গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাহুল মুখোপাধ্যায়ের উপর ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা জারির পর টলিপাড়া কার্যত দুই শিবিরে বিভক্ত। সমাজমাধ্যমেও শুরু হয়েছে বিতর্ক। নেটাগরিকদের একাংশ পরিচালককে সমর্থন করেছেন। আবার কারও মতে, দোষ করলে শাস্তি পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু কোনও পরিচালকে কি ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করা সম্ভব? বাংলা ছবির বর্তমান পরিস্থিতিতে কাউকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা কি ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে সঙ্গত? আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে মতামত জানালেন টলিপাড়ার চার পরিচালক।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত পরিচালক অরিন্দম শীল। তবে জানালেন, সব কিছু না জেনে বিষয়ের গভীরে তিনি প্রবেশ করতে নারাজ। অরিন্দম বললেন, ‘‘আমি জানতে চাই, বাংলার বাইরে কোনও পরিচালক কাজ করতে চাইলে তাঁকে কি ফেডারেশনকে জানাতে হবে?’’ অরিন্দম জানালেন, রাজ্যের মধ্যে কোথাও শুটিংয়ে গেলে পরিচালকেরা ফেডারেশনকে জানান। কিন্তু রাজ্যের বাইরে বা বিদেশে গেলে জানিয়ে যেতে হবে কি না, তা নিয়ে কোনও আইন রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
কোনও শিল্পীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিরোধী অরিন্দম। তাঁর মতে, একটি বড় ছবির সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই জড়িয়ে থাকে। সেখানে কাউকে কাজ না করতে দেওয়া অযৌক্তিক। অরিন্দমের কথায়, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। রাহুল যদি সত্যিই দোষ করে থাকে, তা হলে কী কী করলে আমি দোষী হতে পারি, সেটাও আমি বুঝতে চাই। এই শাস্তির বৈধতা সম্পর্কেও আমি জানতে চাই।’’
ফেডারেশনের বিরুদ্ধে এর আগেও শিল্পীদের তরফে বিভিন্ন সময়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের দাবি, সম্প্রতি বাংলাদেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘চরকি’র থেকে বেশি অর্থ চাওয়ার জন্য তাঁরা কলকাতায় আর শুটিং করতে আগ্রহী নন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মেরই একটি কাজের শুটিং ফেডারেশনকে না জানিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে রাহুলের বিরুদ্ধে। ইন্ডাস্ট্রিতে কাউকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা বা কাজ বন্ধ করে দেওয়া যে নেতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেবে, সে কথা মেনে নিচ্ছেন অরিন্দম। তিনি বললেন, ‘‘শুরু থেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ বন্ধ রাখার পক্ষপাতী নন। তাই অবিলম্বে দু’পক্ষের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান করা উচিত।’’
সম্পূর্ণ বিষয়টি অঞ্জন দত্তের কাছে ‘ভয় দেখানো’র সমান। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা তো সব সময় ফেডারেশনের নিয়ম মেনেই কাজ করি। সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু সেটা মিটিয়ে নেওয়া উচিত।’’ অঞ্জনের মতে, সিনেমা তৈরি হলে ফেডারশনও কাজ পাবে। বললেন, ‘‘একজন পরিচালককে নিষিদ্ধ করে তাদের কোনও লাভ হবে না। তাই ফেডারেশনেরই উচিত এগিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করা।’’
এ ক্ষেত্রে বাংলা সিনেমার বর্তমান পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করলেন অঞ্জন। তাঁর যুক্তি, ‘‘বাংলা ছবির দর্শক নাকি এখন কমে গিয়েছে! তা হলে এ ভাবে কাজ বন্ধ করে দিলে ফেডারেশন নতুন দর্শক তৈরি করুক!’’ অঞ্জনের মতে, কোনও চলচ্চিত্র পরিচালককে কেউ ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করতে পারে না। অঞ্জন বললেন, ‘‘আমি শিল্পের পক্ষে, শিল্পীকে নিষিদ্ধ করে কোনও ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি সম্ভব নয়।’’
অনীক দত্ত জানালেন, অতীতে ফেডারেশন তাঁর ছবির শুটিং বন্ধের চেষ্টা করেছে। পরিচালক বললেন, ‘‘আইন তৈরি হয় মানুষের জন্য। ফেডারেশনও তো তাদের অনুষ্ঠানের জন্য দু’দিনের নোটিসে হঠাৎ করে শুটিং বন্ধ করে দেয়। সেটাও তো বেআইনি!’’ ছবির সংখ্যা কমে গেলে যে আখেরে ফেডারেশনেরই ক্ষতি, সে কথাও মনে করিয়ে দিতে চাইলেন ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবির পরিচালক।
একই সঙ্গে অনীকের প্রশ্ন, ‘‘বিদেশের কোনও কাজে আমি সুযোগ পেলে ফেডারেশনকে জানাতে হবে? না কি এখান থেকে কলাকুশলীদের নিয়ে যেতে হবে?’’ রাহুলের প্রতি নিষেধাজ্ঞাকে অনীক ‘লঘু পাপে গুরু দণ্ড’ বলতে চাইছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার বিদেশি পরিচালক বন্ধুদেরও আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, তাঁরা যখন ভারতে শুটিং করতে আসেন, তাঁরা কি নিজের দেশের ফেডারেশনকে জানিয়ে আসেন?’’
এই ধরনের নিষেধাজ্ঞার আড়ালে অন্য কিছু আশঙ্কা করছেন অনীক। তাঁর কথায়, ‘‘ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম এবং বাইরের মানুষের কাছে একটা খারাপ বার্তা পৌঁছচ্ছে। নতুন ভাল ছেলে-মেয়েরা আর কেউ বাংলায় কাজ করতে চাইছে না।’’ অনীক জানালেন, বিদেশের একটি প্রজেক্ট নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। কিন্তু আগামী দিনে এই ধরনের জটিলতায় সেই কাজ বাস্তবায়িত না-ও হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি। অনীকের কথায়, ‘‘শিল্প এবং শিল্পীর উপর কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খবরদারি যেন না হয়!’’
বৃহস্পতিবার রাহুলকে সমর্থন করে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘‘যত দিন স্বাধীনতা থাকে শিল্পীর, তত দিনই সে প্রতিষ্ঠানকে মর্যাদা দেয়! কারও আদেশে বাঁচবে না, স্বাধীন ভাবে সৃষ্টি করবে বলেই সে অনিশ্চয়তায় ভরা পেশা বেছে নেয় যুগে যুগে।’’ বাংলা ছবির বর্তমান পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দিয়েই তিনি আরও লেখেন, ‘‘আপ্রাণ লড়াই করে যখন বাংলায় বড় পর্দাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, তখন ‘ব্যান’ শব্দটা খিস্তির থেকেও অশ্রাব্য। পৃথিবীর কোনও শক্তি বা প্রতিষ্ঠান শিল্পী বা শিল্পের চেয়ে বড় বা ক্ষমতাবান নয়। এটাই সত্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy