যে সময়ে ইমেলের বদলে হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা হয় বেশি।
যে সময়ে ফেসবুকের চেয়ে জেনওয়াই বেশি ঝুঁকছে ইন্সটাগ্রামে।
সে সময়ে হাতে লেখা চিঠির কি কোনও অর্থ আছে? নাকি আছে?
ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপের এই তীব্র কানেক্টিভিটির যুগে আমরা কি সত্যিই ততটা কানেক্টেড যতটা আমাদের ইন্টারনেট কানেকশন? নাকি লো সিগনাল ওয়াইফাইয়ের মতো পারস্পরিক সম্পর্কেও ভাঁটা পড়ছে আস্তে আস্তে?
‘ডাকবাক্স’ ছবি সেই অর্থ খোঁজার চেষ্টা করেছে। শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান’ কবিতায় লিখেছিলেন ‘আমরা ক্রমশই একে অপরের কাছ থেকে দূরে চলে যাচ্ছি/ আমরা ক্রমশই চিঠি পাবার লোভে সরে যাচ্ছি দূরে’। এ ছবির অনুপ্রেরণাও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাটি।
শহরের এক প্রান্তে পড়ে আছে বাতিল এক ডাকবাক্স। সে বাক্সে ফেলা চিঠি পৌঁছবেও না কারও কাছে। কোনও দিন। তবু রাতের অন্ধকারে কেউ নিয়মিত নাম না লেখা চিঠি ফেলে দিয়ে যায় তাতে। কিন্তু কেন? কার কাছে পাঠাতে চায় সে সব চিঠি? সমান্তরালে আর একটা গল্প চলতে থাকে। তথ্যচিত্র নির্মাতা সৃজা রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার হয়ে কাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে অনেক দিন। ‘তোমার আমার ফারাকের নয়া ফন্দি’তে স্বামীও তাকে ছেড়ে গিয়েছে। এমন একাকীত্বময় সময়ে তার জীবনে প্রবেশ করে অভ্র নামে এক ফোটোগ্রাফার। কিন্তু অভ্রর পেশা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটে না সহজে। তা হলে কে এই অভ্র? তার উদ্দেশ্যই বা কী?
সাইকোলজিকাল থ্রিলারে গল্পের শেষ বলে দেওয়ার কোনও মানে হয় না। ওটা হলে গিয়ে জানাই ভাল। শুধু এটুকু বলা যায়, একদম আনকোরা প্রযোজক-পরিচালকের কাজ মন্দ লাগবে না। বিশেষ করে সৃজার চরিত্রে সুপ্রীতি চৌধুরী ও অভ্রর চরিত্রে সত্রাজিৎ সরকারের অভিনয় বেশ ভাল। থিয়েটারে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন ভাল ভাবেই।
ডাকবাক্স
৫.৫/১০
সুপ্রীতি, সত্রাজিৎ, প্রদীপ
তবে ছবির সমস্যাটাও ওখানেই। প্রথম কাজে অনেক ভুলভ্রান্তি থাকে। সেটাই স্বাভাবিক। অপটু হাতের ক্যামেরার ফ্রেম ঠিকঠাক না ধরাতে পারা। কখনও বা অতিরিক্ত ক্লোজ আপের ব্যবহার। এ সব আছে ছবিতে। আর তাতে কিছুটা ধাক্কা লাগে বইকী। এমনকী ছবির প্রথম অর্ধের শ্লথ গতি সম্পাদনার ত্রুটি দেখিয়ে দেয়।
কিন্তু প্রথম প্রযোজনার এই সব ত্রুটিকে ক্ষমা করে দিলে ছবিটা খারাপ লাগবে না। প্রথম অর্ধের ধীর গতি দ্বিতীয় অর্ধে থ্রিলারের জট ছাড়ানোয় ঢাকা পড়ে যায়। আর সে ক্ষেত্রে চিত্রনাট্যের প্রশংসা না করে উপায় নেই। যেমন প্রশংসনীয় ছবির সংলাপ আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডিটেল। যেমন, ছবির বাজেট কম। তাই স্বাভাবিক ভাবেই অভ্রর জন্য কোনও প্রোফেশনাল ক্যামেরার ব্যবস্থা করা যায়নি। কিন্তু দর্শকের যাতে খটকা না লাগে তাই হয়তো সংলাপে সেটাকে ‘বাড়ির ক্যামেরা’ বলা হয়েছে। সৃজার মায়ের মুখের একবারও ব্যবহার না করা প্রথম অর্ধে খটকা লাগলেও, দ্বিতীয় অর্ধে বোঝা যায় কেন সেটা ইচ্ছাকৃতভাবেই করেননি দুই পরিচালক–চিত্রনাট্যকার প্রসেনজিৎ চৌধুরী ও অভিজিৎ চৌধুরী।
থ্রিলারে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের বাড়াবাড়ি একেবারেই কাম্য নয়। সেটা থেকে বিরতই থেকেছেন সঙ্গীত পরিচালক। তবে রূপঙ্করের গাওয়া ‘স্বপ্ন দেখি স্বপ্ন দেখাও তাই’ ছাড়া অন্য কোনও গান বিশেষভাবে মনে থাকে না।
ছবির গুণগত মানের দিক থেকে বলতে গেলে পাশ মার্কস তো নিশ্চয়ই পেয়েছে। কিছুটা বেশিই। বিশেষ করে প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে ভাবলে মন্দ নয়, এবং ছবির আইডিয়াটা দারুণভাবেই প্রাসঙ্গিক।
তাই প্রথম অর্ধ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে পারলে, শেষ অর্ধ খারাপ লাগবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy