Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ছাদে ক্রিকেট বন্ধ করলাম, সুশান্ত মাটিতে বসে শুরু করল, ‘প্লিজ প্লিজ’: স্বস্তিকা

“কেন?সুশান্তের শেষ ছবির সঙ্গে এ ভাবে যুক্ত হয়ে থাকলাম আমি!” সেই সবাক, হাসিখুশি, সোজা কথা বলার স্বস্তিকা আজ যেন ক্লান্ত। তিনি যেন ‘দিল বেচারা’ ছবির সেই  ‘মিসেস বাসু’, মেয়ের প্রেমিকের মৃত্যুতে তাঁর ভেতরে কান্না জমে আছে।

শুটের ফাঁকে: সুশান্ত, সঞ্জনা এবং স্বস্তিকা।

শুটের ফাঁকে: সুশান্ত, সঞ্জনা এবং স্বস্তিকা।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০ ২০:৩০
Share: Save:

হটস্টারে একটু রাতের দিকে দেখতে বসেছিলেন, ‘দিল বেচারা’। এই ছবির ডাবিং হয়নি। লকডাউনে আলাদা করে ছবির অভিনেতা আর কলাকুশলীদের নিয়ে স্ক্রিনিংও হয়নি। সব মিলিয়ে ‘দিল বেচারা’ দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলেন ‘মিসেস বাসু’ ওরফে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ল্যাপটপের স্ক্রিনে ভেসে উঠল সাদা-কালোর গিটার হাতের সুশান্ত! ছবির তলায় সুশান্তের লেখা কয়েকটা লাইন...।

“ওই দৃশ্য দেখার পরে মাথাটা ঘুরে গেল আমার। এত খারাপ লাগতে আরম্ভ করল... ছবি নিয়ে আর এগোতে পারিনি। পারা যায় না! বলিউডের এমন একটা ছবি যার মুক্তি হতে পারতো আনন্দ নিয়ে, তা আজ বিষাদে ভরিয়ে দিল,” নরম গলায় বললেন স্বস্তিকা। কী যেন এক অজানা বেদনা তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাঁকে। নিজেকেই প্রশ্ন করে ওঠেন তিনি।

“কেন?সুশান্তের শেষ ছবির সঙ্গে এ ভাবে যুক্ত হয়ে থাকলাম আমি!” সেই সবাক, হাসিখুশি, সোজা কথা বলার স্বস্তিকা আজ যেন ক্লান্ত। তিনি যেন ‘দিল বেচারা’ ছবির সেই ‘মিসেস বাসু’, মেয়ের প্রেমিকের মৃত্যুতে তাঁর ভেতরে কান্না জমে আছে।

“জানেন, এখন সবই মনে হচ্ছে স্ক্রিপ্টে লেখা নয়। কিন্তু আমি তো জানি, আমার সামনেই সুশান্ত সংলাপ বলেছে!আজ আমার একটা মাথা এটা মানলেও বাকি মাথাটা বলছে, এত কাকতালীয় কী করে হতে পারে সব!নিজের ফিউনেরাল নিজে দেখে যাচ্ছে সুশান্ত! মনে হচ্ছে ছবিটা যেন বানানোই হয়েছে এটা ধরে নিয়ে যে ওর মৃত্যু হবে, আমি সহ-অভিনেতা হিসেবে এই বিষয়টা অবজেক্টিভলি মাথায় বসাবো কী করে?”উত্তাল স্বস্তিকার মন।

তিনি একমাত্র অভিনেত্রী যিনি সুশান্তের সঙ্গে দুটো ছবিতে কাজ করেছেন

স্বস্তিকা ফিরে যান জামশেদপুরের শুটের ঝলমলে দিনে।“ভোরবেলা শুট সেরে ফিরেছি।সুশান্ত ছাদে জোরে বক্স বাজিয়ে ক্রিকেট খেলছে।আমি তো হাউজকোট পরে ছাদে উঠতে বাধ্য হলাম। বললাম, ‘প্লিজ এ সব করিস না এখন,’ কিছুক্ষণ সব বন্ধ। আবার চালু!” স্বস্তিকার মনে আছে, তিনি হোটেলের ম্যানেজারকে নালিশ জানিয়েছিলেন সুশান্তের বিরুদ্ধে। তাতে ফল উল্টোই হল। আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন স্বস্তিকা, “আমি আর অপুদা সেটে বসে আছি, ওমা! সুশান্ত মাটিতে বসে শুরু করল, ‘প্লিজ প্লিজ পারমিশন দিজিয়ে’, ভোরবেলা ছাদে ক্রিকেট খেলবে, তার জন্য বায়না।এমন করল বাধ্য হলাম রাজি হতে।”

‘রাবতা’ ছাড়া সুশান্তের সব ছবি দেখেছেন স্বস্তিকা। তিনি একমাত্র অভিনেত্রী যিনি সুশান্তের সঙ্গে দুটো ছবিতে কাজ করেছেন। শুটিং শুরুর আগে থেকেই যখন ফক্স স্টারের অফিসে সুশান্তের সঙ্গে দেখা হয়েছে, তখনই তিনি স্বস্তিকাকে ‘অঙ্গুরীদেবী’ বলে ডেকেছেন। স্বস্তিকা জানান, “ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সীর অঙ্গুরীদেবী বলেই ও আমায় ডাকত। আর প্রচুর ডায়লগ আমাদের দু’জনেরই মনে ছিল, সাধারণত তো অভিনেতাদের এত ডায়লগ মনে থাকে না। দেখা হলে সেগুলো ও আমাকে বলত। সেটা দেখে মুকেশ (ছাবরা) ভীষণ প্যানিক করত। ও রীতিমতো বলত ওই ছবির হ্যাংওভার আমি চাই না। সত্যি, ভীষণ ফানি শিফট, যে চার বছর আগে আমি ছিলাম সুশান্তের লাভ ইন্টারেস্ট, আর এখন ওর লাভ ইন্টারেস্টের মা।”

একজন অভিনেতা হিসেবে সুশান্তকে গভীর থেকে বুঝতে চেয়েছেন স্বস্তিকা।“শুধু বলিউডের স্টার হতে সুশান্ত চায়নি। ওর তো অন্য তারার খোঁজও ছিল। ওর ছবি বাছাইয়ের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে ও অভিনেতা হতে চেয়েছিল। প্রথম ছবি ‘কাই পো চে’,তারপরেই ছবি ধোনির বায়োপিক?এমন একজনের বায়োপিক যাকে দর্শক রোজ টিভি বা খেলার মাঠে দেখছে। ও সফল না হলে মুম্বই ইন্ডাস্ট্রি ওকে ছুড়ে ফেলে দিত”, একটানা কথা বলে থামলেন স্বস্তিকা। একজন অভিনেতা হিসেবে সুশান্তকে ফুরিয়ে ফেলার চাপা দুঃখবোধ তাঁর কণ্ঠে।

নিজের জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত দিয়ে সুশান্তকে যেন আরও বেশি করে ধরতে চাইছেন তিনি।“টলিউডে কাজ করে অভিনেতা হিসেবে আমাদের কত কিছু ব্যালান্স করে চলতে হয়।আজ আমি কোথাও কোনও পুরুষের সঙ্গে সামান্য কফি খেতে গেলে সেটা নিয়ে গল্প হয়ে যায়। আর যে সুশান্ত বলিউডের স্টার, যাকে আমেরিকা থেকে বনগাঁর মানুষ এক ডাকে চেনে তাকে জীবনে কত কী সামলাতে হয়েছে?”

কথা ছিল,‘দিল বেচারা’ ছবিতে স্বস্তিকার অভিনয় নিয়ে কথা হবে। কিন্তু শুরু থেকেই সুশান্তের বাইরে গিয়ে নিজের কথা কিছু বলে ওঠা হয়নি স্বস্তিকার।প্রশ্নটা তাই করতেই হল...

“লেটস প্রিটেন্ড আই অ্যাম নট ডাইং...”

২০ বছরের মেয়ের মা হলেন?

মিষ্টি হাসলেন স্বস্তিকা।“বাস্তবেই তো আমি ২০ বছরের মেয়ের মা। আগেই আমার যা ড্যামেজ হওয়ার হয়ে গিয়েছে। এরকমও দেখেছি যে অভিনেত্রীর ২০ বছরের মেয়ের মা হওয়ার মতো তিনিও বয়সের খাঁচায় ঢুকে যাওয়ার ভয়ে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন না।”

তবে সঞ্জনাকে নিজের মেয়ের মতোই মনে হয়েছে স্বস্তিকার।কিন্তু ‘দিল বেচারা’ নিখুত ভাবে তাঁর দেখা হয়নি।দেখা যায় না...

আবার বলে ওঠেন স্বস্তিকা, “আমরা জানি না আসলে কী হয়েছিল সুশান্তের? কেউ জানি না। না ওর বাড়ির লোক, না অগুনতি ফ্যানেরা, না আমরা। আমাদের এই না জানা নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে। আসলে এই ধরনের ঘটনায় কিছু লেখা না পাওয়া গেলে আসলে কী হয়েছিল সেটা বোঝাই যায় না।”‘দিল বেচারা’, নিজের অভিনয় সব ফেলে স্বস্তিকা আজ সুশান্তময়।জানালেন, এই ছবি যখন শুট করছেন তখন তাঁর বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়কে এসে বলতেন, কত রকমের ক্যান্সার হয়।“থাইরয়েড ক্যান্সার যে হয় এই ছবি না করলে জানতে পারতাম না। ওমা, এত ক্যান্সার নিয়ে কথা, আমার বাবাই হঠাৎ ক্যান্সারে চলে গেল। আর ‘দিল বেচারা’-র কিজি বাসুর মতো আমি আর আমার বোন চোখের সামনে চলে যেতে দেখলাম বাবাকে।”

মৃত্যু, বিষণ্ণতা, ক্যান্সার, বাবা আর সুশান্ত— মানসিক ভাবে ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে স্বস্তিকার মনে।এ ছবি আর কোনও ছবি নয়, তাঁর জীবনের বিভিন্ন প্রান্তকে মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়াচ্ছে। স্বস্তিকার গলার স্বর বুঝিয়ে দিচ্ছে বার বার... সুশান্তের মৃত্যু ঘিরে কী যেন এক অলীক বেদনায় শিউরে উঠছেন তিনি। বলছেন, “ছবির শেষে দেখা যাচ্ছে সুশান্ত নেই! অথচ তাঁর ছবি সবাই দেখছে! এই দৃশ্য তো আজকের! ২০১৮-’১৯-এ শুট কী করে হয়ে গেল?আমি জানি না...আর ভাবতে পারছি না...।”

থেমে গেলেন স্বস্তিকা।পাশ থেকে যেন সুশান্ত বলে উঠলেন, “লেটস প্রিটেন্ড আই অ্যাম নট ডাইং...।”

অন্য বিষয়গুলি:

swastika mukherjee Sushant Singh Rajput dil bechara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy