাদার কম্পিউটার, তা কী করে এত সহজে ধ্বংস করে ফেলা যায়, এই জাতীয় বেশ কিছু প্রশ্ন উঠতেই পারে। কিন্তু পুজোর বাজারে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সকলের সঙ্গে হইহই করে যদি একটি হাল্কা মেজাজের ছবি দেখে আনন্দ পেতে চান, তা হলে এই সব প্রশ্ন বেশি না করাই ভাল। ছবির শেষে কলাকুশলীর তালিকা যদি ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত দেখতে পারেন, তা হলে বুঝবেন, সিক্যুয়েলের একটি সম্ভাবনা খোলা রেখেছেন পরিচালক।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy