Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

‘ফেলুদা’র তথ্যচিত্রে ঠাঁই প্লাস্টিক-মুক্ত কদমডাঙার

দু’দিন আগেই কর্মকাণ্ডটি চাক্ষুষ করতে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় এক সচিব। বাসিন্দাদের এমন উদ্যোগ নিজের চোখে দেখে দরাজ প্রশংসাও করেছিলেন তাঁরা।

গ্রামে ঢোকার মুখে পাথর দিয়ে ক্যাকটাসের আদলে তৈরি ভ্যাট দেখছেন সব্যসাচী। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত ।

গ্রামে ঢোকার মুখে পাথর দিয়ে ক্যাকটাসের আদলে তৈরি ভ্যাট দেখছেন সব্যসাচী। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৮
Share: Save:

দু’দিন আগেই কর্মকাণ্ডটি চাক্ষুষ করতে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় এক সচিব। বাসিন্দাদের এমন উদ্যোগ নিজের চোখে দেখে দরাজ প্রশংসাও করেছিলেন তাঁরা। এ বার পরিচালক সন্দীপ রায়ের সহকারীকে নিয়ে সেই গ্রামে পৌঁছে গেলেন ফেলুদাও!

শনিবার বিকেলে খয়রাশোলের প্লাস্টিকমুক্ত গ্রাম কদমডাঙায় পৌঁছে দিলেন খুশির খবর। পরিচালক ও চিত্রগ্রাহক চিত্রভানু বসু এবং ‘ফেলুদা’ সব্যসাচী চক্রবর্তী মিলে তৈরি করবেন তথ্যচিত্র। তার মাধ্যমেই বীরভূমের এই ছোট্ট গাঁয়ের এমন উদ্যোগের কথা এ বার তাঁরা পৌঁছে দেবেন দেশ-বিদেশের বহু মানুষের কাছে।

ঘটনা হল, ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযানে’ বীরভূমের মুখ খয়রাশোল। ওই ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত ‘নির্মল’ হওয়ার পরে তার মধ্যে কদমডাঙা গ্রামটিকে বহু যত্নে প্লাস্টিক মুক্ত করা হয়। গ্রামে ঢোকার মুখেই রয়েছে ক্যাকটাসের আদলে গড়া একটি কংক্রিটের চৌবাচ্চা। হাতের প্লাস্টিকের ব্যাগ সেখানে ফেলে ঢুকতে হয় গ্রামে। সেখানে মাটির খুড়ির চায়ে দোকানে জমে ওঠে আড্ডা। শালপাতায় মোড়া মাংস নিয়ে বাজার থেকে ফেরেন গৃহস্থ। কোথাও পলিব্যাগের বালাই নেই। রাস্তায় দৈবাৎ প্লাস্টিকের মোড়ক পড়ে থাকলে স্কুলের খুদে পড়ুয়ারাই সে সব তুলে ভ্যাটে ফেলে দেয়। ৪ জুলাই জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী গ্রামটিকে প্লাস্টিকমুক্ত ঘোষণা করেন।

পেশায় অভিনেতা, নেশায় ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার সব্যসাচীর মতে, প্লাস্টিকের ক্ষতিকর সমস্ত দিক বুঝেও শহুরে শিক্ষিত মানুষজন কাজের বেলায় সেই সচেতনতার বিশেষ ধার ধারেন না। সেখানে কদমডাঙার মানুষজন হাতে কলমে করে দেখিয়ে দিয়েছেন, রোজকার জীবনে প্লাস্টিক মোটেও অপরিহার্য নয়। তথ্যচিত্রটির নির্দেশনা এবং চিত্রগ্রহণ করবেন সন্দীপ রায়ের সহকারি পরিচালক চিত্রভানু বসু। শ্যুটিং ইউনিটের অন্যদের নিয়ে ‘স্পট’ দেখতে তাঁরা গিয়েছিলেন গ্রামে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বিডিও (খয়রাশোল) তারকনাথ চন্দ্র এবং যুগ্ম বিডিও অভিষেক মিশ্র।

বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন সব্যসাচী। বেশ কয়েকটি তথ্যচিত্রও বানিয়েছেন ইতিমধ্যেই। তিনি জানান, যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে কদমডাঙায় প্লাস্টিক থেকে মুক্তির আন্দোলনের সূত্রপাত, সেটির কর্ণধার আবদুর রহমান তাঁর পরিচিত। সেই সূত্রেই প্রথম এই গ্রামের কথা জানতে পারেন। সব্যসাচী বলেন, ‘‘দূষণ নিয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিলই। কদমডাঙার কথা জানতে পেরে তাই সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। এই গ্রামের কথা ছড়িয়ে পড়লে অন্য গ্রামের মানুষজনও উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসবেন।’’ একটু থেমে সব্যসাচী এবং চিত্রভানু আরও জানান, অভিনয়ের জগতে তাঁদের শিক্ষক জোছন দস্তিদারের নামে বক্রেশ্বরে একটি অ্যাকাডেমি গড়ে তুলছেন অনেকে মিলে। জেলার শিশুকিশোররা সেখানে শিল্প ও কলা শিখতে পারবে। সেই শিক্ষার একটি অঙ্গ পরিবেশকে চিনতে শেখা। পরিবেশ নিয়ে ভাবতে শেখা। কদমডাঙা নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরি সেই উদ্যোগের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

ক্যামেরা নিয়ে ফের কবে হাজির হবেন গ্রামে? চিত্রভানু জানান, আপাতত ফেলুদার গল্প নিয়ে একটি ছবির শ্যুটিং চলছে। সেই কাজ শেষ হলে তথ্যচিত্রের শ্যুটিং শুরু হবে পুরোদমে। নেপথ্য কণ্ঠ থাকবে সব্যসাচীর। ছবিতে-কথায় তাঁরা তুলে ধরবেন, অনুশাসন বা শাস্তির ভয় দেখিয়ে নয়, সদিচ্ছার জোরেই পরিবেশকে রক্ষা করা সম্ভব।

অন্য বিষয়গুলি:

documentary Plastic free
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy