বালিকা বধূ ও দেবদাস-এর দৃশ্য। পাশে স্বরলিপির পোস্টার।
ছবিগুলির কথা লোকমুখে ঘোরে। কিন্তু দেখতে পাওয়া যায় না। জনপ্রিয় গানগুলো শোনা যায়। কিন্তু কেমন ছিল তাদের দৃশ্যায়ন, জানার উপায় মেলে না। সম্প্রতি এমনই কিছু প্রায় স্মৃতির অতলে চলে যাওয়া বাংলা ছবির পুনর্জন্ম হয়েছে পুণের জাতীয় চলচ্চিত্র আর্কাইভে।
আর্কাইভের তরফে তাদের কাছে গচ্ছিত থাকা ছবিগুলোর রেস্টোরেশন এবং ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে বেশ কিছু দিন ধরেই। বাঙালি দর্শকের জন্য সুখবর এটাই যে, তার মধ্যে এমন কিছু বাংলা ছবি রয়েছে যেগুলো দীর্ঘদিন চোখের আড়ালে ছিল— তরুণ মজুমদারের ‘বালিকা বধূ’, অসিত সেনের ‘স্বরলিপি’, মৃণাল সেনের ‘পুনশ্চ’ এবং অরুন্ধতী দেবীর ‘ছুটি’।
আরও একটি দুষ্প্রাপ্য ছবি, উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘চন্দ্রনাথ’-এর ১৬ মিলিমিটার প্রিন্ট আর্কাইভে জমা পড়েছে বলে জানালেন সংস্থার ডিরেক্টর প্রকাশ মাগদুম।
প্রশ্ন হল, আর্কাইভে ছবিগুলির পুনর্জন্ম হলে সাধারণ দর্শকের কী সুবিধা? আর্কাইভ বাণিজ্যিক ভাবে ছবিগুলি প্রদর্শনের অধিকারী নয়। ফলে অচিরেই ছবিগুলি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো যাবে বা ইন্টারনেটে বা ডিভিডি আকারে লভ্য হয়ে উঠবে, এমন নয়। প্রকাশ জানাচ্ছেন, প্রযোজকদের অনুমতি নিয়ে চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিগুলি অবাণিজ্যিক ভাবে দেখানোর সুযোগ থাকছে। সে ক্ষেত্রে দর্শক ছবিগুলির নাগাল পাবেন।
ছবিগুলি এত দিন দর্শকরা দেখতে পাননি কেন? লতা মঙ্গেশকরের প্রথম জীবনের কিছু ঘটনা থেকে কাহিনিবীজ নিয়ে তৈরি ‘স্বরলিপি’ বহুদিন অদৃশ্য। ছবির নায়ক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অনেক ছবিই তো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ‘স্বরলিপি’ আমি নিজেও পরে আর দেখার সুযোগ পাইনি।’’
‘বালিকা বধূ’ প্রযোজনা করেছিলেন পরিচালক তরুণবাবুর মা। তরুণবাবু বলছেন, ‘‘ছবির নেগেটিভ অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত, তাই সেটিও দেখানোর উপযুক্ত নেই।’’ একটা পজিটিভ প্রিন্ট আর্কাইভে ছিল। সেটাই ওঁরা পুনরুদ্ধার করে ডিজিটাইজ করেছেন। ছবিটির পুনর্মুক্তির কথা ভাবতে গেলে নেগেটিভটি মেরামত করতে হবে। তরুণবাবু বললেন, ‘‘সেটা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। ‘একটুকু বাসা’রও একই দশা।’’ আগে যে সব ল্যাবরেটরিতে নেগেটিভ মেরামতির কাজ হত, তারও অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে? তরুণবাবুর কথায়, ‘‘বহু মানুষই বালিকা বধূ নিয়ে খোঁজখবর করেন। দেখা যাক, কী করা যায়!’’ ‘ছুটি’ ছবিটিও কিছু দিন আগে ভিসিডি আকারে পাওয়া যেত। এখন আর যায় না। প্রযোজকদের তরফে অরিজিৎ দত্ত জানালেন, ছবিটির টিভি এবং ভিডিয়ো স্বত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ছবিটি তাঁদের কাছেই সযত্নে রয়েছে। তবে এখনও ডিজিটাইজ করা হয়নি। আর্কাইভের প্রিন্টটিই সে দিক থেকে এ ছবির প্রথম ডিজিটাল প্রিন্ট।
ইতিমধ্যে আরও দু’টি অতি দুর্লভ ছবি মেরামতির কাজ চলছে আর্কাইভে। প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘দেবদাস’-এর একটি প্রিন্ট বাংলাদেশ থেকে পাওয়া গিয়েছে। ফ্রান্স থেকে এসেছে ‘বিল্বমঙ্গল’-এর কিছু অংশ। প্রকাশ জানালেন, দেবদাস-এ দৃশ্য এবং শব্দের মেলবন্ধনে কিছু সমস্যা ছিল। সেটা ঠিক করে সাবটাইটল তৈরি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রথম বাংলা কাহিনিচিত্র বিল্বমঙ্গলের (১৯১৯) বাকি অংশগুলো খোঁজার কাজও চলছে। কারণ নির্বাক ছবিতে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরের মধ্যে ইন্টারকার্ড ব্যবহার করা হত। প্রাপ্ত প্রিন্টে সেগুলো নেই। ইন্টারকার্ডগুলো পাওয়া গেলে সেগুলো যথাস্থানে বসিয়ে ছবিটিকে পূর্ণাঙ্গ চেহারা দেওয়া যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy