রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: সাক্ষাৎকার শুরুর আগেই আপনার ‘আবোল তাবোল’ থিমের শাড়িটা নজর কাড়ল। কয়েক দিন আগেই সৃজিতের এই একই থিমের পাঞ্জাবি পরা ছবি ভাইরাল হয়েছিল।
মিথিলা: (হেসে) এটা কিন্তু দু’বছর আগের। আমি যাঁদের থেকে শাড়ি কিনি, ওঁদের বললে ওঁরা এ রকম মিলিয়ে করে দেয়। আমার আর সৃজিতের এ রকম বেশ কয়েকটা রয়েছে। ভ্যান গঘের ‘স্টারি নাইট’ থিমেরও আমাদের দু’জনের শাড়ি এবং পাঞ্জাবি আছে।
প্রশ্ন: এ পার বাংলায় আপনার প্রথম ছবি মুক্তি পাচ্ছে। আপনি কতটা উত্তেজিত?
মিথিলা: প্রচণ্ড। তার সঙ্গেই একটু নার্ভাস লাগছে। দর্শকের আমার অভিনয় কেমন লাগবে সেটা ভেবেই একটু ভয় লাগছে।
প্রশ্ন: গত বছর ‘আয় খুকু আয়’ ছবিতে আপনাকে দর্শক ক্যামিয়ো চরিত্রে পেয়েছেন। এই ছবিতে তো আপনার ফার্স্ট লুক প্রকাশের পর থেকেই চর্চা শুরু হয়েছে।
মিথিলা: আমি জানি। ছবিতে আমাকে দর্শক একটু অন্য ভাবেই দেখতে পাবেন। মিথিলা নয়, তাঁরা মায়াকে দেখবেন।
প্রশ্ন: ‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে তৈরি ছবি। আলাদা কোনও প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?
মিথিলা: এই চরিত্রটার অনেকগুলো স্তর রয়েছে। অনেকগুলো লুক রয়েছে। সব মিলিয়ে চরিত্রটার জার্নি খুব সহজ নয়। তাই আলাদা মানসিক প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল।
প্রশ্ন: টলিউডে অভিনয় করবেন, এ রকম কোনও পরিকল্পনা কি শুরুতে ছিল?
মিথিলা: না। কারণ বিয়ের আগে আমি ভারতেই আসিনি। এই বাংলায় আসব এমন কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। সেখানে অভিনয় তো আরও দূরের কথা। ২০২০ থেকে যখন থাকতে শুরু করলাম, তখন বুঝলাম, থাকতে গেলে কিছু কাজ তো করতে হবে। সেই ভাবনা থেকেই টুকটাক কাজ করা শুরু করি। অভিনয় নিয়ে খুব বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী নই। আজ টলিউড, তো কাল বলিউড— এ রকম কোনও ইচ্ছা আমার নেই। প্রস্তাব এলে নেহাত ভাল লাগার জায়গা থেকে অভিনয় করি।
প্রশ্ন: ও পার বাংলায় আপনার সাম্প্রতিক ওয়েব সিরিজ় ‘মাই সেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে তো হইচই শুরু হয়েছে।
মিথিলা: আসলে শায়লা খুবই অন্য রকমের একটি চরিত্র। আমার সঙ্গে তার কোনও মিল নেই। সেই জন্যই হয়তো দর্শকের এতটা পছন্দ হয়েছে।
প্রশ্ন: ‘হাওয়া’র পর ‘সুড়ঙ্গ’। বাংলাদেশের ছবি নিয়ে এখন দুই বাংলায় নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে। বিষয়টাকে কী ভাবে দেখেন?
মিথিলা: আমার মতে, এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক স্তরের ছবি এবং ওয়েব সিরিজ় তৈরি হচ্ছে। সারা বিশ্বে আমাদের কাজ প্রশংসিত হচ্ছে। আসলে এফডিসি-র (বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) পুরনো কাঠামোর মধ্যে ভাল কাজ হচ্ছিল না। এখন ছোট পর্দার সেরা পরিচালকরা বড় পর্দায় ছবি করছেন। নতুন নতুন ভাবনার আদানপ্রদান হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে এখন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে জোয়ার এসেছে।
প্রশ্ন: আপনার স্বামী সৃজিত মুখোপাধ্যায়। বাংলাদেশের যে সব শিল্পী টলিউডে কাজ করছেন, তাঁদের তুলনায় আপনার সুবিধা বেশি বলে কখনও মনে হয়েছে?
মিথিলা: কখনওই মনে হয়নি। কারণ কাজের ক্ষেত্রে আমার ওয়ার্ক এথিক্স এবং আত্মসম্মানবোধ খুব বেশি।
প্রশ্ন: সৃজিতের একটা ফোনেই তো বহু কাজের সুযোগ পেতে পারেন...।
মিথিলা: আমি কখনও সৃজিতকে আমাকে ওর ছবিতে নেওয়া কিংবা আমার হয়ে কাউকে সুপারিশ করতে বলবই না। কারণ আমি খুবই স্বাধীনচেতা। জীবনে এই পর্যন্ত এসেছি নিজের পরিশ্রমে এবং নিজের যোগ্যতায়। তাই আমি যোগ্য হলে আমার কাছে কাজের প্রস্তাব আসবে।
প্রশ্ন: আপনার কাছে প্রস্তাব এলে ফোনটা কি সৃজিতের কাছে আসে, না কি আপনার কাছে?
মিথিলা: (হেসে) কারও কাছে আমার নম্বর না থাকলে তিনি সৃজিতের থেকে আমার নম্বরটা চেয়ে নেন। কিন্তু প্রস্তাবটা আমার ফোনেই আসে।
প্রশ্ন: বিগত তিন বছরে টলিউডে বন্ধু তৈরি হয়েছে?
মিথিলা: কিছু বন্ধু তৈরি হয়েছে। পরিবার সূত্রেও কারও কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। শ্রীজাতদা এবং দুর্বাদি রয়েছেন। অনুপম (রায়) তো আমাদের আবাসনেই থাকে। পরমব্রত (চট্টোপাধ্যায়) আমার খুব ভাল বন্ধু। সুদীপ্তাদি (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) রয়েছেন। কর্মসূত্রে আমাকে প্রচুর ঘুরতে হয় বলে দেখা হয় না, কিন্তু ফোনে যোগাযোগটা রয়েছে।
প্রশ্ন: টলিউডে তো শিল্পীদের মধ্যে রেষারেষির আভাস পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অভিনেতাদের মধ্যেও কি রেষারেষি রয়েছে?
মিথিলা: বাংলাদেশের চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা। এই তো আজ সকালেই চঞ্চল ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হল। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের শিল্পীরা একে অপরকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেন।
প্রশ্ন: কিছু দিন আগে সৃজিত তো সমাজমাধ্যমে ওঁর অসুস্থতার ইঙ্গিত দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন।
মিথিলা: অতিরিক্ত কাজ করলে শরীর খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। গত তিন মাস পর পর ছবি আর ওয়েব সিরিজ়ের কাজ করেছে। সামনেই আবার নতুন ছবির শুটিং শুরু হবে। ওর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস ভাল নয়। অতিরিক্ত পরিশ্রমে একটু বুকে ব্যথা হচ্ছিল। ডাক্তারের পরামর্শমতো অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম করানো হয়েছে। ভাগ্য ভাল, রিপোর্টে কিছু ধরা পড়েনি। ডাক্তার যেই বলেছেন বিপদ নেই, সৃজিতও আবার ওর পুরনো রুটিনে ফিরে গিয়েছে।
প্রশ্ন: শুনেছি আপনার মেয়ে পড়াশোনায় খুব ভাল। অভিভাবকেরা সিনেমার সঙ্গে যুক্ত। ওর কিসে উৎসাহ বেশি?
মিথিলা: (হেসে) সিনেমা নিয়ে ওর সে রকম উৎসাহ নেই। ও ওর নিজের জগতেই থাকে। ছবি আঁকতে ভালবাসে। আমি কিন্তু ওকে জোর করে প্রতি দিন পড়তে বসাই না। নিজেই নিয়ম করে পড়াশোনা করে। কারণ ছোট থেকেই ও ‘ওয়ার্কিং মাদার’ পেয়েছে। তাই নিজের ভাল বা খারাপটা বুঝতে পারে।
প্রশ্ন: কর্মসূত্রে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেরই শহরের বাইরে যাতায়াত লেগেই থাকে। মেয়ে এই বিষয়টা নিয়ে অভিযোগ করে না?
মিথিলা: একটা সময় তো ওর কাছে আমি ‘সিঙ্গল মাদার’ ছিলাম। ওকে আমি খুবই স্বাধীন ভাবে মানুষ করেছি। ও ছোট থেকেই আমাকে কাজের মধ্যে দেখেছে। ওর কখন আমাকে প্রয়োজন বা কতটুকু সময়ের জন্য প্রয়োজন সেটা আমি জানি।
প্রশ্ন: সৃজিত শুটিংয়ে বাইরে থাকলে বাড়িতে সাধারণত কী ভাবে সময় কাটান?
মিথিলা: দীর্ঘ দিন একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করছি। সে জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আমাকে ঘুরতে হয়। বাড়িতে থাকলে সারা দিন অফিস থাকে। মেয়ে আছে, বাগান আছে। এই সব নিয়েই সময় কেটে যায়।
প্রশ্ন: তার মানে তো চাকরির জন্য প্রচুর কাজের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন।
মিথিলা: অবশ্যই। আমার এত দেরিতে অভিনয়ে আসা বা এত কম ছবি করার সেটা অন্যতম কারণ। চাকরিটা আমার প্রায়োরিটি। তাই ছবির জন্য ডেট দেওয়া সব সময় সম্ভব হয় না।
প্রশ্ন: ধরা যাক, একই দিনে সৃজিতের ছবির সঙ্গে একটি ঢালিউডের ছবি মুক্তি পেয়েছে। দুটো ছবিই আপনার দেখে ভাল লেগেছে। তার পরেও কোনও একটিকে বেছে নিতে বললে পক্ষপাতিত্ব কাজ করবে?
মিথিলা: ভাল বা খারাপের বোধ আমার আছে। সেখানে কোনটা সৃজিতের ছবি বা বাংলাদেশের ছবি, সেটা আমার কাছে গুরুত্বহীন।
প্রশ্ন: সৃজিতের ছবির কোনও কিছু খারাপ লাগলে ওকে সরাসরি বলেছেন?
মিথিলা: অবশ্যই। কেন বলব না? আমি খুবই স্পষ্টবাদী। যাঁরা আমাকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা সেটা জানেন।
প্রশ্ন: ‘মায়া’ নিয়ে সৃজিতের প্রতিক্রিয়া কী রকম?
মিথিলা: আচ্ছা, সৃজিতের অন্য কিছু নিয়ে কোনও কথা বলার সময় আছে কি! ও নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। সারা দিনই তো শুটিংয়ে। আমাকে কিছুই বলেনি (হাসি)।
প্রশ্ন: সৃজিত এবং আপনার সম্পর্ক নিয়ে গুজবের শেষ নেই। বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রি শুনেছি অনেকটাই রক্ষণশীল। খারাপ লাগে না?
মিথিলা: দেখুন, আমি বা সৃজিত তো এই নিয়ে কখনও কোনও কিছু বলিনি। মানুষের যা ভাবার, তাঁরা ভাবতেই পারেন।
প্রশ্ন: টলিউডের শিল্পীরা গসিপ সামলাতে পারেন। আপনি কি এখন সেই কৌশল রপ্ত করে ফেলেছেন?
মিথিলা: এখন শিখে গিয়েছি। কলকাতায় এগুলো নিয়ে চর্চা বেশি। আর এখানে কোথাও প্রকাশিত হওয়া মানে বাংলাদেশেও ‘কপি-পেস্ট’ হবে। এখন আর এগুলো নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাই না।
প্রশ্ন: সৃজিতের সঙ্গে নিশ্চয়ই এই ধরনের গুজব নিয়ে আপনার ঠাট্টা চলতেই থাকে।
মিথিলা: হ্যাঁ, ওই আর কি! আমাদের এগুলো নিয়ে হাসাহাসি করারও সময় নেই। কারণ আমরা দু’জনেই এখন প্রচণ্ড ব্যস্ত।
প্রশ্ন: এর পর আর কী কী কাজ আসবে?
মিথিলা: ‘মেঘলা’ এবং ‘নীতিশাস্ত্র’ মুক্তি পাবে। ‘অভাগীর স্বর্গ’-র শুটিং শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy