(বাঁ দিকে) স্বরূপ বিশ্বাস, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
বাংলা বিনোদন দুনিয়ার সমস্ত বিভাগে কর্মরত সর্ব স্তরের নারী ও শিশুদের সুরক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে ফেডারেশন। সংগঠনের নতুন পদক্ষেপ ‘সুরক্ষা বন্ধু’। এই কমিটির সঙ্গে ফেডারেশনের পাশাপাশি ইমপা যুক্ত। এক অজানা কারণে বাদ ডিরেক্টর্স গিল্ড! পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে পরিচালক-টেকনিশিয়ানদের কাজিয়ার সময় থেকেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, সংগঠনের খামখেয়ালিপনা, একতরফা চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত, একনায়কতন্ত্র-সহ নানা কারণে নাকি ফেডারেশন সভাপতির উপরে বিরক্ত ডিরেক্টর্স গিল্ড। যার জেরে পরিচালকদের এই গিল্ড নাকি ফেডারেশনের আওতাধীন থাকতে চাইছে না। এ বার সেই বিষয়ে তোপ দাগলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি সাফ জানালেন, “আমরা এখনও পর্যন্ত সংগঠন থেকে আলাদা হওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। কিন্তু এ বার মনে হচ্ছে ফেডারেশনই আর ডিরেক্টর্স গিল্ডের সঙ্গে পথ হাঁটতে চাইছে না!”
পরমব্রতের কেন এই অভিযোগ? তাঁর যুক্তি, “ফেডারেশন বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক নারী ও শিশুর সুরক্ষা চেয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে চলেছে। এই প্রচেষ্টা সাধুবাদের যোগ্য।” তাঁর পরেই তাঁর প্রশ্ন, “সেই কমিটিতে পরিচালকদের জায়গা কোথায়? সংগঠনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ইমপার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। অথচ পরিচালক সংগঠনকে একবারের জন্যও বিষয়টি জানাননি। আলোচনায় ডাকেননি কোনও পরিচালককে। মতামত পর্যন্ত নেননি কারও।” উল্টে পরের দিন সংগঠনের সভাপতি সংবাদমাধ্যমকে কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই জানিয়ে দিলেন, নারী নিগ্রহের অধিকাংশ অভিযোগ হয় প্রযোজক, নয় তো পরিচালকের বিরুদ্ধে আসে। ওঁর এই বক্তব্য সংগঠনের ৬০০ জন সদস্য পরিচালককে একযোগে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিল। যার ফলে অপমানিত গিল্ডের প্রত্যেক সদস্য।’’
এই জায়গা থেকে প্রযোজক-পরিচালক-অভিনেতার দাবি, বিনোদন দুনিয়ার বাকি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিত্বরাও এই ধরনের ঘৃণ্য ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। তাঁদের কথাও বলা হোক। তা না করে শুধুমাত্র পরিচালকদের বিরুদ্ধে কোন সাহসে আঙুল তুলছেন ফেডারেশন সভাপতি? এ ক্ষেত্রে তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “মনে হচ্ছে, রাহুলকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া দ্বন্দ্বের যেন শোধ তুলছেন ফেডারেশন সভাপতি।” পরমব্রতের কথায়, “আমরাও নানা বিষয়ে ফেডারেশন তথা ফেডারেশনের সভাপতির নামে একাধিক অভিযোগ শুনেছি। সেই গুঞ্জনের কোনও তথ্যপ্রমাণ নেই। আমরাও তাই এই নিয়ে কখনও সংবাদমাধ্যমে কোনও বক্তব্য রাখিনি। অথচ, স্বরূপ কত অনায়াসে একটা গোষ্ঠীকে দাগিয়ে দিলেন! ”
এই প্রসঙ্গে তাঁর প্রচ্ছন্ন ব্যঙ্গ, শহর তোলপাড় আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার ন্যায়বিচারের জন্য। ফেডারেশন কিন্তু এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও বিবৃতি দিল না! প্রতিবাদ মিছিল দূরঅস্ত্। তাঁর আরও অভিযোগ, বাংলা চলচ্চিত্র পরিবারের একযোগে ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন একাধিক টেকনিশিয়ান। পরে সংগঠন থেকে তাঁদের যোগ না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাঁর আফসোস, “আমরা তো এক। একে অন্যের পরিপূরক। তার পরেও কেন এই ভেদনীতি?”
ইতিমধ্যেই দফায় দফায় বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার ডিরেক্টর্স গিল্ডের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ‘উইমেন্স ফোরাম অফ স্ক্রিন ওয়ার্কার্স প্লাস’নামে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। প্রয়োজনে ফেডারেশনকে সাহায্য করতেও তাদের কোনও আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে ডিএইআই। এ বিষয়ে পরমব্রতের বক্তব্য, “সংগঠনের সদস্য টেকনিশিয়ানদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। ওঁরা আমাদের পরিবারের মতো। কিন্তু তাঁদের মুখপাত্র হিসাবে যাঁরা নিজেদের দাবি করেন, তাঁদের অভিসন্ধি নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। অবশ্যই কর্মক্ষেত্রে অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য ট্রেড ইউনিয়নের প্রয়োজন। তার মানে এটা নয় যে সেই সংগঠন একনায়কতন্ত্র চালাবে। কিংবা তারা নিয়ামক সংস্থা হয়ে দাঁড়াবে। সেটি আইনসিদ্ধ নয়।”
তা হলে আগামী দিনে কি ফেডারেশনের ‘সুরক্ষা বন্ধু’কে অমান্য করে পরিচালকেরা নতুন কোনও কমিটি বানাবেন? পরমব্রতের সাফ জবাব, “এ রকম কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy