(বাঁ দিকে) মহুয়া রায়চৌধুরী, রত্না ঘোষাল (ডান দিকে) সংগৃহীত চিত্র।
মৃত্যুর ৩৯ বছর পরেও মহুয়া রায়চৌধুরী রহস্যময়ী। তাঁর অভিনয়প্রতিভা প্রশংসা কুড়িয়েছে দর্শক-সমালোচক মহলে। তেমনই তাঁর জীবনযাপন, আচরণ, মদের প্রতি আসক্তি চর্চায়। একটা সময় মদ্যপানের কারণে শিরোনামে ছিলেন মহুয়া। সুরা তাঁকে রীতিমতো গ্রাস করেছিল। ২২ জুলাই নায়িকার মৃত্যুদিনে এমনই জানালেন তাঁর কাছের বান্ধবী রত্না ঘোষাল। এ দিন প্রয়াত বান্ধবীর স্মৃতিচারণায় ডুব দিয়েছিলেন তিনি। অতীত হাতড়াতে গিয়ে ভাগ করে নিলেন তেমনই কিছু স্মৃতি। তখনই প্রকাশ্যে আসে, তাঁর দু’বছরের ছেলেকে নাকি মদ্যপান করাতেন প্রয়াত অভিনেত্রী।
বান্ধবীর মৃত্যুদিনে শেষে তাঁর নামেই অপপ্রচার— রত্নার বক্তব্য ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় সমাজমাধ্যমে। হঠাৎ মহুয়াকে নিয়ে কেন এমন মন্তব্য করলেন তিনি? জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করেছিল তাঁর সঙ্গে। তখনই রত্না বললেন, “মজা করতে করতে গোলাকে চামচে করে মদ খাওয়াত মহুয়া। আমিও মজা করেই কথাটা বলেছি। এই নিয়ে কেন এত শোরগোল, বুঝতে পারছি না!”
চর্চিত বিষয়টি নিয়ে সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রযোজক রানা সরকার। তিনি লিখেছেন, সত্যিই প্রয়াত অভিনেত্রী এ রকম করতেন তার প্রমাণ কী? প্রযোজক শীঘ্রই মহুয়ার জীবন নিয়ে ছবি বানাতে চলেছেন। তাঁর কথা অনুযায়ী, রত্না ঘোষাল তাঁকে জানিয়েছিলেন, ছবিতে বিতর্কিত অধ্যায় না থাকলে তবেই তিনি ছবির সঙ্গে যুক্ত থাকবেন। রানার কটাক্ষ, “এত কথা বলে শেষে বান্ধবীর মৃত্যুর দিনেই তাঁকে নিয়ে কুকথা বললেন রত্না!” বিষয়টি প্রবীণ অভিনেত্রীকে জানাতেই তাঁর জবাব, “নিজের চোখে দেখা ঘটনা। কেন মিথ্যে বলতে যাব?” তাঁর দাবি, “আমার বাড়িতে বসে, আমার সঙ্গে মদ্যপান করত মৌ। অনেক সময় ওর স্বামী তিলক চক্রবর্তী, ছেলে গোলাও থাকত। ছেলের বয়স তখন দু’বছর। আড্ডা দিতে দিতে মহুয়া অনেক সময় মজা করে ছেলেকে চামচে করে মদ খাইয়েছে।” রত্না তার প্রতিবাদও করেছিলেন। জবাবে প্রয়াত অভিনেত্রী নাকি বলেছিলেন, “মা মদ খায়। বাবা মদ খায়। তা হলে ছেলে খেলে কী ক্ষতি! সেও এখন থেকেই অভ্যেস করুক।” রানার বক্তব্য সম্পর্কে রত্না জানিয়েছেন, তিনি প্রযোজকের কাছে জাননি। মহুয়ার জীবন সম্পর্কে জানতে প্রযোজক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি যদি মনে করেন আর যোগাোগ করবেন না, সেটা তাঁর ব্যাপার।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে এক প্রতিভার অপমৃত্যু। এর জন্য কি মহুয়া নিজেই সম্পূর্ণ দায়ী? প্রশ্নের জবাবে ফের অতীতে রত্না। তাঁর কথায়, “অবশ্যই দায়ী। গোঁয়ার ছিল সে। মৃত্যুর দিন কয়েক আগে বাংলাদেশের ছবিতে নায়িকা হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ব্যস, মেতে উঠল। সেই সময়ে ভিসা পাওয়া এত সহজ ছিল না। কিন্তু ওর মাথায় কিছু এলে সেটা করেই ছাড়বে। সারা ক্ষণ আমাকে বলত, “রত্না কী করে বাংলাদেশে যাব বল তো?” সেই সময় কলকাতায় বাংলাদেশ দূতাবাসের দায়িত্বে যিনি ছিলেন তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের প্রযোজনা সংস্থা মহুয়াকে নিয়ে যাচ্ছে, এই মর্মে চিঠি দিলে ভিসা পাওয়া সম্ভব। এ দিকে ও পার বাংলায় যাওয়ার জন্য মহুয়া মরিয়া। সারা ক্ষণ বিরক্ত হয়ে থাকত। না যেতে পারার হতাশাও গ্রাস করেছিল। ফলে, মদ্যপানের মাত্রাও বেড়েছিল। আর প্রয়াত নায়িকা বরাবর আত্মহত্যাপ্রবণ। ফলে, নিজেকে সংযত রাখতে না পেরে রাগের মাথায় নিজের গায়ে নিজেই সম্ভবত কেরোসিন ঢেলেছিল। তার পর জ্বলিয়ে দিয়েছিল নিজেকে।
মহুয়া মৃত। দাহকাজ শেষ। তার দু’দিন পরে বাংলাদেশ থেকে চিঠি এসেছিল রত্নার কাছে। তাতে লেখা, মহুয়ার ভিসা তৈরি। প্রবীণ অভিনেত্রী আজও আফসোস করেন, “মৌ আর একটু ধৈর্য ধরলে এ ভাবে ফুরিয়ে যেত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy