Rakhi and Gulzar on relationship 45 years post their separation dgtl
bollywood
বিচ্ছেদের সাড়ে চার দশক পরেও গুলজারের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় রাখির
এক সাক্ষাৎকারে গুলজার জানিয়েছিলেন, তিনি এখনও রাখিকে শাড়ি উপহার দেন, যেমন দিতেন বিয়ের আগে প্রেমপর্বে। রাখির জন্য শাড়ি কিনতে গিয়েই নাকি তিনি চিনেছিলেন বিভিন্ন রকম তাঁতের শাড়ি। তিনি এখনও ভালবাসেন রাখির হাতের মাছের ঝোল।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৯ ১০:২৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক মুহূর্ত পর ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী কালে নিজের জীবনেও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি কোনও দিন। বাঁচতে চেয়েছেন নিজের শর্তে। কিন্তু বিচ্ছেদের সাড়ে চার দশক পরেও স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় রাখি গুলজারের।
০২২০
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট নদিয়ার রানাঘাটে জন্ম রাখির। পূর্ববঙ্গে তাঁর বাবার জুতোর ব্যবসা ছিল। দেশভাগের পরে সব ফেলে চলে আসতে হয় এপার বাংলায়। কিছুটা শ্রীহীন হয়ে পড়ে অবস্থাপন্ন সংসার।
০৩২০
তার মাঝেই বড় হতে থাকেন ডানপিটে রাখি। ছোট থেকেই ভালবাসতেন সিনেমা দেখতে। এমন সময় বাড়ির কাছেই সিনেমার শুটিং শুরু হল। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সে ছবির নাম ছিল ‘আহ্বান’। শুটিং দলের সঙ্গে দিব্যি ভাব জমে গেল কিশোরী রাখির।
০৪২০
বাড়ি থেকে কলকাতা চলে এলেন রাখি, ছবির নায়িকা সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে। তাঁর প্রাথমিক গ্রুমিংয়ের পিছনে সন্ধ্যা রায়ের ভূমিকা ছিল অনেকটাই।
০৫২০
১৯৬৩ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে রাখির বিয়ে হয়ে গেল। রাখি মজুমদারের নতুন পরিচয় হল রাখি বিশ্বাস। কিন্তু মাত্র দু’বছরেই ভেঙে গেল সংসার। পরিচালক, সাংবাদিক অজয় বিশ্বাসকে ছেড়ে একা থাকতে শুরু করলেন রাখি।
০৬২০
ছবিতে প্রথম সুযোগ ১৯৬৭ সালে। বাংলা ছবি ‘বধূবরণ’-এ নজর কাড়লেন নবাগতা রাখি। এরপর সুযোগ আরবসাগরের তির থেকে। প্রথম হিন্দি ছবি ‘জীবন মৃত্যু’-তেই তিনি তখনকার সুপারস্টার ধর্মেন্দ্রর নায়িকা।
০৭২০
নজরকাড়া ব্যক্তিত্ব আর অভিনয়ের গুণে অল্প সময়ের মধ্যেই রাখি চলে এলেন ব্যস্ত নায়িকাদের তালিকায়। ‘শর্মিলী’,‘পারস’, ‘শাহজাদে’, ‘হিরা পান্না’, ‘হামারে তুমহারে’, ‘আঁচল’, ‘বনারসি বাবু’— তালিকায় যোগ হতে থাকে একের পর এক সফল ছবি |
০৮২০
নায়কদের মধ্যে সবথেকে বেশি জুটি বেঁধেছেন শশী কপূরের সঙ্গে। মোট ১০টি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে অভিনয় করেছেন দুজনে। ‘শর্মিলী’ ছাড়াও আছে ‘জানোয়ার অউর ইনসান’, ‘কভি কভি’, ‘দুসরা আদমি’, ‘তৃষ্ণা’, ‘বসেরা’ এবং ‘জমিন আসমান’-এর মতো ছবি। নায়িকা হিসেবে তাঁর শেষ ছবিও শশী কপূরের বিপরীতেই, ১৯৮৫ সালে ‘পিঘলতা আসমান’।
০৯২০
বিগ বি-র সঙ্গে রাখির জুটিও বক্স অফিসে দারুণ সফল। ‘কভি কভি’, ‘বরসাত কি এক রাত’, ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’, ‘কসমে ভাদে’, ‘ত্রিশূল’, ‘কালা পাত্থর’, ‘বেমিশাল’, ‘জুরমানা’-র মতো সফল ছবি উপহার দিয়েছে এই জুটি।
১০২০
ভুলে যাননি বাংলাকেও। বাণিজ্যিক মূল স্রোতের ছবির পাশাপাশি বাংলার দর্শকদের মনের মণিকোঠায় তিনি থাকবেন অপর্ণা সেনের ‘পরমা’ এবং ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘শুভ মহরৎ’ ছবিতে অসামান্য অভিনয়ের জন্য।
১১২০
সিনেমা থেকে দূরে সরে থাকার দীর্ঘ সময় পরে ফিরে এসে তিনি অভিনয় করেছিলেন ঋতুপর্ণ ঘোষের পরিচলনায়। ‘শুভ মহরৎ’ ছবির জন্য তিনি সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হন।
১২২০
আবার এই বলিষ্ঠ অভিনেত্রীকে পেতে চলেছেন দর্শক। আসন্ন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক মুক্তি হবে গৌতম হালদারের পরিচালনায় ‘নির্বাণ’-এর। মতি নন্দীর উপন্যাস ‘বিজলিবালার মুক্তি’ অবলম্বনে এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় আছেন রাখি।
১৩২০
ছবিতে অভিনয় শুরুর সময়ে রাখি কোনও পদবি ব্যবহার করতেন না। কিন্তু সেই রাখি-ই নামের পাশে লিখলেন ‘গুলজার’। ১৯৭৩ সালে পরিচালক তথা কবি গুলজারকে বিয়ে করার পরে।
১৪২০
জন্ম পঞ্জাবি পরিবারে হলেও মননে নিজেকে বাঙালি ভাবতেই ভালবাসেন কবি গুলজার। কিন্তু বাঙালিকন্যার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য স্থায়ী হল না। ১৯৭৪ সালে, তাঁদের মেয়ে মেঘনার যখন মাত্র এক বছর বয়স, আলাদা হয়ে গেলেন রাখি ও গুলজার।
১৫২০
তবে তাঁরা কোনওদিন খাতায়কলমে ডিভোর্স করেননি। মেয়ে যাতে কোনও দিন বাবা-মায়ের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত না হয়, সে দিকেও খেয়াল রেখেছেন দু’জনেই। এক সাক্ষাৎকারে গুলজার জানিয়েছিলেন, তিনি এখনও রাখিকে শাড়ি উপহার দেন, যেমন দিতেন বিয়ের আগে প্রেমপর্বে। রাখির জন্য শাড়ি কিনতে গিয়েই নাকি তিনি চিনেছিলেন বিভিন্ন রকম তাঁতের শাড়ি। তিনি এখনও ভালবাসেন রাখির হাতের মাছের ঝোল।
১৬২০
বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে দু’জনে মুখ খোলেননি। তবে শোন যায়, গুলজারের মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি রাখি। তিনি বিয়ের আগেই জানতেন গুলজারের রক্ষণশীল মানসিকতা নিয়ে। কিন্তু ভেবেছিলেন হয়তো বিয়ের পর পরিবর্তন আসবে।
১৭২০
রাখির সে ভাবনা সত্যি হয়নি। শোনা যায়, বিয়ের পরে রাখির অভিনয় নিয়ে তীব্র আপত্তি ছিল গুলজারের। সেটা মেনে নিতে পারেননি রাখি।
১৮২০
গুলজার ও রাখির একমাত্র মেয়ে মেঘনা-ও একজন সফল পরিচালক। তিনি বড় হয়েছেন বাঙালি এবং পঞ্জাবি পরিবারের মিশ্র ঘরানায়। বাংলা ভাষাতেও স্বচ্ছন্দ ‘হু তু তু’, ‘ফিলহাল’ ও ‘রাজি’-র পরিচালক।
১৯২০
আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে রাখি সরে যান চরিত্রাভিনয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৃদ্ধা মা বা স্বামীহীনার ভূমিকায়। উল্লেখযোগ্য হল ‘রাম লক্ষ্মণ’, ‘আনাড়ি’, ‘বাজিগর’, ‘খলনায়ক’, ‘করণ অর্জুন’, ‘বর্ডার’, ‘সোলজার’-এর মতো ছবি।
২০২০
ইদানীং তাঁকে পার্টি বা অন্যান্য অনুষ্ঠানেও দেখা যায় না। ইন্ডাস্ট্রির আলো থেকে রাখি পছন্দ করেন নিজস্ব ফার্ম হাউজে অসংখ্য আদরের পোষ্যের মাঝে সময় কাটাতে। একমাত্র নাতি, মেঘনার ছেলে সময়-ও রাখির খুব-ই কাছের। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)