বছর ছয়েক আগে ডিজ়নি যখন প্রথম ‘ফ্রোজ়েন’ ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি এনেছিল, তার পর থেকে দুই বোনের প্রতি দর্শকের আগ্রহ উত্তরোত্তর বেড়েছে। ‘ফ্রোজ়েন টু’ দেখার পরে সেই ভালবাসার পারদ গগনচুম্বী হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ পরিচালক এ বার শুধু মিউজ়িক্যাল ম্যাজিক দেখিয়ে ক্ষান্ত হননি। তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে গল্পের বাঁধুনি, চরিত্রের গভীরতা আর দর্শককে আটকে রাখার মতো আরও অনেক কিছু। সেই কারণে এলসা-আনার গল্প অ্যানিমেটেড হওয়া সত্ত্বেও পরিণত হয়েছে রক্ত-মাংসে।
সময় বয়ে গিয়েছে। বড় হয়েছে এলসা আর আনা। তাই কোনও কিছুতে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে পরিণত এলসা বারকয়েক ভাবে। মা-বাবাকে হারালেও তার জীবন এখন বোন আনা, আদরের ওলাফ ও স্ভেন এবং বন্ধু ক্রিস্টফের সাহচর্যে পরিপূর্ণ। তবু তাকে ঘুমোতে দেয় না কোনও এক সম্মোহনী সুর। যে টানে যুগে যুগে ঘর ছাড়াই যেন দস্তুর। সেই সুরের উৎস খোঁজার পাশাপাশিই উঠে আসে অতীত। সে আঁধারে ডুবে রয়েছে এলসা-আনার দুনিয়া অ্যারেনডালের ভবিষ্যৎ। নিজেদের দুনিয়া বাঁচাতে বেরিয়ে পড়ে এলসা-আনা-ওলাফ-স্ভেন-ক্রিস্টফের পুরনো দল। পথে চমৎকার সব কাণ্ড। অসাধারণ ভিসুয়ালে থমকে যেতে হয়। বরফ, জলকণা মিলিয়ে এলসার শক্তি পৌঁছয় অনন্য মাত্রায়।
তবে এ ছবি শুধু এলসার নয়। আনা, যার নেই অসাধারণ ক্ষমতা, যে প্রতি পদক্ষেপে হারানোর ভয় পায়, যে একেবারেই আমাদের মতো সাধারণ, ‘ফ্রোজ়েন টু’ তারও। একটা সময়ে সব কিছু হারিয়ে আনা একা দাঁড়িয়ে থাকে অন্ধকার জগতে। নেই কোনও আশা। আনা তখন শুধু উঠে দাঁড়িয়ে এক পা-এক পা করে হাঁটার কথা ভাবে। তার পরে উঠতে যায় সামনের পাহাড়ে। ধীরে ধীরে খুলে যায় পথ। আনার উত্তরণ কি জীবনেরও পাঠ শেখায় না?
ফ্রোজ়েন টু
পরিচালনা: ক্রিস বাক,
জেনিফার লি
স্বর: ইডিনা মেনজ়েল, ক্রিস্টেন বেল, জোনাথন গ্রফ, জশ গাড
৭.৫/১০
এ ছাড়া আছে ভ্রাতৃত্ববোধের কাহিনি। গল্পের মোড়ক খোলার সঙ্গে সঙ্গে দুই বোনের একে অপরের প্রতি টান, দায়িত্ববোধ, মর্যাদা আর ভালবাসা পৌঁছয় অন্য স্তরে। যা শুধু মনে রাখারই নয়, শেখারও। শিকল ভেঙে এগিয়ে আসা, নারীর ক্ষমতায়ন, বন্ধুতার টান আর কঠিনের সামনে দাঁড়িয়ে সত্যের মুখোমুখি হওয়া... দেখানো হয়েছে সব। কিন্তু কোথাও তা আরোপিত নয়। খুদে থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব দম্পতিকেও টেনে বসিয়ে রাখে হলে, শুধু মাত্র গল্প বলার বাঁধুনিতে।
আর আছে মিউজ়িক। যে সুর এলসাকে ডাক দেয়, যে গানে আনা ফিরে পায় এগিয়ে চলার শক্তি, সেই সুর হল থেকে বেরিয়েও গুঞ্জরিত হয় মনে। যোগ্য দোসর ভিএফএক্স ও দৃশ্যায়ন। ফলে কাকে এগিয়ে রাখব, আর কে থাকবে পিছিয়ে— এ প্রশ্ন অবান্তর। চরিত্রের স্বর দিয়েছেন যাঁরা, তাঁরাও একেবারে যথাযথ।
এ ছবিতে বারবার উঠে এসেছে প্রকৃতির কথা। অ্যানিমেশনের হাত ধরে প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলার কায়দা ডিজ়নির নতুন নয়। ‘মোয়ানা’ও জয়গান গেয়েছিল সুস্থ পৃথিবীর। আর জল, বায়ু, পৃথিবী, আগুনকে শান্ত করার বার্তা দিয়েছে এলসা-আনা। কারণ পৃথিবী আজ সত্যিই বিপন্ন। তাকে বাঁচাতে হলে রূপকথার পথ ধরা ছাড়া উপায় কই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy